যে ৩ আমল আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয়
‘আমি মানুষকে বাবা-মার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি। যদি তারা তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করার জোর প্রচেষ্টা চালায়, যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তাদের আনুগত্য করো না। আমারই দিকে তোমাদের ফিরে আসতে হবে। অতঃপর আমি তোমাদেরকে বলে দেব যা কিছু তোমরা করতে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৮)
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এমন একটি আমলের কথা বলেছেন, যা ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমলের চেয়েও মর্যাদাবান। আর তাহলো বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হাদিসে পাকে অনেক দিকনির্দেশনা এসেছে।
উত্তম আমল সম্পর্কে হাদিসের নির্দেশনা
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কী?
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- নামাজ যথাসময়ে আদায় করা।
আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কী?
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- বাবা-মার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করা।
আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তারপর আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কী?
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’ (বুখারি ও মুসলিম)
এ হাদিসে বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণকে নামাজের পরে এবং জেহাদের আগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত যে বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণ ও তাদের খেদমত করা অনেক সৌভাগ্য ও কল্যাণের কাজ। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ বর্ণনা এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিত হয়ে বলতে লাগলো যে, আমি আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বাইয়াত করছি। আর আল্লাহর কাছে এর প্রতিদান চাই।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার বাবা-মার মধ্যে কেউ কি জীবিত আছে?
সে বলল, ‘জ্বি-হ্যাঁ’, বরং (আল্লাহর শুকরিয়া) তারা উভয়েই জীবিত আছেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তাহলে তুমি কি সত্যি আল্লাহ থেকে তোমার হিজরত ও জিহাদের পুরস্কার চাও?
সে বলল, ‘জ্বি-হ্যাঁ’ (আমি আল্লাহর কাছে হিজরত ও জিহাদের পুরস্কার চাই)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তাহলে যাও, তোমার বাবা-মার খেদমত কর, তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ কর।’ (মুসলিম)
উল্লেখিত হাদিসেও ৩টি আমলের কথা বলা হয়েছে, তাহলো ইসলামের জন্য হিজরত এবং জিহাদ। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দুই আমলের চেয়ে বাবা-মার খেদমত ও তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণকে উত্তম আমল হিসেবে তুলে ধরেছেন। বাবা-মার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন।
সুতরাং কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এ বিষয়টি চূড়ান্ত যে, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল হচ্ছে- বাবা-মার খেদমত করা এবং তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করা। তাই বাবা-মা জীবিত থাকুক কিংবা মারা যাক; সব সময় তাদের জন্য দোয়া এভাবে দোয়া-
১. رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণ : ‘রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৪)
অর্থ : ‘হে আমাদের পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন; যেমনিভাবে তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’
২. رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ : রাব্বানাগফিরলি ওয়ালে ওয়ালেদাইয়্যা ওয়া লিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়া ক্বুমুল হিসাব। (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৪১)
অর্থ : হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বাবা-মার সঙ্গে উত্তম আচরণ ও তাদের খেদমত করার তাওফিক দান করুন। তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও খেদমতেই মিলবে ইসলামের জন্য হিজরত ও জিহাদের সাওয়াব। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে বাবা-মার খেদমতের জন্য কবুল করুন। আমিন।