পিলখানা ট্র্যাজেডিতে দেশের সার্বভৌমত্বকে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে: ১২ দলীয় জোট

0

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে দুর্বল ও দেশের সামরিক বাহিনীকে মেধাশূন্য করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে ২০০৯ সালে পিলখানায় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা।

তারা বলেন, ওই ঘটনার পেছনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র দায়ী। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে শহীদ সেনা দিবস ও জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করা হোক দাবি করেছে এ জোট। এছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৪ মার্চ সারাদেশে বিভাগীয় শহরের থানায় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ১২ দলীয় জোট।

শনিবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ সেনা দিবস‘ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট।

সভায় বক্তারা বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাযজ্ঞ ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশকে পঙ্গু বানানো। এই হত্যাকাণ্ড ছিল দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সেদিনের সেই নারকীয় ঘটনার মাধ্যমে দেশের সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। সেদিন শুধু চৌকষ সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে সেদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। ওই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কুশীলব কারা ছিল জাতি আজও জানতে পারেনি। তাদেরকে কেনইবা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হলো না? জাতি সেটা জানতে চায়।

তারা বলেন, দেশে অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেই সাথে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ আলেম ওলামা এবং অন্যান্য রাজবন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে গণ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। যাতে কোনো ভোট ডাকাতির সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আসতে না পারে।

সভাপতির বক্তব্যে মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, পিলখানার ঘটনা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। আজকে সেই ঘটনা নিয়ে কথা বলা অত্যন্ত কষ্টকর। আজকেও দেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। সরকারের মন্ত্রীদের কেউ বলে খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। কেউ বলে পারবেন না। আসলে তারা প্রলোভন দেখানো শুরু করেছে।

তিনি বলেন, দেশের চলমান সঙ্কট নিরসনে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ১২ দলীয় জোট অংশগ্রহণ করবে। এজন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলন চলছে। সেই লক্ষ্যে আগামী ৪ মার্চ সারাদেশে বিভাগীয় শহরের থানায় থানায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, পিলখানায় যা ঘটেছিল তা নির্মম হত্যাযজ্ঞ। সেই ঘটনা ৭১ সালের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে ২০০০ সালের দিকে কুড়িগ্রাম সীমান্তে বড়ইবাড়িতে বিএসএফ ও তৎকালীন বিডিআরের সাথে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই সময় ১৬ থেকে ১৭ জন বিএসএফ সদস্য নিহত হয়েছিল। যা ছিল বিএসএফের পরিকল্পিত ঘটনা।

তিনি বলেন, ওই সময় প্রতিবেশী রাষ্ট্র অনেক হুমকি দিয়েছে। তারা পিলখানা উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল। তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও বিডিআরের মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু পরবর্তী সরকার আ ল ম ফজলুর রহমানকে চাকুরিচ্যুত করেছে। ওই যে বিএসএফ পরাজিত হয়েছে তার কারণে বিএসএফ ক্ষুব্ধ ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় পিলখানা হত্যকাণ্ড ঘটতে পারে। এটা আমার ব্যক্তিগত মূল্যায়ন।

সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ন্যায্য বিচার করবো। সেদিন কেউ পার পাবে না। সেই ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার ও ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা করবো। আমরা পরিবর্তন চাই। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন চাই। কারণ বর্তমান সরকার দেশকে বিরাজনীতিকরণ করতে চায়। তরুণ সমাজকে নাস্তিক বানানোর জন্য কাজ করছে সুপরিকল্পিতভাবে। আসুন এই সরকারের পতনের জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে শামিল হই।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, পিলখানার নারকীয় হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। সেই সাথে প্রতিবেশী দেশও দায় এড়াতে পারে না। কেন সেখানে মির্জা আজম ও জাহাঙ্গীর কবির নানক সেদিন গিয়েছিল? সেই জবাব প্রধানমন্ত্রীকে দিতে হবে। আজকে কার কাছে আমরা বিচার চাইবো? আমরা তাদের পতন চাই। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। আমরা যেন ভারত শাসিত রাজ্যে বাস করছি? আজকে ৯৫ বার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার চার্জশিট দাখিল পেছানো হয়েছে। এটা কেন?

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নির্মমভাবে শহীদ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সেদিনের ঘটনা ঘটেছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। দেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল করতেই সেদিনের বর্বর ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। অধিকার আদায়ে বিএনপিসহ আমরা রাজপথে আছি। আসুন সবাই মিলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করি।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, পিলখানা ট্র্যাজেডিতে নির্মমভাবে শহীদ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। সেদিনের ঘটনা ঘটেছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে। দেশের সার্বভৌমত্ব দুর্বল করতেই সেদিনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। অধিকার আদায়ে বিএনপিসহ আমরা রাজপথে আছি। আসুন সবাই মিলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ। এটা সিকিম নয় ভূটান নয়, এটা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমার স্বাধীন বাংলাদেশ।

ক্বারী আবু তাহের বলেন, আজকে সরকার তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে দেশের শিক্ষাঙ্গনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মুখোমুখী দাঁড় করিয়েছে। যেভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে তা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিপীড়নকেও হার মানায়। কারণ একটি অবৈধ ও ভোট ডাকাত সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এদের বিরুদ্ধে শিগগিরই কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।

জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও এসএম শামীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতীক, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, বাংলাদেশ এলডিপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল গণি, বাংলাদেশ ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করীম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, ১২ দলীয় জোটের নেতা মুফতি জাকির হোসেন, রফিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন, হান্নান আহমেদ বাবলু, রফিকুল ইসলাম মিন্টু, মিজান পাটোয়ারী, চাষী এনামুল হক, মাওলানা তরিকুল ইসলাম সাদী, এমএ পাশা প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com