তাইওয়ানে চীনের আক্রমণ সফল হবে? যা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা

0

এশিয়ার বৃহৎ সামরিক পরাশক্তি চীন স্বশাসিত প্রতিবেশী দেশ তাইওয়ানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কয়েক বছর ধরে। সাম্প্রতিক সময়ে তাইওয়ানকে ঘিরে নিজেদের সামরিক কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করেছে বেইজিং। ধারণা করা হচ্ছে, যদি তাইওয়ান দখলে চীন কোনো আক্রমণ চালায় সেটি হতে পারে ২০২৭ সালে।

চীন যদি সত্যি সত্যি তাইওয়ানে হামলা চালায় তাহলে দেশটি কী সফল হবে? এ নিয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ।

সংস্থাটি দাবি করেছে, চীনের এ আক্রমণ খুব সম্ভবত ব্যর্থ হবে যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি তাইওয়ানকে সহায়তা করে। তবে এক্ষেত্রে বড় ক্ষয়ক্ষতির শিকার হবে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী।

বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে তৈরি করা গবেষণা প্রতিবেদনে সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এ যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তাইওয়ান এবং জাপান। আর এ চার দেশই ‘বিপুল’ ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়বে।

সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, যুদ্ধের শুরুতেই জাপানে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ঘাঁটিগুলো চীনের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাবে। এমনকি গুয়ামে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতেও হামলা চালাতে পারে চীন। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দুটি রণতরী এবং ১০ থেকে ২০টি যুদ্ধবিমান এবং যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

বেশ কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি দাবি করেছে, চীনও তাদের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। তাইওয়ানের বেশিরভাগ অঞ্চল দখল করার আগেই চীনের সেনারাও ধ্বংস হয়ে যাবে।

এছাড়া তাইওয়ান চীনের মূল ভূখণ্ডে পাল্টা হামলা চালাতে পারে। যা ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব অস্থিতিশীল করে দিতে পারে।

তবে সংস্থাটি জানিয়েছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সহায়তা না করে তাহলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে জোরপূর্বক পুরো তাইওয়ান দখল করে ফেলবে চীন।

যুদ্ধের শুরুটা কেমন হবে?

মার্কিন সংস্থাটি ধারণা করছে, তাইওয়ানে চীনের আক্রমণ শুরু হবে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে। এই হামলায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তারা তাইওয়ানের বেশিরভাগ যুদ্ধজাহাজ ও যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দেবে। এরপর চীনের নৌবাহিনী তাইওয়ানকে ঘিরে ধরবে এবং দেশটিতে পিপলস লিবারেশন আর্মির আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত কয়েক হাজার সেনাকে প্রবেশ করাবে।

তবে তখন চীনের এসব অগ্রসরমান সেনাদের জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ধ্বংস করে দেবে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ এবং জাপানে অবস্থিত ঘাঁটি ধ্বংস করলেও তারা তাইওয়ান দখলে সফল হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণাপত্রে।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী যুদ্ধ কলেজের বিশেষজ্ঞ ম্যাথু কানসিয়ান বলেছেন, তাইওয়ানকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা সফল হবে কিনা এগুলো কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।

প্রথমত, চীনকে ঠেকাতে তাইওয়ানকেই সবচেয়ে বেশি বদ্ধপরিকর হতে হবে।

দ্বিতীয়ত, জাপানে অবস্থিত বিমান ঘাঁটি থেকে হামলা চালাতে যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানের অনুমতি দিতে হবে।

তিনি বলেছেন, এ দুটি বিষয় ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব বেশিদিন রক্ষা করতে পারবে না।

মার্কিন ওই পর্যবেক্ষক সংস্থার গবেষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, এই যুদ্ধে অনেক প্রাণহানি ঘটবে। প্রথম কয়েক সপ্তাহে প্রায় ১০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্র ওই মুহূর্তে চীনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে কিনা এ নিয়ে পরিষ্কার করে এখনই কিছু বলা যায় না।

এছাড়া সংস্থাটি জানিয়েছে, তাইওয়ান তাদের সামরিক বাজেটের বেশিরভাগ অর্থ জাহাজ ও যুদ্ধবিমানের ওপর খরচ করে। যদি চীন আক্রমণ শুরু করে তাহলে একগুলো মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ কারণে টিকে থাকার মতো অস্ত্র তৈরি ও সেনা প্রস্তুত করতে হবে দেশটিকে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com