ইউক্রেনে ঝরছে সাংবাদিকের রক্ত, দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত আট সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসের (আরএসএফ) প্রকাশ করা এক বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।
আরএসএফ বলছে, বর্তমানে গণমাধ্যমের জন্য ইউরোপের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হলো ইউক্রেন।
সংগঠনটি অভিযোগে তুলে বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে বলেছে, ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির সংবাদপত্রের ওপর পরিকল্পিত আক্রমণ করছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। দেশটির বিরুদ্ধে বেসামরিক স্থাপনায় হামলা এবং সাংবাদিকদের আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছে ইউক্রেন। তবে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মস্কো।
টিভি টাওয়ার এবং টিভি ও রেডিও স্টেশনে গোলাবর্ষণ, ধ্বংস অথবা ক্ষতিগ্রস্ত করার অনেকগুলো ঘটনা নথিবদ্ধ করার কথা জানিয়েছেন আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
নিহত বিদেশি সাংবাদিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ড ও রাশিয়ার নাগরিক রয়েছেন। এছাড়া আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাংবাদিক রয়েছেন।
আরএসএফের তথ্য অনুযায়ী যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহের সময় ইউক্রেনে মারা যাওয়া সাংবাদিকদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ ও দুইজন নারী ছিলেন। এরা হলেন- ইভগেনি, ব্রেন্ট, ম্যাকস, পিয়ের, ওলেক্সান্দ্রা, ওকসানা, মানতাস এবং ফ্রেডেরিক।
নিহতদের মধ্যে ইভগেনি সাকুন ইউক্রেনীয় টিভি কিয়েভ লাইভ চ্যানেলে ক্যামেরাম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সংঘর্ষ শুরু এক সপ্তাহ পর রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্রে তিনি নিহত হন। তিনিই প্রথম সাংবাদিক যিনি এ সংঘর্ষে কর্মরত অবস্থায় নিহত হন।
এই যুদ্ধে নিহত প্রথম বিদেশি সাংবাদিক ছিলেন মার্কিন তথ্যচিত্র নির্মাতা ব্রেন্ট রেনড। ১৩ মার্চ কিয়েভের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শহর ইরপিনে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ঘাড়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
প্রবীণ ইউক্রেনীয় ফটো সাংবাদিক ম্যাকস লেভিন। তিনি ১৩ মার্চ রাশিয়ান সামরিক কার্যকলাপ ও কিয়েভের উত্তর অঞ্চলে রাশিয়ান এবং ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে লড়াইয়ের প্রতিবেদন করার সময় নিখোঁজ হন। পরে ১ এপ্রিল তার মরদেহ একটি জঙ্গলে পাওয়া যায়।
ফক্স নিউজের ভিডিও রিপোর্টার পিয়েরে জাকরজেউস্কি ও অলেক্সান্দ্রা কুভশিনোভা একসঙ্গে কাজ করার সময় ১৪ মার্চ আগুনের স্বীকার হোন। পরের দিন তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়।
ওকসানা বাউলিনা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সময় ইউক্রেনে অবস্থানরত কয়েকজন রাশিয়ান সাংবাদিকদের একজন ছিলেন। তার সংবাদ সংস্থা বলেছে যে তিনি ২৩ মার্চ একটি কামিকাজে ড্রোন দ্বারা নিহত হয়েছেন।
লিথুয়ানিয়ান ডকুমেন্টারি ফিল্ম নির্মাতা মান্তাস কেভেদারাভিসিয়াস মারিউপোলে ফিরে আসেন যখন রাশিয়া তার আক্রমণ শুরু করে। ২ এপ্রিল তাকে মাথায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। জানা যায়, মারা যাওয়ার কয়েকদিন আগে রাশিয়ানরা তাকে বন্দি করেছিল।
ফ্রেদেরিক লেক্লারক-ইমহফ ফ্রান্সের নিউজ চ্যানেল বিএফএমটিভি-তে কাজ করতেন। ৩০ মে ট্রাকে হামলায় তিনি মারা যান।
এদিকে গত জুন মাসে সংস্কৃতি ও তথ্য নীতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় অন্তত ৩২ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।