তারেক রহমানের রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই ‘বিএনপি’ এতটা চাঙ্গা ও সুসংগঠিত

0

বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি গত দু’মাস ধরে বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশের কর্মসূচি শেষ করে দৃশ্যত তাদের আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্যায়ে অর্থাৎ সমমনা দলগুলোকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে প্রবেশ করেছে। লন্ডনে থেকেই এসব কিছুর সমন্বয় করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ঢাকার সমাবেশ থেকে যে ১০ দফা দলটি দিয়েছে, সেগুলো সমমনা দলগুলোও নিজেদের মতো করে পালনের ঘোষণা দিয়েছে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেই তাদের দল ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং তারা মনে করেন এটি সম্ভব হয়েছে তারেক রহমানের রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই।

আবার গত দুমাস ধরে বিভাগীয় সমাবেশ ও মিছিলগুলোতে তাদের কর্মীদের যেসব শ্লোগান বেশি দিতে দেখা গেছে, সেগুলো আসলে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়েই।

তারেক রহমান লন্ডনে থাকলেও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার মা খালেদা জিয়ার (ষড়যন্ত্রমূলক) দুর্নীতি মামলায় কারাদণ্ড হওয়ার পর, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি এবং সেখানে থেকেই তিনি দল পরিচালনা করছেন।

তার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলছেন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির প্রতিটি স্তরের নেতা কর্মীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করেছেন মিস্টার রহমান, যা বিএনপিকে এই দুঃসময়েও চাঙ্গা করে তুলেছে।

“কর্মীদের মাঝে তিনি প্রবেশ করতে পেরেছেন। তার শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে তিনি সবসময় নেতাকর্মীদের খোঁজ নিয়েছেন। বিপদ আপদে খোঁজ নিয়েছেন। মামলার খোঁজ নিয়েছেন। কেউ আহত হলে ডাক্তারদের পাঠিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে দলে প্রাণসঞ্চার হয়েছে,যা দলকে চাঙ্গা ও সুসংগঠিত করে তুলেছে।”

নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম বলছেন লন্ডনে স্থানীয় সময় ভোর তিনটা চারটা থেকে (বাংলাদেশে যখন সকাল নয়টা তখন লন্ডনে ভোর চারটা) শুরু করে নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন তারেক রহমান।

“সিনিয়রদের সঙ্গে মিটিং করেন। এরপর জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন নেতাদের খোঁজ নেন। দলের শীর্ষ নেতা যখন কর্মীদের খোঁজ নেন, কথা বলেন তখন কর্মীদের বুক আনন্দে ভরে যায়,” বলছিলেন তিনি।

২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আটক হয়েছিলেন তারেক রহমান। আটক থাকা অবস্থায় প্রচুর নির্যাতনের শিকার হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন।

গত এক বছর ধরে প্রায় ২০টি জেলা কমিটি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলো গঠনের আগে তিনি অনলাইনে দফায় দফায় সভা করেছেন নেতাকর্মীদের সাথে।

স্থায়ী কমিটির সভাগুলোও তার সভাপতিত্বেই হচ্ছে।

কোথাও কোথাও দলের মধ্যকার কোন্দল নিরসনেও সরাসরি ভূমিকা রাখছেন তিনি।

বিশেষ করে গত এক বছরের সরকার-বিরোধী রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রণয়নে তার সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করছে দলীয় ফোরামগুলো।

তারেক রহমানের আরেকজন ঘনিষ্ঠ নেতা মীর হেলাল উদ্দিন বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য। তিনি বলেছেন কীভাবে তারেক রহমান দলকে সংগঠিত করছেন।

“২০১৯ সালের জানুয়ারিতে দলের দায়িত্বে তিনি যখন আসলেই নিলেন, তখন পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছেন। ইউনিয়ন থেকে তিনি এটা শুরু করেছেন, যার প্রতিফলন বা ফল গত ছয় মাসে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে। আগে হয়তো তিনি স্থায়ী কমিটি বা ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতেন । কিন্তু এখন তেমন না। তিনি নিজেই এখন ওয়ার্ড পর্যায়ের একজন নেতাকে ফোন দিয়ে কথা বলছেন।”

দলটির নেতারা বলছেন করোনা মহামারির সময় প্রতিদিন অসংখ্য নেতাকর্মীর সাথে ফোনে কথা বলেছেন তিনি।

পাশাপাশি, দলটির হিসেবে যে সত্তর হাজার নেতাকর্মী আটক আছে, তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ করেছেন এবং অনেককেই বিভিন্ন মাধ্যমে সহায়তা দিয়েছেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com