শেখ হাসিনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে: ড. মোশাররফ

0
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‌শেখ হাসিনাকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। ভোট হতে হবে ব্যালটের মাধ্যমে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। 

 

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

 

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মোশাররফ বলেন, আপনারা প্রমাণ করেছেন নেতার জন্য নয় আপনারা দেশের জন্য রাজনীতি করেন। এই সমাবেশ বানচাল করার জন্য প্রশাসন ত্রাস সৃষ্টি করেছে। আমাদের এক নেতা পুলিশের গুলিতে নিহত আরও শত শত আহত করেছে। আমাদের দলীয় কার্যালয়ের সকল সম্পদ পুলিশ নিয়ে গেছে। পুরো কার্যালয় তছনছ করে গেছে।

 

তিনি বলেন, এই সরকার এখন জনতার ভয়ে ভীতু। এজন্য আমাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সভা সমাবেশ করার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেখানেও বাধা। কারণ আমরা মানুষের ভোটের অধিকারের কথা বলছি। নিরাপত্তার কথা বলছি। আমরা জানি এই বাংলাদেশের মানুষ আর সরকারকে ভয় পায় না। মানুষ এখন শেখ হাসিনার বিদায় চায়।

 

‘খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী মতিঝিল পর্যন্ত লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ছে। এতে মানুষ কি বার্তা দিচ্ছে। মানুষ এখন সরকারকে সরে যেতে বলছে। মানুষ আর হাসিনা সরকারকে দেখতে চাচ্ছে না। মানুষ এখন নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র নেতৃত্ব চাচ্ছে। এই সরকারকে এখন আর বিশ্বাস করে না।’

 

মোশাররফ বলেন, বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক দিক থেকে খাদের কিনারায় পড়ে গেছে। দেশ থেকে ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে গেছে। তারা বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। যার কারণে বেগম জিয়া মুক্তি পায়নি। অন্যায়ভাবে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছে। আজকে সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। যার উদাহরণ পুলিশ আমাদের পার্টি অফিসে যা করেছে। হাসিনার পক্ষে আর দেশ চালানো সম্ভব নয়। আজকে দেশের জনগণ শুধু গরিব হয়, ২০ ভাগ গরিব এখন ৪০ ভাগে গিয়েছে। এই সরকারের এখন বিধায় চায় মানুষ। এই সরকারকে এখনি পদত্যাগ করতে হবে।

 

বিএনপির আগামী দিনের কর্মসূচি তুলে ধরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসসহ সব নেতাকর্মীর গ্রেফতার ও হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব মহানগরীতে গণবিক্ষোভ ও সমাবেশ করা হবে। এছাড়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা দাবি আদায়ে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল শুরু হবে।

খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘এই সমাবেশ এই বার্তা দিচ্ছে— দেশের জনগণ আর  প্রতারিত হতে রাজি নয়। তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চায়, যেখানে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিএনপির ১০ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে—

১. বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।

২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন।

৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা।

৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারা বন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনও মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা।

৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা।

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল।

৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা।

৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সবক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।

১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com