বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসন: কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

0

দেশের বন্যাকবলিত এলাকাগুলো থেকে পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি মাসের মধ্যেই অধিকাংশ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে যাবে। কিন্তু বন্যার কারণে যেসব মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তারা শিগগিরই কাটিয়ে উঠতে পারবে না এর ধকল।

বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত ও বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় অনেক বানভাসি পরিবার আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরতে পারবে না বাড়ি। তাদের বাড়িঘর তৈরিতে দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সরকার ও এনজিওগুলোকে। বন্যায় ভেঙে পড়েছে অনেক এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা। সেসব পুনর্গঠনে নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।

ইতোমধ্যে পানিবন্দি অনেক মানুষ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। সাধারণত বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর রোগব্যাধির প্রকোপ আরও বেড়ে যায়। কাজেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে। শুকনা খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট যাতে না হয়, সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।

বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ কেবল ঘরবাড়ি ও আশ্রয়ই হারায়নি, তাদের কেবল অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতেই হয়নি; তাদের অনেকে, বিশেষত কৃষকরা হারিয়েছেন জীবিকার একমাত্র মাধ্যম। বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি মারা গেছে। দেশব্যাপী প্রাণিসম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।

প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এবারের বন্যায় দেড় লাখ হেক্টরের বেশি ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার পুকুর, দিঘি ও মাছের খামারের ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে ৮২৫ কোটি মাছের পোনা। এসবের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলো বন্যার ধকল কাটিয়ে কীভাবে জীবন নির্বাহ করবে, তা অনিশ্চিত। কাজেই বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রেও বন্যার প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। বহু প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জানা যায়, ১৮ জেলায় প্লাবিত মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮৫ শতাংশই হয়ে পড়েছে ব্যবহার অনুপযোগী। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি স্কুলগুলোও। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু পুরোপুরি এবং কিছু আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে পানি নেমে গেলেও এসব এলাকায় দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে না। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারে মনোযোগ দিতে হবে সরকারকে।

বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশবাসীর নিত্যসঙ্গী। এর সঙ্গে লড়াই করেই বেঁচে আছে তারা। এবারের বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেও সর্বাত্মক চেষ্টা করবে দুর্গত এলাকার মানুষ। শুধু দরকার সরকারের একটু সহায়তা। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারের প্রথম কাজ হলো মানুষের জীবন বাঁচানো। এর পরের কাজ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নির্ণয় করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা তথা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। এবারের বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনেও এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে তাদের দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com