টেস্টে ভালো করার জন্য যে পরামর্শ দিলেন মাশরাফি

0

বছরের শুরুটা হয়েছিল দারুণ এক সুসংবাদ দিয়ে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই স্বাগতিকদের হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল টাইগাররা। সাফল্যের সাতকাহন শুধুমাত্র ওটাই। টেস্টে আর বাংলাদেশের মানুষকে আনন্দে ভাসার সুযোগ করে দিতে পারেনি ক্রিকেটাররা।

সর্বশেষ ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে হারের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে গিয়ে হলো ভরাডুবি। দুটি টেস্টই হেরেছে চারদিনে। সবচেয়ে বড় কথা, ব্যাটাররা দাঁড়াতেই পারেনি প্রতিপক্ষ বোলারদের সামনে। দুই টেস্টের চার ইনিংসের একটিও আড়াই ’শ পার হয়নি। সর্বোচ্চ একটি ২৪৫। ১০৩ রানেও অলআউট হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

মর্যাদা পাওয়ার ২২ বছর পর এসেও টেস্টে বাংলাদেশের এমন অবস্থা কেন, তা নিয়ে অনেক কথা বলেছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের টেস্ট সংস্কৃতি নিয়ে অনেক বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি।

আজ মিরপুরে নিজের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা টেস্টে ভালো করার লক্ষ্যে বেশ কিছু দিক নিদের্শনা দিয়েছেন। মাশরাফির মতে, প্রথমে ঘরের মাঠে টেস্ট জয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যা জয় হচ্ছে, তার চেয়ে আরও বেশি জয়ের চেষ্টা করতে হবে।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন অনেক বড় একটি শক্তি। ওয়ানডেতে এই পর্যায়ে আসার পেছনে ঘরের মাঠে জয়ের অভ্যাসকেই নিয়ামক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন তিনি।

মাশরাফি বলেন, ‘ওয়ানডে ক্রিকেটও কিন্তু আমরা এভাবে পরিবর্তন করেছি। আমাদের প্রথম পরিকল্পনা ছিল আমরা ঘরের মাঠে যতটা সম্ভব ম্যাচ জিতবো, ৮০ শতাংশ ম্যাচ আমরা কিভাবে জিততে পারি। তো ওই যে বললাম টেস্ট ক্রিকেটেও আমাদের শুরু হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম। ওই জায়গা থেকে একটু পিছিয়ে সমস্যা হয়ে গেছে। তবে হোমে ম্যাক্সিমাম ম্যাচ এখন আমাদের জিততে হবে। হোমে খেললে কিন্তু ড্র করার সুযোগ কমে যাবে। কারণ স্পিনিং উইকেট বানালে ড্র হওয়ার সম্ভাবনা কমে। আমাদের ম্যাচ জিততে হবে ওই পরিকল্পনা করে। আমি মনে করি সাকিব আক্রমণাত্মক চিন্তাভাবনা করছে যা ইতিবাচক।’

ব্যাটারদের যারপরনাই ব্যর্থতাই সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিচ্ছে। ব্যাটারদের মানসিকতা পরিবর্তন না হলে তো সফলতা আসবে না। এ নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘ব্যাটিংটা এক-দুইদিনের ব্যাপার না। এক-দুই বছর ধরে কাজ করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে স্কিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাথে মানসিক দক্ষতা। এ দুইটার কম্বিনেশন হওয়াটা জরুরি। শুধু স্কিল নয়, এর সাথে মানসিক দক্ষতার বিশাল যোগসূত্র আছে। বিশ্বে অনেক ব্যাটার আছে টেকনিক্যালি সাউন্ড না হয়েও অনেক অনেক রান করে গেছে। কারণ তারা মানসিকভাবে শক্ত ছিল। আমাদের সাকিবই দেখেন।’

বারবার বলা হচ্ছে নতুনদের দায়িত্ব নিতে হবে। নতুনরা দায়িত্ব নিতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেট এগুবে না। কিন্তু নতুনদের অবস্থা দেখে সবাই হতাশ। তবে মাশরাফি মনে করেন, নতুনদের আরো সময় দিতে হবে। কারণ, তাদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কঠিন। এ জায়গায় নিজেদের মানিতে নিতে সময় লাগবে।

এ নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘নতুনদের জন্য তো এমনিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কঠিন হওয়ার কথা। আমাদের দেশে বরং নতুন যারা এসেছে রান করে ফেলেছে। আমরাও তাদেরকে নিয়ে অনেক লাফালাফি করেছি। দিন শেষে অন্য দল যখন তাকে পরিকল্পনায় এনেছে তখন আর তারা পারফর্ম করেনি।’

‘তো নতুন যখন আসে অন্য দল তাকে নিয়ে এত হিসাব করে না। তার জন্য কাজটা তখন কিছুটা সহজ হয়ে যায়। আবার দলকে যখন প্রতিপক্ষ হিসাবে ধরে তখন পুরো টপ অর্ডার সহ সাতজন ব্যাটারকে নিয়েই চিন্তা করে। নতুন যারা এসে খারাপ করছে তাদের পেছনে ক্রিকেট বোর্ডের অনেক বিনিয়োগ, তাই ছুঁড়ে ফেলে না দিয়ে এদের আরও তৈরি করা প্রয়োজন।’

‘কারণ আবার যদি নতুন কাউকে আনেন তাকে ১০ ম্যাচ ১৫ ম্যাচ দুই বছর সময় দিতে হচ্ছে। সুতরাং বেটার হচ্ছে যে সোর্স আছে আমাদের সেগুলোকে ব্যবহার করা। পাশাপাশি ঘরোয়া ক্রিকেট শক্তিশালী করতে হবে। হয় কি একটা মৌসুম দেখে জাতীয় দলে নিয়ে নেওয়া হয়। এক মৌসুমের পারফরম্যান্স দেখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা কঠিন।’

সাকিবের নেতৃত্বের প্রসঙ্গ আবার উঠলে আমি মনে করি সেরা ক্রিকেটারদের হাতেই অধিনায়কত্ব আছে, তিন ফরম্যাটেই। এখন পরিকল্পনা। আর নতুন খেলোয়াড়দের একটু সময় দেওয়া দলে নেওয়ার আগে। হুট করে নেওয়া আপনাদেরও একটা ভারসাম্য জরুরি। যারা পারফর্ম করছে তাদের সরাসরি জাতীয় দলে না দেখে ‘এ’ টিমসহ অন্য দলে খেলুক, পারফর্ম করুক। কারণ বয়স তো চলে যাচ্ছে না। ১৮-১৯ বছর বয়স একজন খেলোয়াড়ের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উপযুক্তও না। ২২-২৩ হল উপযুক্ত জায়গা। তখন সে ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে আসে।’

টেস্টে ভালো করতে হলে ঘরোয়া ক্রিকেটকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। এ কথা সবাই বলে। মাশরাফিও আরো একবার এ প্রসঙ্গ তুলে আনলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি (প্রশ্ন কর্তাকে) যেটা বললেন কতটুকু এগিয়েছে। আমি মনে করি না পিছিয়েছে। তবে হ্যাঁ এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও তো আরও আছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলের ম্যাচ থাকায় না খেললেও এটাইতো খেলোয়াড় তৈরির জায়গা। আমাদের যারা লোকাল খেলছে তাদের মাঝ থেকেই তো খেলোয়াড় উঠে আসবে। জাতীয় দল জাতীয় দলের জায়গায় থাকবে; কিন্তু এই খেলাগুলো চলমান থাকলে দুই একজন ক্রিকেটার ওখান থেকে পাবেনই। ২-৩ সিজন পরে ৮-১০ জন প্লেয়ার বের করার চিন্তা করলে হবে না। ২-৩ সিজন পরে যদি একজন সলিড প্লেয়ার পান, যে কি না আপনাকে ১৫ বছর সার্ভিস দিবে। আপনার ফোকাস থাকবে এরকম। এগুলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আরও ১০০ বছর আগে থেকে করেছে। ভারত ৩০ বছর আগে করেছে এখন ফল পাচ্ছে। এখন আমরা শুরু করলে আমরাও পাবো। আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে।’

টেস্ট এবং ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট তৈরি করে সে অনুযায়ী দল গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে যে পারফর্ম করছে তাকে লাল বলে না খেলানো বা লাল বলে যে পারফর্ম করছে তাকে সাদা বলে না খেলানো (উচিৎ)। আমরা মাঝখানে এরকম অনেক কিছু দেখেছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে আলোচনা করেছি, বিজয় কিন্তু সাদা বলে দারুণ ফর্মে। ও গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। ও লাল বলেও রান করেছে কিন্তু বেশ কিছু দিন আগে।’
‘তো ও যে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছে ওর জন্য কিন্তু কঠিন। সাথে ডিউক বল, কোকাবুরাও না। আমি আশা করবো যে যেহেতু সাকিব আছে সমস্যা হবে না। ওকে আরেকটা সুযোগ দাও, যেহেতু লাল বলে খেলেছে। শুরুটা ভালো করেছে, ২৩ রান করে আউট হয়েছে। কিন্তু ওকে আরেকটু সুযোগ দেওয়া (লাল বলে)। আর সাদা বলে সে পারফর্ম করছে। আমি আশা করছি সাদা বলে সে ভালো করবে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com