নারীরা কি মাহরাম ছাড়া হজ করতে পারবে?

0

হজ শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতার ইবাদত। এ দুটি শর্ত কারো মধ্যে থাকলে হজ ফরজ কিন্তু নারীর জন্য তা একটু ব্যতিক্রম। শারীরিক ও আর্থিক সমার্য্কবান নারীদের জন্য হজ করতে মাহরাম বা দেখা-সাক্ষাতের বৈধ সঙ্গীর প্রয়োজন। যদিও নারীর হজের জন্য স্বামীর অনুমতি শর্ত নয়। তবে সব কাজে স্বামীর অনুমতি নেওয়া ও পরামর্শভিত্তিক কাজ করা মোস্তাহাব। কেননা আল্লাহ তাআলা উপদেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা পরামর্শভিত্তিক কাজ করো।’ (সুরা ইমরান : আয়াত ১৫৯)

নারীদের হজের জন্য মাহরাম আবশ্যক। নারীদের হজের জন্য মাহরাম পাওয়া গেলে স্বামী অনুমতি না দিলেও হজ সম্পন্ন করা আবশ্যক। হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য তো কেবল ভালো কাজের জন্য। (বুখারি ও মুসলিম)

নারীদের হজ সম্পাদনে মাহরামের আবশ্যকতা সম্পর্কে ইমামগণ মতভেদ করেছেন। তাহলো-
১. ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাজহাব মতে, নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্ত। মাহরাম না থাকলে অঢেল সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও তাদের ওপর হজ ফরজ হবে না। (বাদায়িউস সানা)

২. ইলমে ফিকাহর বিখ্যাত গ্রন্থ হেদায়াতে এসেছে, ‘কোনো নারী যদি মাহরাম ছাড়া হজ করে তবে হজ আদায় হয়ে যাবে কিন্তু মাহরাম ছাড়া (হজের) সফর করার কারণে ঐ নারী গুনাহগার হবে। এ প্রসঙ্গে তাদের দলিল হলো বিশ্বনবির এ হাদিস-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মাহরাম ছাড়া কোনো নারী কোনো পুরুষের সঙ্গে নির্জনে সাক্ষাৎ করবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না। এক সাহাবি বলল, হে আল্লাহর রসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার স্ত্রী হজ করতে যাচ্ছে আর আমি অমুক যুদ্ধে যাওয়ার জন্য নাম লিখিয়েছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)

৩. ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মাজহাব মতে, ‘নারীদের ওপর হজ ফরজ হওয়ার জন্য মাহরাম শর্ত নয়। বরং শর্ত হলো তার (হজে গমনকারী নারীর) নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়া। সফরের পথ যদি নিরাপদ হয় তবে মাহরাম ছাড়াও একজন নারী একদল মাহরামওয়ালী নারীর সঙ্গে হজে যেতে পারবেন। তাদের মতের পক্ষে হাদিসে এসেছে-
হজরত আদি ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হে আদি! যদি তোমার জীবনকাল দীর্ঘ হয়, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে, ইরাকের হীরা অঞ্চল থেকে একজন নারী একাকি উটের হাওদায় বসে কাবা তওয়াফ করবে এবং সে আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

প্রকৃতপক্ষে নারীর করণীয়
হজের সফরে নারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সার্বিক বিবেচনায় মাহরাম একান্ত প্রয়োজন। বর্তমান সময়ে নানা জটিলতা ও সমস্যায় মাহরাম ছাড়া নারীদের হজে গমন মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ।

তাই সব নারীর উচিত, মাহরামসহ হজের সফর করা। হজের জন্য মাহরাম না থাকলে হজের সফর থেকে বিরত থাকা। নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবেই হজের সফরে যাওয়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেক নারীকে হজ আদায়ের জন্য মাহরামসহ হজের প্রস্তুতি গ্রহণ করে যথাযথভাবে হজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com