সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ: শিক্ষামন্ত্রীর ভাইসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে ডিসির মামলা

0

চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৪৮ একর সরকারি সম্পত্তি প্রতারণার মাধ্যমে রেজিস্ট্রি দলিল সৃষ্টি করে মালিকানা হস্তান্তর করার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর বড় ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপুসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

চাঁদপুরের সহকারী জজ মো. মহিউদ্দিনের আদালতে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশের পক্ষে মামলাটি করেন সরকারি কৌঁসুলি মো. আব্দুর রহমান। তিনি জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন। ৩১ মে মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।

মামলায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির বড় ভাই চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ ওরফে টিপুকে মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

গ্রহীতা হিসাবে জমি দখলে নেওয়ার কারণে মামলায় প্রথম পক্ষের বাকি বিবাদীরা হলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমেদ, হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, মুনছুর আহম্মদ ও শিক্ষামন্ত্রীর চাঁদপুর প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।

সাফ কবালা ও দানপত্রমূলে জমিদাতা হিসাবে দ্বিতীয় পক্ষের বিবাদী করা হয়েছে হাইমচরের মৃধারকান্দি এলাকার আ. ফারুক সরদার, আবুল সরদার, ঢাকা মিরপুরের নুর মোহাম্মদ, মাসুম হোসেন, শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের পিয়ারা বেগম, আকলিমা বেগম, তছলিমা বেগম, সুমন মিয়া হৃদয়, ফাহিমা আক্তার, শরীফ মিয়া, হাইমচরের নূর মোহাম্মদ, লক্ষ্মীপুরের জয়নাল আবেদীন মোল্লা, মিরপুরের মাজেদা বেগম, নাছির মৃধা, মো. রাসেল, হাসিনা আক্তার, শাহীনা বেগম, মোহাম্মদপুরের মো. সালাউদ্দিন ও ফিরোজ ইকবাল। তৃতীয় পক্ষের বিবাদী করা হয়েছে হাইমচর উপজেলার সাবেক সাবরেজিস্ট্রারকে। স্থানীয় প্রশাসন জানায়, ইতোমধ্যে তৎকালীন সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ১৯৫০ সালে নদীতে জেগে ওঠা জমি পরবর্তী সময়ে সরকারি স্বত্ব স্বার্থ বজায় রেখে কৃষকদের মধ্যে অস্থায়ী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়।

কিন্তু চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ হাইমচর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে হাইমচরের ৪ নম্বর নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে ৪৮ দশমিক ৫২ একর (৪ হাজার ৮৫২ শতাংশ) জমি হাইমচর সাবরেজিস্ট্রারের সহযোগিতায় ভুয়া দলিল মূলে মালিকানা নেন।

পরে সেখানে মাছের ঘের, গবাদিপশুর খামার ও সবজিবাগান গড়ে তোলেন। বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে খাসজমি উদ্ধারে আদালতে মামলা করল জেলা প্রশাসন।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক গত বছরের ৩১ আগস্ট এ মৌজার জরিপ কাজ সম্পন্ন করার জন্য ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরে চিঠি দেন। নালিশি ভূমিতে দ্বিতীয় পক্ষের বিবাদীদের কোনো প্রকার স্বত্ব স্বার্থ ছিল না, এখনো নেই। রিসেটেলমেন্ট মোকদ্দমামূলে সরকারি রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে তাদেরকে শুধু ভোগ-দখল করার জন্য দেওয়া হয়েছে।

এ অবস্থায় দ্বিতীয় পক্ষের বিবাদীরা এই ভূমির প্রতি অন্যায় ও বেআইনিভাবে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য প্রথম পক্ষের বিবাদীদের বিভ্রান্ত করে হস্তান্তর করে বলে বাদীপক্ষ সম্প্রতি জানতে পারে। হস্তান্তরের এমন কোনো অধিকার তাদের নেই।

নালিশে আরও উল্লেখ করা হয়, এ ৪৮ একর সম্পত্তিগ্রহীতা বিবাদীরা এবং অপর বিবাদীরা দাতা হিসাবে হাইমচর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিলগুলো সৃজন করায় সরকারপক্ষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাই এ দলিলগুলো যোগসাজশে, তঞ্চকতামূলক হওয়ায় তা অকার্যকর ও বাতিল করার আবেদন জানানো হয়। সেই সঙ্গে মোকদ্দমার খরচ ও ক্ষতিপূরণও চাওয়া হয়েছে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা মামলা করেছি সরকারি সম্পত্তি সরকারের কাছে নিয়ে আসার জন্য। এ মামলায় ৫ জন জমিগ্রহীতা, ১৯ জন জমিদাতা এবং একজন সাবরেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ৪৮ একর জমির দলিল পেয়েছি, শুধু এ জমি উদ্ধারেই মামলা হয়েছে। তারা আরও জমি নিয়েছে কি না বা আরও বেশি দখল করেছে কি না, তা এখানে আসেনি।

সাবরেজিস্ট্রারকে বিবাদী করা সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি জানেন এখানে জরিপ হয়নি। এগুলো সরকারি জমি। তারপরও তিনি কীভাবে রেজিস্ট্রি করলেন। যদি আমরা রায় পাই, তখন তো এ দলিলগুলো বাতিলের জন্য তাকে আদেশ দেবে।

সাবেক সাবরেজিস্ট্রার অসীম কল্লোল সম্পর্কে তিনি বলেন, আগে যে সাবরেজিস্ট্রার ছিলেন, তিনি আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন হওয়ায় আমরা ইতোমধ্যে তার অপকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com