করাচিতে আত্মঘাতী হামলা নারীর, দায় স্বীকার বিএলএর
করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে বালুচ ও টেলিগ্রামে ইংরেজি ভাষায় দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেন গোষ্ঠীর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ।
জিয়ান্দ বালুচ জানান, করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়েছে। হামলাকারীর নাম শারি বালুচ ওরফে ব্রামশ এবং তিনি একজন নারী। বিএলএ’র গত ২২ বছরের ইতিহাসের প্রথম নারী আত্মঘাতী হামলাকারী শারি বালুচ।
বিবৃতিতে জিয়ান্দ বালুচ বলেন, ‘করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে আত্মঘাতী হামলা হয়েছে এবং বিএলএ এই হামলার দায় স্বীকার করছে। আমাদের বোন শারি বালুচ ওরফে ব্রামশের এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করল।’
মঙ্গলবার দুপুরে পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর ও দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ সিন্ধুর রাজধানী করাচির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় করাচি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে একটি মাইক্রোবাসে বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, গাড়িটির ডানপাশে বিস্ফোরণ হয়েছে।
ফুটেজ আরও দেখা গেছে, করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমার্স ফ্যাকাল্টি নিকটবর্তী কনফুসিয়াস সেন্টারের দিকে যখন মাইক্রোবাসটি আসছিল, সে সময় ওই ভবনের গেটের কাছে অবস্থান নেন এক নারী। মাইক্রোবাসটি তার মধ্যকার দূরত্ব যখন প্রায় এক মিটার, সে সময়ই নিজ দেহে বহন করা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান তিনি।
গাড়িটিতে সে সময় চার জন চীনের নাগরিক ও ২ জন পাকিস্তানি ছিলেন। হামলার পর ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিন চীনা নাগরিক হুয়াং গুইপিং, ডিং মুপেং, চেন সা ও সেই মাইক্রোবাসের ড্রাইভার খালিদ। বাকি ২ জনকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়।
হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় অপর চীনা নাগরিক ওয়াং ইউকিং মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে করাচি পুলিশ।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শেরিফ এ ঘটনার পর তাৎক্ষনিকভাবে নিন্দা জানিয়েছেন। এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি এই নৃশংস, ঘৃণ্য ও কাপুরুষোচিত হামলার কঠোর নিন্দা জানাচ্ছি। যারাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক, অবশ্যই তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে।’
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার পরের বছর, ১৯৪৮ সাল থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হয় পাকিস্তানের বৃহত্তম প্রদেশ বেলুচিস্তানে। তবে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব ও আন্দোলনরত গোষ্ঠীগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও বিভক্তির কারণে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্যের দেখা পায়নি এই আন্দোলন।
বালুচ লিবারেশন আর্মি বা বিএলএ তুলনামূলকভাবে বেশ নবীন গোষ্ঠী। ২০০০ সালে সীমান্তবর্তী আফগানিস্তানে গঠিত হয় বিএলএ এবং ইতোমধ্যে এই গোষ্ঠী পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর স্বীকৃতি পেয়েছে।
চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বেলুচিস্তানের দু’টি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ৯ পাকিস্তানী সেনাকে হত্যা করেছিল বিএলএ।