কীভাবে কাটাবেন নাজাতের দশক?

0

মহিমাময় মাস রমজান প্রায় শেষের দিকে। হাতেগোনা আর মাত্র ক’টা দিন বাকি। এ অবশিষ্ট দিনগুলিতে কীভাবে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে তুলতে পারি, সেটাই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য। রাসুল (সা.) রমজানের শেষ দশকের রাতগুলিতে মহান আল্লাহর ইবাদতে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করতেন। আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘রমজানের শেষ দশকে রাসুল (সা.) ইবাদতের জন্য শক্ত করে কোমর বেঁধে নিতেন। সারা রাত ইবাদতের জন্য জাগ্রত থাকতেন। স্বীয় পরিবার-পরিজনকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন।’ (বোখারি : ২০২৪)। তাই নিশ্চিতভাবে লাইলাতুল কদরের সৌভাগ্য লাভের জন্য শেষ দশকের তাৎপর্যময় এ দিনগুলিতে কী আমল করতে পারি, তা জানাচ্ছেন রাশেদ মুহাম্মদ জিয়া

কোরআন তেলাওয়াত
কোরআন তেলাওয়াতের ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি করা। পারিবারিক বা অন্য কোনো ব্যস্ততার কারণে যাদের তেলাওয়াতের সময় মিলছে না, তারা নফল নামাজ কমিয়ে তেলাওয়াতে বেশি সময় দিতে পারি। রাতে কম ঘুমিয়ে সেহরিরি আগ পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত করতে পারি। সালাফদের অনেকেই রমজান এলে নফল সালাতের চেয়ে তেলাওয়াতেই বেশি সময় কাটাতেন। এমনকি অন্যান্য সব রকম দ্বীনি ব্যস্ততাও তারা ত্যাগ করে শুধু তেলাওয়াতে সময় দিতেন। এ শেষ দশদিনে ইমাম মালেক (রহ.) ইলমুল হাদিসের দরস থেকে অবসর গ্রহণ করে কোরআন তেলাওয়াতে বেশি সময় দিতেন। (লাতায়িফুল মাআরিফ : ২০১)।

বিখ্যাত ফকিহ ইবনু শিহাব জুহরি সম্পর্কে বর্ণিত আছে; রমজান এলে তিনি বলতেন, ‘এটা তো কোরআনের মাস এবং লোকজনকে আহার করানোর মাস।’ তিনি রাতদিন নিজেকে তেলাওয়াতে ব্যস্ত রাখতেন। (প্রাগুক্ত : ১৮৩)। সুফিয়ান সাওরি (রহ.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, ‘রমজান এলে তিনি অন্যান্য সব নফল ইবাদত বাদ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াতে মশগুল হতেন।’ (প্রাগুক্ত : ৩৫৯)। উল্লেখ্য, নফল আমলের মধ্যে কোরআন তেলাওয়াত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাই যত বেশি সম্ভব, কোরআন তেলাওয়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখাটাই মহিমান্বিত এ মাসের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়া চাই।

সালাতুত তাহাজ্জুদ
তাহাজ্জুদের সালাতে দীর্ঘ সময় ধরে নিজেকে মগ্ন রাখা। শেষ রাতে একটু দীর্ঘ সময় ধরে তাহাজ্জুদ পড়তে পারলে রমজানের শেষ দশকের দিনগুলিতে সওয়াবের ফসল ঘরে তুলতে বেগ পেতে হবে না। প্রিয় নবীজি (সা.) শেষ দশদিনের রাতগুলোকে বেশি বেশি তাহাজ্জুদ সালাতের দ্বারা সজ্জিত করতেন। ইবনু রজব হাম্বলি (রহ.) বলেন, ‘নবীজি (সা.)-এর শেষ দশকের তাহাজ্জুদ সালাতে ভিন্ন মাত্রা ও আবহ তৈরি হতো। তাহাজ্জুদে কোরআন তেলাওয়াতের সময় আজাব-সংশ্লিষ্ট আয়াত এলে তিনি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন। জান্নাতের বর্ণনা-সংক্রান্ত আয়াত এলে আল্লাহর কাছে তা তামান্না করতেন। বিস্ময়কর কোনো ঘটনা-সংক্রান্ত আয়াত এলে তাসবিহ পড়তেন। যেন নবীজি (সা.)-এর তাহাজ্জুদ, তেলাওয়াত, দোয়া এবং তাদাব্বুরে কোরআন একসঙ্গেই হতো।’ (লাতায়িফুল মাআরিফ)।

অধিক পরিমাণে দোয়া করা
বেশি বেশি দোয়া করা। সারা বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ এ দিনগুলিতে সব প্রয়োজনের কথা মন খুলে মহান আল্লাহকে বলুন। আপনার সব দুশ্চিন্তার কথা আল্লাহকে বলুন। আপনার যাবতীয় গোনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার করুন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া পৃথকভাবে ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। শায়খ সালিহ আল মুনাজ্জিদ বলেন, রমজানের শেষ দশকের এ দিনগুলিতে সবসময় নিজেকে দোয়াতে ব্যস্ত রাখাটাই হবে আমাদের জন্য বুদ্ধিমত্তার কাজ। বিশেষ করে, নিম্নোক্ত দুটি দোয়া যত বেশি সম্ভব পড়লে জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

১. আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউওন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি। অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি দয়াময়, ক্ষমাশীল। ক্ষমা করা আপনার পছন্দনীয় বিষয়, আমাকে ক্ষমার চাদরে আবৃত করে নিন। (তিরমিজি : ৩৫১৩)।

২. লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। (বোখারি : ৬৩৮৪)।

মানুষকে সহায়তা করা
সদকার আমল করা। এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা নবীজি (সা.) রমজান এলে অতিমাত্রায় করতেন। ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘নবীজি (সা.) সবচেয়ে সাহসী এবং সর্বোত্তম দানশীল ছিলেন। রমজান এলে তার এ দানের মাত্রা আরও বেড়ে যেত।’ (বোখারি : ১০৩৩)।

পরনিন্দা-চোগলখোরী থেকে নিবৃত্ত থাকা
রমজানের শেষ দশ দিনে বেশি বেশি ইবাদত করলে যেমন অধিক সওয়াব লাভ হয়, তেমনি যথাসম্ভব মানুষের গীবত বা পরনিন্দা করা থেকে নিজেকে বিরত রাখাটাও অধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, পরনিন্দা করার অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে শেষ দশকের এ তাৎপর্যময় দিনগুলিতে অন্যান্য যাবতীয় ইবাদাতের কোনো মূল্য নেই আল্লাহর কাছে। এই কাজ এত বেশি জঘন্য যে, কোরআনে কারিমে গীবতের অভ্যাসকে আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধারণা হতে দূরে থাক। কারণ, কোনো কোনো অনুমান পাপ। তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান কোরো না এবং একে অন্যের গীবত কোরো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে (?)। বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণা করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত : ১২)।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com