আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং বিভাগের সচিব নরেন দাস ভারতের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নতি পাচার করেছে

0

সূত্রটি জানায়, পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টা ১৮ মিনিটে হোটেল সোনারগাঁওয়ের লবিতে আসেন নরেন দাস। তিনি ৮ মিনিট ফোনে কথা বলেন। এর মাঝে দুই পুলিশ সদস্য (একজনের নাম তোফাজ্জল) একটি কালো রঙের ব্রিফকেস নরেন দাসের হাতে তুলে দেন। এর কিছুক্ষণ পরই কাজী আরিফুজ্জামান হাজির হন। ৭টা ৩৫ মিনিটে উপস্থিত হন কাজী আরিফুজ্জামান। সঙ্গে ফুলের তোড়া। ৭টা ৪০ এর দিকে তারা ডিনারের টেবিলে বসেন। আলাপচারিতার একপর্যায়ে নরেন দাস ব্রিফকেসটি ডেপুটি হাই-কমিশনার বিশ্বদীপ দে’র কাছে হস্তান্তর করেন। এ ব্রিফকেসেই সরকারের অনেকগুরুত্বপূর্ণ নথি রয়েছে বলে জানা গেছে।

গভীর ষড়যন্ত্রের আভাস : সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নেয়া আইনমন্ত্রণালয়ের এই সংখ্যালঘু কর্মকর্তার মাধ্যমে ভারত বিশেষ কোনো বার্তা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নীতি-নির্ধারণী অনেক স্পর্শকাতর তথ্যও ওই দুই কর্মকর্তা ভারতীয় কূটনীতিকের হাতে তুলে দিয়েছেন। যা স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। তাই মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ের গোপন বৈঠককে কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, গুরুতর অপরাধ, গুপ্তচর বৃত্তি, রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়েরই একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা।

যেভাবে আয়োজন গোপন বৈঠকের : সূত্রটি আরো জানায়, গতবছর ৩ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নরেন দাস একই বিভাগের সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। এ পদে যোগদানের পর তিনি ভারতীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত গোপন যোগাযোগ স্থাপন করেন। এ প্রক্রিয়ায় তিনি ভারতীয় হাই-কমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে বৈঠকে বসতে চান। তারপক্ষে হাই-কমিশনারের এপয়েন্টমেন্ট চেয়ে অনুরোধপত্র পাঠান একই বিভাগের যুগ্ম-সচিব কাজী আরিফুজ্জামান। ওই অনুরোধপত্রে দেশের স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে জরুরিভিত্তিতে বৈঠক করার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ সরকারের ‘ভারত-নীতি’র বিপক্ষে ছিলো তাদের এ বৈঠক। রীভা গাঙ্গুলির সঙ্গে সাক্ষাত চেয়ে করা অনুরোধপত্রের পরতে পরতে রয়েছে দেশের স্পর্শকাতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ভারতকে অবহিতকরণের ইঙ্গিত।

সূত্রমতে, কাজী আরিফুজ্জামান এবং ভারতীয় কূটনীতিকের মধ্যকার যোগাযোগ চলতে থাকে কঠোর গোপনীয়তার সঙ্গে। এ কারণের সরকারের কোনো দপ্তর কিংবা অন্যকোনো কর্মকর্তাকে এ চিঠির অনুলিপি দেয়া হতো না। বেসরকারি এই চিঠিতে অপরপ্রান্ত থেকে সাড়া দেয় ভারত। ভারতীয় হাই-কমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি নবনীতা চক্রবর্তী পাল্টা চিঠিতে বিষয়টি নিয়ে মিস্টার লাবন্য কুমারের (ফার্স্ট সেক্রেটারী, পলিটিক্যাল-৩) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে অবশ্য লাবন্য কুমার নিজেই কাজী আরিফুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষে ডেপুটি হাই-কমিশনার বিশ্বদীপ দে ড্রাফটিং বিভাগের সচিব এবং একই বিভাগের যুগ্ম-সচিব কাজী আরিফুজ্জামানকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানান।

কে এই নরেন দাস? : নরেন দাসের বিরুদ্ধে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ পুরনো। নাইকো দুর্নীতি মামলায় (নং-২০) বিএনপি’র চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরো ৫ জনকে আসামি করা হয়। নরেন দাস ছিলেন তাদের একজন। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তৎকালীন সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। এজাহারে নরেন দাসের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। বলা হয়, কানাডিয়ান নাইকো কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেদ শরীফ আইন মন্ত্রণালয়ের নরেন দাসকে একটি ল্যাপটপ কিনে দিতে বলেন। তাকে একটি নম্বর দিয়ে নরেন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। ওই নম্বরে মাসুদুর রহমান যোগাযোগ করলে, নরেন দাস তাকে সচিবালয়ের গেটের সামনে এসে ল্যাপটপসহ ফোন করতে বলেন। ওখানে তাকে ১৫/২০ মিনিট অপেক্ষা করিয়ে বের হন এবং তার কাছে ল্যাপটপ হস্তান্তর করেন। NEC-VERSA P/N:NN210013A2,CELERON Processor, Windows XP, Home Editionমডেলের ল্যাপটপটি এখনো জব্দ রয়েছে। তবে আলোচিত এ মামলার তদন্তকালে গ্রেফতার হয়ে ৩ মাস কারাভোগ করেন নরেন দাস। একটি গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপে তিনি কারামুক্ত হন। একই প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পান মামলা থেকেও।

একই দফতরের অতিরিক্ত সচিব থাকাকালে নরেন দাসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তা সত্তে¡ও সেই গোয়েন্দা সংস্থার পছন্দে তাকে ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব করা হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হকের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হয়। গত ৩ নভেম্বর তার স্থলাভিষিক্ত হন নরেন দাস।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com