‘কোরান যদি শিবির হয়, খোদায় কোরান নামাইছে ক্যান?’

0

‘আমার ছেলেরে পুলিশ রাতের বেলা ঘুম থেকে তুইলা নিয়ে গেছে। দুই মাস আগে মেসে উঠায় দিয়া আইছি। হের টেবিলের উপর একটা কোরান শরিফ পাইছে। কোরান পড়লে কি শিবির হয়? কোরান যদি শিবির হয়, খোদায় কোরান নামাইছে ক্যান?’ এমন আহাজারিতে একমাত্র ছেলেকে পুলিশ কেন গ্রেফতার করলো তার জবাব খুঁজছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের বাবা মোহাম্মদ হানিফ খান।

মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন ২৪ মার্চ গ্রেফতার হওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ শিক্ষার্থীর পরিবার। শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন মেহেদীর মা নুরজাহান বেগম।

তিনি বলেন, ২৪ মার্চ ভোররাতে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার একটি ভাড়া মেস থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীসহ মোট ১২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যায় কোতোয়ালি থানা পুলিশের একটি টিম। আমরা গ্রেফতার হওয়া সেই শিক্ষার্থীদের পরিবার।

আটকের পর পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়। পরে চারদিকে জানাজানি হলে পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে দেয়া একটি মামলায় ১২ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখায়। এরপর আদালতের নির্দেশে তিন দিনের রিমান্ড শেষে শিক্ষার্থীদের জেলে পাঠানো হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এইসব শিক্ষার্থীরা দ্রব্যমূল্য কমানোর দাবিতে আয়োজিত এক মিছিলে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন এবং এই সংক্রান্ত প্লাকার্ড প্রদর্শন করে রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেন। তারা দেশের আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর কাজে লিপ্ত ছিলেন।

এদিকে ঘটনার পর বিভিন্ন স্থানে সরকারবিরোধী শ্লোগান দিয়ে জনগণের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে এমন অজুহাতে ১১ শিক্ষার্থীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

শুধু তাই নয়, এরপর তাদের আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী থানার বিস্ফোরক আইনের আরেকটি মামলায়। অথচ ওই সময়ে করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আমাদের সন্তানরা গ্রামের বাসায় অবস্থান করেছিলেন।

গ্রেফতার হওয়া ১২ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চারজন চলতি বছরের মার্চে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। গত ৮ মার্চ ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে যুক্ত হতে এইসব শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ জীবনে প্রথম ঢাকায় এসেছেন। তাহলে এই শিক্ষার্থীরা ঢাকায় না এসেও কীভাবে ঢাকায় ঘটা মামলার আসামি হন? ২০২১ সালে আমাদের অনেক সন্তান ঢাকায় ছিলেন না। তারা ঢাকায় এসেছেন মাত্র ২০ দিন। তাহলে কেন এক বছর আগের মামলায় তাদের যুক্ত করা হলো?

তিনি আরো বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য কোনো আবাসিক হল নেই। যার কারণে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় ভাড়া মেসে থাকছেন। সেখান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

যদি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সন্তানদের জন্য হলের ব্যবস্থা করতে পারতো তাহলে আমাদের এই দিন দেখতে হতো না। অথচ দেখেন যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় এইসব শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা সেখানে তারা বিমাতাসুলভ আচরণ করে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আচরণে খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমরা জানতে চাই, কোন আইনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে? পুলিশের মিথ্যা মামলা আমলে নিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করে তাহলে শিক্ষার্থীরা কার কাছে যাবে? আমরা অভিভাবকরা কার থেকে সহযোগিতা নেব?

মেহেদীর মা বলেন, আমরা আশা করবো সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের মুক্তি দিবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কার আদেশ বাতিল করবেন। আমরা খুবই চিন্তায় আছি। আমাদের মনের অবস্থাটা বুঝেন। এই পবিত্র রমজান ও ঈদে আমাদের সন্তানদের আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিন। আমাদের উপর অবিচার করবেন না।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com