প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডানপন্থী প্রার্থী মারিনের শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে ম্যাক্রো

0

ফরাসী ভোটাররা দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডে রোববার ভোট দিচ্ছেন। যেখানে শ্বাসরুদ্ধকর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোকে খুবই শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে কট্টর দক্ষিণপন্থী মারিন ল পেনের কাছ থেকে, যিনি খুবই সুচারু এক নির্বাচনী প্রচারাভিযানের মাধ্যমে একটা জোয়ার তৈরি করতে পেরেছেন।

ফ্রান্সের ৪ কোটি ৯০ লাখ মানুষ এই নির্বাচনে ভোট দেয়ার উপযুক্ত। তাদের ভোটেই ঠিক হবেন ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে কোন দুজনের মধ্যে পরবর্তী পর্বে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

তবে এবারের নির্বাচনে ভোট দানের হার বেশ কম। প্রথম চার ঘণ্টায় মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, গত বিশ বছরের মধ্যে এটা সর্বনিম্ন।

এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে প্রথমে প্রভাব ফেলেছিল কোভিড মহামারী, পরে ইউক্রেনের যুদ্ধ।

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো নির্বাচনী প্রচারণায় খুব কম সময় দেন, এর পরিবর্তে তার মনোযোগ ছিল ইউক্রেন যুদ্ধের বিষয়ে ইউরোপের প্রতিক্রিয়ার দিকে।

তবে একটি ইস্যু এবারের নির্বাচনে আর সব বিষয়কে ছাড়িয়ে গেছে। এটি হচ্ছে জ্বালানি এবং জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি।

ফ্রান্সের ভোটারদের মধ্যে দুই বড় দলের প্রতি সচরাচর যে আনুগত্য দেখা যায়, ২০১৭ সালের নির্বাচনে সেটা ভেসে গিয়েছিল ইমানুয়েল ম্যাক্রোর বিজয়ের মধ্য দিয়ে। ফ্রান্সের বড় দুই দল এখনো সেই ক্ষতি সামলে উঠতে পারেনি।

সমাজতন্ত্রী প্রার্থী অ্যান হিডালগো তো নির্বাচনে সেভাবে লোকজনকে উদ্দীপ্তই করতে পারেননি, একই অবস্থা রিপাবলিকান দক্ষিণপন্থী ভ্যালেরি পেক্রেসের।

কাজেই ৪৪ বছর বয়সী মিস্টার ম্যাক্রোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসছে মারিন ল পেনের কাছ থেকেই। এমন জল্পনাও চলছে যে ম্যাক্রো হেরেও যেতে পারেন।

এবারে ভোটের আগ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে, ৩৭ শতাংশ ভোটার তখনো ঠিক করতে পারেননি, তারা কাকে ভোট দেবেন।

প্যারিসের এক ক্যাফে মালিক ওর্ডিয়া বলছেন, ‘নির্বাচনী প্রচারাভিযান চলছে দুমাস ধরে, এবং সেরকম কোনো বিতর্ক কিন্তু জমেনি। আমি এখনো ঠিক করতে পারিনি কাকে ভোট দেব।’

ফ্রান্সে ডান বা বাম দলকে ভোট দেয়ার যে অন্ধ আনুগত্য বহু দশক ধরে দেখা গেছে, সেটি আর নেই।

কট্টর দক্ষিণপন্থী দলকে ভোট দেয়ার ব্যাপারটি আগে যেরকম হেয় চোখে দেখা হতো, এখন আর ব্যাপারটা সেরকম নয়।

ফিলিপ ব্রিডো আগে সমাজতন্ত্রী দলের সমর্থক ছিলেন, কিন্তু তিনি এখন কট্টর দক্ষিণপন্থীদের দিকে ঝুঁকেছেন।

‘কারণ নিরাপত্তা একটা বড় বিষয়, ইমিগ্রেশন বড় বিষয়, অথচ বামপন্থীরা এসব নিয়ে কথা বলতে চায় না’, বলছেন তিনি।

মারিন ল পেন ২০১৭ সালে ইমানুয়েল ম্যাক্রোর কাছে বিপুল ভোটে হেরেছিলেন। কিন্তু তিনি তার দল ন্যাশনাল ফ্রন্টকে এখন ন্যাশনাল র‍্যালি নামে নতুন করে গড়ে তুলেছেন, যদিও তার দলের নীতি খুব বদলায়নি। তবে আরেকজন কট্টর ডানপন্থী এরিক জেমরের তুলনায় তাকে অনেক মধ্যপন্থী বলেই মনে হবে।

জনমত জরিপ সংস্থা ইপসসের ব্রাইস টেইনটুরিয়ের বলেন, ‘এই নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখানেই শেষ হচ্ছে না।’ তার মতে ভোট দানের হার কী রকম দাঁড়ায় তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু।

আজকের নির্বাচনে যে দুজন সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তাদের দুজনের মধ্য থেকে দুই সপ্তাহ পর ভোটারদের একজনকে বেছে নিতে হবে।

বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, কট্টর ডানপন্থী মারিন ল পেন যদি নির্বাচনে জিতে যান, সেটা ফ্রান্সে এবং ইউরোপে একটা রাজনৈতিক ভূমিকম্পের মতো ব্যাপার হবে।

সূত্র : বিবিসি

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com