কে হবেন নতুন পাক প্রধানমন্ত্রী, জানা যাবে কাল
দীর্ঘ নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন ইমরান খান। এবার কে হবেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী, সে প্রশ্নে একাধিক নাম শোনা যাচ্ছে। আগামীকাল সোমবার পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের জন্য অধিবেশন বসছে।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এর বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীকাল সোমবার দুপুর ২টার দিকে পার্লামেন্টের সদস্যেরা আবার বৈঠকে বসবেন। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন হবে।
পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) নেতা আয়াজ সাদিক জানান, রবিবার দুপুর ২টার দিকে নতুন প্রধানমন্ত্রীর জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে এবং ৩টার মধ্যে এগুলোর যাচাই সম্পন্ন করা হবে। পরে আগামীকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে একটি অধিবেশনের আহ্বান জানান সাদিক। তিনি জানান, এর পরেই শুরু হবে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের প্রক্রিয়া।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার খবরে বলা হচ্ছে, দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। তিনি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি রয়েছে শাহবাজের।
এর আগে শনিবার দিনভর নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে মধ্যরাতে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির পরে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে বক্তব্য দেন পাকিস্তান মুসলিম লিগের (নওয়াজ) সভাপতি শাহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, ‘নতুন সরকার কোনো প্রতিশোধ নেবে না কিংবা অকারণে কাউকে কারাগারে পাঠাবে না‘ সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে জাতীয় পরিষদে বিরোধীদলীয় জোটের প্রার্থী শাহবাজ শরিফ। বক্তব্যের শুরুতে তিনি জোটের সব নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘সময় এলে আমরা বিস্তারিত কথা বলব। তবে, আমরা এ জাতির ক্ষত শুকাতে চাই। আমরা নিরপরাধ মানুষকে কারাগারে পাঠাব না। এবং আমরা প্রতিশোধ নেব না।’
শাহবাজের পরে পার্লামেন্টে বক্তব্য দেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলাওয়াল ভুট্টো। ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় জাতীয় পরিষদের সদস্যদের অভিনন্দন জানান বিলাওয়াল।
এর আগে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটিতে ইমরান খানের বিরুদ্ধে ১৭৪টি ভোট পড়ে। প্রস্তাবটি পাসের জন্য ৩৪২ আসনের জাতীয় পরিষদের ১৭২ ভোট দরকার ছিল ।
ভুল পররাষ্ট্রনীতি ও আর্থিক দুরবস্থার অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো অনাস্থা প্রস্তাব আনে। এ অনাস্থা প্রস্তাবকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে, সেটি জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার ৩ এপ্রিল খারিজ করে দেন। ওই দিনই ইমরান খানের সুপারিশে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। এতে চরম রাজনৈতিক সংকটে পড়ে দেশটি।
এরপর স্বতঃপ্রণোদিত নোটিশ দেন পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের শরণাপন্ন হন বিরোধীরাও। টানা পাঁচ দিনের শুনানি শেষে গত বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ এবং জাতীয় পরিষদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক ঘোষণা করেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে পার্লামেন্ট ও সরকার পুনর্বহাল হয়। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ শনিবার অনাস্থা প্রস্তাবের নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন।