তীব্র অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা প্রয়োজন: শ্রীলঙ্কা
তীব্র অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় জ্বালানি ও ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ পুনরুদ্ধারে আগামী ছয় মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কার প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন। শনিবার এমন মন্তব্য করেছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী আলী সাবরি। তবে এই প্রয়োজন মেটানো একটি কঠিন কাজ বলেও স্বীকার করেছেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে এ মাসেই আলোচনার প্রস্তুতির কথা জানান আলী সাবরি। তবে সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তিন বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তি অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ হবে বলে জানান তিনি।
শ্রীলঙ্কার অর্থমন্ত্রী হিসেবে এ সপ্তাহেই দায়িত্ব নেন আলী সাবরি। দায়িত্ব গ্রহণের পর নিজের প্রথম সাক্ষাত্কারে রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, তার দেশ আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড পুনর্গঠন করতে অর্থ পরিশোধের ওপর একটি স্থগিতাদেশ চাইবে। জুলাই মাসে আসন্ন এক বিলিয়ন ডলারের পেমেন্টের জন্য বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সরকার আত্মবিশ্বাসী।
তিনি বলেন, হার্ড ডিফল্টের পরিণতি আমরা বুঝতে পারছি। সে পর্যায়ে যাতে যেতে না হয় তার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।
জেপি মরগান বিশ্লেষকরা এই সপ্তাহে আভাস দিয়েছেন, ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার মোট ঋণের পরিমাণ হবে প্রায় সাত বিলিয়ন ডলার। এতে করে দেশটিকে তিন বিলিয়ন ডলারের তারল্য ঘাটতির মুখোমুখি হতে হবে।
জ্বালানির জন্য প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চাইবেন বলেও জানান আলী সাবরি। এর মাধ্যমে দেশটির পাঁচ সপ্তাহের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, বিশ্বব্যাংক, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ অংশীদারদের কাছ থেকেও সহায়তা চাওয়া হবে।
আলী সাবরি বলেন, ‘আমরা জানি আমরা কোথায় আছি এবং একমাত্র করণীয় হলো এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। এর বাইরে আমাদের কোনও বিকল্প নেই।’
বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে করের হার বাড়ানো এবং আগামী ছয় মাসের মধ্যে জ্বালানির দাম আরও বাড়ানোর কথাও বলেন তিনি।
আলী সাবরি বলেন, এগুলো খুবই অজনপ্রিয় পদক্ষেপ। কিন্তু দেশকে এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসার জন্য এগুলোই আমাদের করতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আপনি কি এই পথে হাঁটবেন? নাকি স্থায়ীভাবে আরও অবনতির দিকে যাবেন?
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কার বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এর ফলে কলম্বো বাধ্য হয়েছে মুদ্রার মূল্য কমাতে এবং বৈশ্বিক ঋণদাতাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। হিমশিম খাচ্ছে জরুরি খাদ্য ও জ্বালানি আমদানিতে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, সপ্তাহান্তে জ্বালানি তেলের জন্য দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অন্তত দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। রান্নার জ্বালানি গ্যাসের দাম এক হাজার ১৫০ রুপি থেকে বেড়ে চার হাজার ছাড়িয়েছে। শিশুখাদ্য গুঁড়ো দুধ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। অর্থের অভাবে কাগজ ছাপা বন্ধের ফলে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার।