রাশিয়া থেকে চলে যাওয়া পশ্চিমা কোম্পানিগুলোকে জাতীয়করণের হুমকি পুতিনের
রাশিয়ান কর্মকর্তারা বলেছেন, যেসব পশ্চিমা কোম্পানি ইউক্রেনে আগ্রাসনের কারণে তাদের দেশ থেকে ব্যবসা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের সম্পদ জাতীয়করণের পরিকল্পনা করছেন তারা। এই সিদ্ধান্তের ফলে শত শত ব্যবসার উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে। তবে অস্থায়ীভাবে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের চাকরি রক্ষা পাবে, যাদের প্রায় সবাই রুশ নাগরিক।
ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত একটি তালিকা অনুসারে সোমবার পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৭৫টি কোম্পানি রাশিয়া থেকে কোনো না কোনোভাবে ব্যবসা গুটিয়েছে। এই তালিকায় এমন কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যারা রাশিয়ার সাথে সম্পূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আবার আরেক দল রয়েছে যারা ব্যবসায়িক কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখলেও ভবিষ্যতে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনাধীন রেখেছে।
একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ার প্রসিকিউটরেরা কয়েক ডজন পশ্চিমা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে সতর্ক করেছেন যে, তারা রাশিয়া থেকে ব্যবসা প্রত্যাহার করলে তাদের সম্পদ, উৎপাদন সুবিধা, অফিস ও বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তি, যেমন ট্রেডমার্ক, সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে।
পুতিনের সমর্থন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত সপ্তাহে পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর সম্পদ জব্দের প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন। দেশটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড রাশিয়ার এক সিনিয়র সদস্য সর্বপ্রথম এই পরিকল্পনার প্রস্তাব রাখেন।
ইউনাইটেড রাশিয়ার প্রস্তাবটি এখন শুধু সম্পদ বাজেয়াপ্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বিদেশী ব্যবসার নির্বাহীদের মধ্যে যারা রুশ সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে তাদের গ্রেফতার করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। রয়টার্সের মতে, আরেকটি পরিকল্পনাও বিবেচনাধীন রয়েছে, যেটা সরকারি কোম্পানিকে লক্ষ্যবস্তু করবে, যদি তাদের শেয়ারের ২৫ শতাংশের বেশি ‘অ–মিত্র দেশের’ নাগরিকদের হাতে থাকে।
গত সপ্তাহে টুইটারে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে রাশিয়া জাতীয়করণের পরিকল্পনা নিলে আরো নিষেধাজ্ঞা বা আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে পারে।
নতুন ধরনের দখল
সরকারগুলোর বিদেশি সংস্থাগুলোর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাশিয়া যা হুমকি দিচ্ছে তা সাধারণ হিসাবের বাইরে পড়ে। অতীতে, সরকারগুলো মতাদর্শের নামে বিদেশি ব্যবসাগুলোকে জাতীয়করণ করেছে। যেমনটি কিউবা সেখানে কমিউনিস্ট বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে করেছিল বা কারণ তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগের রাজস্ব দখল করতে চায়, যেমন ১৯৫১ সালে ইরানের তেল শিল্পের জাতীয়করণ।
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের একজন সিনিয়র ফেলো এলিজাবেথ ব্রো ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, রাশিয়াতে যেটা ঘটছে সেটা এমনটি নয়।
অসম্ভাব্য সাফল্য
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাতীয়করণের শিকার অনেক বিদেশি সংস্থা চালাতে বিশেষজ্ঞ খুঁজে পেতে বেগ পেতে হবে রাশিয়াকে। বেশির ভাগ অ-রাশিয়ান সংস্থাগুলোর ব্যবস্থাপনার পদগুলো এত দিন প্রবাসীদের দখলে ছিল, যাদের বেশির ভাগ রাশিয়া থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছেন।
‘কিছু ব্যবসা, কিছু উৎপাদন কার্যক্রম রাশিয়ার মডেলের সাথে মানানসই হতে পারে’ নটরডেমের মেন্ডোজা কলেজ অফ বিজনেস বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক জেমস ও’রৌর্ক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন।
কিছু ধরনের কোম্পানি, তিনি বলেন, ‘কোনো অলিগার্ক বা শাসকদের ঘনিষ্ঠজনদের দ্বারা পরিচালনা করা যেতে পারে এবং সেই অনুযায়ী কার্যকর হতে পারে। তবে আমার মনে হয় বেশির ভাগের বেলায় সেটা সম্ভব হবে না।’
ও’রৌর্ক বলেছেন, রাশিয়া বিদেশি ব্যবসা চালু রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপক খুঁজে পেলেও, কাঁচামাল সরবরাহ একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ম্যাকডোনাল্ডস, একাধিক ভিন্ন দেশ এর উৎপাদিত সামগ্রীর উৎস এবং সে সব দেশ থেকে সিদ্ধ পণ্য আমদানি করে। রফতানিকারক এসব দেশের বেশির ভাগই রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য বন্ধ করার আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় সক্রিয়ভাবে জড়িত। রাশিয়ায় জিলেটের উৎপাদন কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিতে তৈরি মেশিন ব্যবহার করে, যারা খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক।
রাজনৈতিক সুবিধা
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ব্রো বলেন, রুশ সরকার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণের মাধ্যমে নিজের লোকদের জন্য একটি স্বল্পমেয়াদি কল্যাণ বয়ে আনতে পারে। না হলে হয়তো এই বিপুলসংখ্যক লোকেরা কর্মহীন হয়ে পড়ত।
যাই হোক, তিনি বলেন, যতক্ষণ না ক্রেমলিন পশ্চিমা দক্ষতা বা সরবরাহ ছাড়া কোম্পানির কার্যক্রম সফল ও স্থায়ীভাবে চালানোর উপায় খুঁজে না পায়, জাতীয়করণের এই সুবিধাগুলো স্বল্পস্থায়ী হয়ে যাবে।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা