‘বিডিআর বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে পাঠানো হয়নি রাজনৈতিক নির্দেশে’
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ দমনের জন্য সেনাবাহিনীকে পাঠানো হয়নি রাজনৈতিক নির্দেশে। এটা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল যে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীকে বিদ্রোহ দমনের জন্য পাঠাবেন, তা তিনি করেননি।
তার পরিবর্তে তারা বিদ্রোহীদের সঙ্গে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেষ্টা করেছেন। যার ফলে আজকে এই দেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে।
গতকাল শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার একট গভীর চক্রান্ত হয়েছে। আমাদের চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মধ্যে দিয়ে বীর সেনাবাহিনীর মনোনবল ভেঙে দেওয়ার সুদূর প্রসারী গভীর চক্রান্ত হয়েছে। আমরা পরিষ্কার করে জানি যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যারা কর্মরত আছেন বা ছিলেন বিশেষ করে বিডিআর-এ যারা কর্মকর্তা এবং সৈনিকেরা ছিলেন তারা তাদের বীরত্বের জন্য সর্বমহলে অত্যন্ত প্রশংসিত ছিলেন। অতীতে আমরা দেখেছি তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছেন। এমনকি ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্যে দিয়ে প্রথম যে যোদ্ধারা সামনে এগিয়ে আসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে তাদের বেশিরভাগই ছিলেন বিডিআর সদস্য। সেই শক্তিকে দুর্বল ও মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য তারা যেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারে। সীমান্ত রক্ষা, দেশমাত্রিকাকে রক্ষা করার জন্যে সাহসী ভূমিকা নিতে না পারে তারই অংশ ছিল এই চক্রান্ত।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের সীমান্তে হত্যা হয়, আমরা সেভাবে জবাব দিতে পারি না। আমাদের জনগণের ওপরে অন্যায় অত্যাচার হয় সেখানে তারা ভূমিকা পালন করতে পারে না।
তিনি বলেন, সেই ঘটনার পরে কতগুলো মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। একটি হলো-বিডিআর এর নামটাই পরিবর্তন করা হয়েছে। বিডিআর ছিল একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। ব্রিটিশ আমল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছে। পাকিস্তান আমলে করেছে। সেই প্রতিষ্ঠানের নাম, পোশাক পরিবর্তন করা হয়েছে। তাদের যে কোড অব কন্ডাক্ট সেটাও পরিবর্তন করা হয়েছে। বিডিআরের এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে একটা অদৃশ্য শক্তি তারা বাংলাদেশকে দুর্বল নতজানু করে রাখার জন্যে বিভিন্ন রকমের কলাকৌশলে বাংলাদেশের ওপরে চেপে বসেছে।
তিনি বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সেনাবাহিনী যে তদন্ত করেছিল তার ছোট একটু আংশ প্রকাশ করা হয়েছিল, মূল অংশটিই প্রকাশ করা হয়নি। যেটা বেসরকারিভাবে করা হয়েছিল সেটাও প্রকাশ করা হয়নি। কেন আমরা ১৩বছর ধরে সঠিক বিষয়টা জানতে পারছি না?
এছাড়াও পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা অনেক কিছু জানলেও বলতে পারি না, কোথায় যেন একটা ভয় কাজ করে। ২০০৬ সালে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করার যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল এটা ছিল সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিক অংশ। সিলেট ও রৌমারীতে যারা পরাজিত হয়েছিল তারা তাদের পরাজয় মানতে পারেনি। তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছিল বলে আমাদের ধারণা।
তিনি বলেন, বিজিবি সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা গুলি চালাবে না— তাহলে তাদের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করার দরকার কি? এ ঘটনার পেছনে মঈন ইউ আহমেদের ভূমিকা থাকতে পারে। এজন্য তিনি দেশত্যাগ করেছেন। সেনাবাহিনী জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা সেটা আজ দুর্বল হয়ে গেছে।
বিদ্রোহের যে বিচার হয়েছে তা ছিল বিচারের নামে প্রহসন। তিনি ওই ঘটনায় জেনারেল জাকিরের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি করেন।