সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মদের লাইসেন্স দেওয়া ঠেকাতে হবে: জে. ইবরাহিম
বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতিক) বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার ২১ বছরের ছেলেদের মদের লাইসেন্স ও ১০০ জন লাইসেন্সধারীর জন্য মদের বার অনুমোদন দিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির ‘মাদকের ভয়াবহতা, যুব সমাজের নৈতিক সঙ্কট-সমাধানে করণীয়’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মদের লাইসেন্স দেওয়ার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরকার বিরত না হলে দেশের জনগণ গভীর সঙ্কটে পড়বে উল্লেখ করে তিনি মুসলিম প্রধান দেশের সরকারকে অবিলম্বে এ ধরনের ঘৃণিত এবং হঠকারী দেশবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল করার দাবি জানান।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে দেশের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মদের লাইসেন্স ও অনুমোদন রুখে দিতে হবে। এ সময় তিনি মদের লাইসেন্স বাতিল করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে সব মুসলমানের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা আবু তাহের জিহাদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের মহসচিব মাওলানা ড. খলিলুর রহমান মাদানী, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ড. মুফতি আবু ইউসুফ খান, বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও নর্দান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের ডিন প্রফসর মাহবুবুল আলম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম, প্রফসর ড. আব্দুল মান্নান, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মাও. রফিকুল ইসলাম মিয়াজি, ড. মুফতি জাকারিয়া নুর, অধ্যক্ষ মুফতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।
ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে গোল টেবিল বৈঠক থেকে ৩টি দাবি পেশ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে (১) দেশের প্রকৃত উন্নয়নে যুব সমাজ গঠনে সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, (২) সুখি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নৈতিক শিক্ষার পরিবেশ দিতে হবে এবং (৩) কুরআন ও হাদিসের আলোকে হারাম-হালাল নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। মুসলিম প্রধান দেশে সাধারণ মানুষের প্রকৃত চাওয়া পাওয়া প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে আরও সচেতন হতে হবে।
তারা বলেন, কুরআনের সূরা আল-মায়েদার ৯০নং আয়াতে আল্লাহ সরাসরি ঘোষণা করেছেন: ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। ’ সুতরাং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মানুষের ঈমান-আমল ধ্বংসের এ জাতীয় কর্মকাণ্ড থেকে সরকারকে অবশ্যই সরে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথি ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মাদক রোধে আমাদের সবাইকে অধিক সচেতন হতে হবে। মাদক সেবনের কারণে মুখমণ্ডল ফুলে যাওয়া; মুখ, চোখ ও নাক লাল হওয়া; ক্ষুধামন্দা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হওয়া, বুক ও ফুসফুস নষ্ট হওয়া, চর্ম রোগ বৃদ্ধি, ক্যান্সার, লিভার সিরোসিস, আলসার হওয়া এবং যৌন শক্তি কমে যায়। মাদকের কারণে বাংলাদেশ বড় রকমের অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। আসুন দল মত জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মাদককে সবাই না বলি এবং আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মূলে ভূমিকা রাখি। মাদকমুক্ত কল্যাণকর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সর্বস্তরে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আবু তাহের জিহাদী বলেন, মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে না এমন লোক পৃথিবীতে খুব কমই আছে। মাদকের নেশায় কেউ একবার আসক্ত হয়ে পড়লে তাকে ফিরিয়ে আনা খুবই কঠিন। তাই এ ব্যাপারে মা-বাবা ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সচেতন হওয়া জরুরি। মাদকদ্রব্য মানুষের দৈহিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। সেই সঙ্গে মাদকাসক্তরা নেশার টাকা সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সমস্যা সৃষ্টি করে। মূলত, ইসলাম কল্যাণমূলক পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এজন্য ইসলাম মাদক ও নেশাদ্রব্য গ্রহণকে হারাম করেছে। তিনি সরকারের প্রতি মদের এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বিশেষ আহ্বান জানান।