অর্থের কাছে থমকে যায় দেশের মানুষের চিকিৎসা

0

দেশের সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় বেসরকারি উদ্যোগে প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। কিন্তু মানুষ কি তার মৌলিক অধিকার আসলেই পাচ্ছে? সেবার মান নিয়ে রয়েছে এমনই নানা প্রশ্ন।

সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে এবং ব্যক্তির ওপর চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ কমাতে না পারলে এ সেবা নিশ্চত করা সম্ভব নয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এমনইটাই মনে করে। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা পুরোপুরি উল্টো ঘটনা বলা চলে।

ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ের চাপ না কমে বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। আর সরকারের ব্যয় কমছে। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ওষুধ, পথ্য সরবরাহ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। আবার যতটুকু বরাদ্দ হয় তার কতটুকু জনসাধারণ পাই সেটা নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এদিকে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার উচ্চ ব্যয়ের সাথে বাণিজ্যিক মনোভাবের কারণে সাধারণ মানুষ সেবা নিতে পারছে না।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গ্রামাঞ্চলে থাকা কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সাব সেন্টার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতাল এবং নগরাঞ্চলে থাকা নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, নগর প্রাইমারি হেলথ কেয়ার ডেলিভারি সার্ভিসেস প্রজেক্ট ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারিভাবে মোট জনগোষ্ঠীর ৪০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। বাকি ৬০ শতাংশ মানুষকে এখনও সেবার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে জটিল ও দীর্ঘমেয়াদি রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসাপ্রাপ্তিতে নানামুখী সংকট তো রয়েছেই।

চিকিৎসাসেবার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে নিরাপদ হাসপাতাল চাই (নিহাচ) এর সমন্বয়ক এফ, এ শাহেদ বলেন, চিকিৎসা হচ্ছে আমাদের মৌলিক অধিকার। তবে আমাদের দেশে এই অধিকারের চিত্র কেমন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অতিরিক্ত ব্যয়ের কারণে ১৬ শতাংশ বা প্রায় তিন কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নেন না বা নিতে পারেন না। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে প্রতি বছর ৮৬ লাখের বেশি মানুষের আর্থিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার ফি যখন ঢাকা মেডিকেলে ১১০ টাকা সেটিই বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫০ টাকা, বারডেম হাসপাতালে ১০০০ টাকা, ল্যাবএইড হাসপাতালে ১৫০০ টাকা ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ২০০০ টাকা। ভিন্ন জায়গায় ভিন্ন রকম ফি দেখে মানুষ বিপর্যস্ত। নির্ধারিত নীতিমালা না থাকায় সাধারণ মানুষ আজ জিম্মি । সরকার বদল হয়েছে এদেশে বারবার তবুও সাধারণ মানুষের ভাগ্য বদল হয়নি। কিছু সংখ্যক মানুষের হাতে জিম্মি থেকেছে চিকিৎসা খাত সব সময়ই।

দেশের বিশাল জনসংখ্যা যখন চিকিৎসার নূন্যতম অধিকারটুকু পায় না! তখন, এদেশের আমলা, ব্যবসায়ী, মন্ত্রী ও বিশেষ শ্রেণীর মানুষেরা ভারতের দিল্লির মেদান্তা অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন চিকিৎসার জন্য। কেউ যান যুক্তরাষ্ট্র কেউবা সিংগাপুর। দেশের সাধারণ মানুষ অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্পন্ন সুপার স্পেশালিটি চিকিৎসা কি ভাবে পাবে তা নিয়ে কারো’ই মাথা ব্যথা নেয় । সুপরিকল্পিত নীতিমালা গঠন এবং লুটপাটের বাণিজ্যনীতি বন্ধ করা ছাড়া এদেশের মানুষ চিকিৎসা সেবা পাবে না বলে মন্তব্য করেন এফ, এ শাহেদ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বছরে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে, দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশে চার কোটি ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে অবস্থান করছে এবং প্রতি বছর অসুস্থতার কারণে নতুন করে ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্রতার শিকার হচ্ছে।

এতসব প্রতিকুলতার মধ্যে আছে চিকিৎসায় অবহেলায় অভিযোগ। যা দিন দিন ধারণ করেছে ভয়ঙ্কর রূপ। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় জোনাইল ক্লিনিক অ্যান্ড নার্সিং হোমে ১৩ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসায় অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ গণমাধ্যমে এসেছে। এর এক দিন আগে নেত্রকোনার মদন উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক শিক্ষার্থীকে করোনা টিকার চারটি ডোজ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তারও আগে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় ‘আমার বাংলাদেশ হাসপাতাল’ নামের একটি ক্লিনিকে অক্সিজেনের নল খুলে নেওয়ায় শিশুর মৃত্যু হয়।  লক্ষ্মীপুরে সদর হাসপাতালে এক নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে চিকিৎসা অবহেলায়, বলে অভিযোগ উঠে।

সারা দেশের সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রে অবহেলা ও অভিযোগের খবর আসলেই আঙুল প্রথমেই ওঠে  নার্স, ওয়ার্ড বয়, কর্মচারী, চিকিৎসক এবং বেসরকারি হাসপাতাল মালিকের বিরুদ্ধে। কিন্তু যথাযথ শান্ত্বির বিধান এবং সুনিদিষ্ঠ্য আইন না থাকাই বারবার ঘটে এমন ঘটনা এবং একইভাবে ফল ভোগ করতে হয় সাধারণ মানুষের।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com