২০২১ সালে সড়কে নিহত ৭৮০৯: যাত্রী কল্যাণ সমিতি

0

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ থাকার পরেও ৫৬২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৮০৯ জন নিহত ও ৯০৩৯ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ৪০২টি দুর্ঘটনায় ৩৯৬ জন নিহত ও ১৩৪ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১৮২টি দুর্ঘটনায় ৩১১ জন নিহত ও ৫৭৮ জন আহত এবং ৫৪৪ জন নিখোঁজ হয়েছে। সড়ক, রেল, নৌপথে সর্বমোট ৬২১৩টি দুর্ঘটনায় ৮৫১৬ জন নিহত ও ৯৭৫১ জন আহত হয়েছে।

রবিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত ‘বার্ষিক সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২১ প্রকাশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এতে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনা কবলে পড়েছেন ২৩৫০ জন চালক, ১৭১৫ জন পথচারী, ১০১৭ জন পরিবহন শ্রমিক, ৪৩০ জন ছাত্রছাত্রী, ১১১ জন শিক্ষক, ২৩৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ১০৭৬ জন নারী, ৬৩৮ জন শিশু, ৪২ জন সাংবাদিক, ২৭ জন চিকিৎসক, ১৪ জন আইনজীবী ও ১৮ জন প্রকৌশলী এবং ১৬১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ১০ জন মুক্তিযোদ্ধা।

সংবাদ সম্মেলন থেকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়— বেপরোয়া গতি; বিপদজনক অভারটেকিং; রাস্তাঘাটের ত্রুটি; ফিটনেসবিহীন যানবাহন; যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা; চালকের অদক্ষতা; চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার; মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো; রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা; ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ।

এছাড়া আরও রয়েছে— ছোট যানবাহন বৃদ্ধি; সড়কে চাঁদাবাজি; রাস্তার পাশে হাট-বাজার; ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন রাস্তায় নামানো এবং দেশব্যাপী নিরাপদ ও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেপরোয়াভাবে বাড়ছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের কাছে ১২ দফা সুপারিশ জানায় সংগঠনটি। সুপারিশগুলো হচ্ছে— সড়ক নিরাপত্তায় বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করা; আইনের ত্রুটি চিহ্নিত করে সংস্কারপূর্বক ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা; সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক মন্ত্রণালয়ে আলাদা সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট গঠন; সড়ক নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন উদ্যোগ নেওয়া; দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা; জেব্রা ক্রসিং অংকন করা; গণপরিবহন চালকদের পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা; সড়ক পরিবহন সেক্টরে অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি বন্ধ করা; গাড়ির ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স দেওয়ার পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে আধুনিকায়ন করা; সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠনপূর্বক হতাহতদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা; দেশব্যাপী চাহিদানুযায়ী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন পরিবহন নামানোর উদ্যোগ নেওয়া; ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা এবং গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য দেশের সব মন্ত্রী, সংসদ সদস্য সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতি মাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন— বুয়েট দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. হাদিউজ্জামান, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ আবদুল হক, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী নুর খান লিটন, নাগরিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না, সংগঠনের সহ-সভাপতি তাওহীদুল হক লিটন প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com