ব্রিটেন সরকারের নানা পদক্ষেপ ওমিক্রন মোকাবেলায়
ব্রিটেনে প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের জন্য করোনার টিকা বাধ্যতামূলক এবং কোভিড-১৯ মোকাবেলায় নানা পদক্ষেপে যখন স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসছিল তখনই ওমিক্রনের নতুন আক্রমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
নতুন এই আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের ফলে ব্রিটিশ সরকার নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। নাগরিকদের জীবনও নতুন করে কড়াকড়ি নিয়মে আবদ্ধ হয়েছে।
সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বশেষ তথ্য থেকে দেখা যায়, ব্রিটেনের ২৪ শহরে ৪২ জন ওমিক্রনে আক্রান্ত করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে এই তথ্য দেয়া হয়েছে।
নতুন করে ১০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর আসার পর আক্রান্ত ৪২ জনে উন্নীত হয়েছে। আক্রান্তের খবর প্রায় সারাদেশেই পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইস্ট মিডল্যান্ড, ইস্ট অব ইংল্যান্ড, লন্ডন, সাউথ ইস্ট এবং নর্থ ওয়েস্টের ২৪ শহরে ছড়িয়েছে। ডেইলি সান জানিয়েছে, আক্রান্ত খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। সেই সাথে আক্রান্তরা সবাই যে দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমনে গিয়েছিলেন অথবা যারা গিয়েছেন তাদের সংস্পর্শে যাওয়ার প্রমাণ বা তথ্য নেই। তাই কিভাবে এই সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউকে এইচএসএর চীফ এক্সিকিউটিভ ডা: জেনি হ্যারিস বলেন, এটা খুবই হতাশাজনক নতুন প্রকার খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের পরিচিতজন যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন তাদের হোম আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেন ওই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।
ওমিক্রন মোকাবেলায় সরকারের নতুন পদক্ষেপ নতুন ব্যবস্থায় ব্রিটেনের দোকানপাট এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্টের মতো জায়গায় আবার মাস্ক পরিধান করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওমিক্রনের থাবা আসার আগে ব্রিটেনের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক ছিল না। কিন্তু এবার ব্রিটেনের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুখ মাস্কে ঢেকে রাখার জন্য কঠোরভাবে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনাটি সমস্ত স্কুল এবং চাইল্ড কেয়ার কর্মীদের এবং দর্শকদের জন্যও প্রযোজ্য বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এছাড়া ওমিক্রনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা সব মানুষদের এনএইচএসএর করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। এছাড়া যে সব ব্যক্তিদের করোনা টিকার দুই ডোজ নেয়া আছে তাদেরও ১০ দিনের জন্য আইসোলেশনে থাকতে হবে। অন্যদিকে ব্রিটেনে প্রবেশকারি যে কেউ ব্রিটেনে পৌঁছানোর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে একটি পিসিআর পরীক্ষা করবেন এবং নেগেটিভ ফলাফল না পাওয়া পর্যন্ত আইসোলেশনে থাকতে হবে।
কোভিড বুস্টার জ্যাবস ১৮-এর বেশি বয়সীদের জন্য দেয়া হবে। দ্বিতীয় ডোজ এবং বুস্টারের মধ্যে ব্যবধান বর্তমান ছয় মাস থেকে তিন মাসে কমিয়ে আনা হয়েছে। গুরুতরভাবে অসুস্থ্য লোকেদের চতুর্থ ডোজ দেয়া হবে ব্রিটেনে। এছাড়া ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিশুদের প্রথম ডোজের তিন মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। ব্রিটেনের প্রাপ্ত বয়স্ক সবাইকে দেয়া হবে বুস্টার ডোজ।
নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রভাব কী হতে পারে তা বিজ্ঞানীরা সঠিকভাবে এখনো জানায়নি।
ব্রিটিশ সরকার বলেছে, তারা তিন সপ্তাহের মধ্যে আবার আক্রান্তের সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে পর্যালোচনা করবে। তবে সরকার বারবার বলেছে ব্রিটেনের আরেকটি লকডাউনের কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।
পাবলিক প্লেস ও ট্রান্সপোর্ট ব্যবহারে নতুন নিয়ম পাবলিক ট্রান্সপোর্ট বা যানবাহনগুলোতে বাধ্যমতামূলক ভাবে মাস্ক পরার বিধি চালু করেছে ব্রিটিশ সরকার।
বিষয়টি নিয়ে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেছেন, যদি কেউ ট্রেনে মাস্ক না পরে আরোহন করে তাহলে তাকে ২০০ পাউন্ড জরিমানা করা হবে। আর এই নিয়মে সর্বোচ্চ পরিমাণ ছয় হাজার ৪০০ পাউন্ড পর্যন্ত জারিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া দোকানপাট ও মার্কেটগুলোতে সব নাগরিকদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর এসব করা হয়েছে জনগন যেনো বড়দিনের উৎসবগুলো নির্বিঘ্নে করতে পারে।
ওমিক্রনের জন্য ওষুধ ব্রিটিশ সরকারের অনুমোদন
করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের চিকিৎসায় গস্ন্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মুখে খাওয়ার ওষুধ বৃহস্পতিবার অনুমোদন দিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
খবরে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমএইচআরএ) জানিয়েছে, যারা করোনা সংক্রমণে ভুগছেন এবং যাদের জীবনের ঝুঁকি রয়েছে তাদেরও গস্ন্যাক্সোস্মিথক্লাইনের এই ওষুধ কার্যকর। এমনকি করোনার উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের বিরুদ্ধেও এই ওষুধ কার্যকর।
এমএইচআরএ জানিয়েছে, সোট্রোভিম্যাব নামে ওই ওষুধটি মৃদু থেকে মাঝারি করোনার সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে নিরাপদ এবং কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
গস্ন্যাক্সোস্মিথক্লাইন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোট্রোভিম্যাব নতুন ওমিক্রন সার্স-কভ-টু ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশনের ঠেকাতে কার্যকর। এখন পর্যন্ত সোট্রোভিম্যাব ওমিক্রনের বিস্তার রোধে কার্যকর বলে প্রমাণ মিলেছে।
এমএইচআরএর মতে, ওই ওষুধের একটি ডোজই করোনা সংক্রমিত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি ৭৯ শতাংশ কমাতে পারে।
ওমিক্রনের বিরুদ্ধে এই ওষুধ কতটা কার্যকর সেটা নিরপেক্ষভাবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওষুধটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। ২০২১ সালের শেষ নাগাদ এ ব্যাপারে চূড়ান্ত জানানোর পরিকল্পনা আছে গস্ন্যাক্সোস্মিথক্লাইনের।
সোট্রোভিম্যাব ব্রিটেনের গস্ন্যাক্সোস্মিথক্লাইন এবং ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক ভির বায়ো টেকনোলজির যৌথ উদ্যোগে প্রস্তুত করা হয়েছে। ওষুধটিতে রয়েছে এক ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি। এতে রয়েছে এক ধরনের প্রোটিন যা শরীরের কোষে যা করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের প্রবেশ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
এদিকে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনের ফলে গত মে মাসের পর সবচেয়ে কম মানুষ রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন। খ্রিসমাসকে ঘিরে রেস্টুরেন্ট সেক্টর যেভাবে আবার জমে উঠেছিল সেটা আবারো ভাটা পড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ও পাবে খ্রিসমাস পার্টি বাতিল হচ্ছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বারবারই অনুরোধ করেছেন যেনো ক্রিসমাসের অনুষ্ঠান বাতিল করা না হয়।
সরকারের একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, ক্রিসমাস পার্টিতে যেনো চুমু ও জড়িয়ে ধরা এড়িয়ে যাওয়া হয়।