জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে দরিদ্র আরও দরিদ্র হবে, বলছেন অর্থনীতিবিদরা
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, তেলের অস্বাভাকি দাম বাড়লে উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকে না। এতে উৎপাদন, রপ্তানি ও আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হঠাৎ ডিজেল ও কেরোসিনের অতিরিক্ত দর বৃদ্ধি নন-এ্যাবসর্ভ পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
তিনি বলেন, কোনো কোনো উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে ডিজেল ও কেরোসিন। সেচের মেশিন ব্যবহার করলে ডিজেল লাগে। সেচের মেশিন হয়তো ধানের উৎপাদনে সহায়ক হয়। ফলে ডিজেল-কেরোসিনের দর বৃদ্ধিতে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে।
সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, করোনার কারণে মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দুর্দশার মধ্যে আছেন। ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে স্বল্পআয়ের মানুষ প্রচণ্ড চাপে আছেন। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলো। কাজকর্মে যুক্ত হচ্ছিলেন। একইসঙ্গে করোনার ক্রমহ্রাসে অর্থনীতিতে চাঞ্চল্য তৈরির একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। সবাই মিলে যখন অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছিলেন, তখন হঠাৎ তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব সরাসরি জনজীবনে পড়বে।
ইতোমধ্যেই তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে জনজীবনে। গণপরিবহনে যে পরিমাণ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে, তার চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে। উৎপাদনে তেলের দাম বৃদ্ধির নেতিবাচক পড়বে। কৃষক ডিজেল ও কেরোসিন তার উৎপাদনে ব্যবহার করেন। ফলে কৃষির উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। কৃষি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির অর্থ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তেলের দাম না বাড়িয়ে ভারতের মতো আমদানির ওপর শুল্ক হ্রাস করেও সমন্বয় করা যেতো।
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। দারিদ্রসীমার সামান্য ওপরে যারা অবস্থান করছিলেন, তারা দারিদ্রসীমার নিচে চলে আসবেন। এতে দরিদ্রদের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। এটা একটা সিরিয়াস সিগনাল। ইতোমধ্যেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ৩০-৩২ শতাংশ বেড়ে গেছে। কিছু কিছু শাক-সবজির ক্ষেত্রে ডাবল দামও নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মানুষের আয় ওইভাবে না বাড়লে ৩৫ শতাংশ প্রকৃত আয় কমে যাবে।
কৃষিতে ভর্তুকির পরিমাণ বেশি দেখা যায়, কিন্তু জনপ্রতি কী পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দেওয়া হয়, হিসাব করলে প্রকৃত চিত্রটা বোঝা যাবে। কৃষিতে ভর্তুতি দিতেই হবে। ভর্তুকি না দিলে কৃষকেরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন। কারণ যারা কেরোসিন ও ডিজেল ব্যবহার করে কৃষি পণ্য উৎপাদন করেন তাদের খরচ বেড়ে যাবে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে ক্ষতির মুখে পড়বেন অনিবার্যভাবে।