জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে বোঝাপড়া করতে প্রধান উপদেষ্টাকে পরামর্শ বিএনপির
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের ঘোষিত ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারের প্রোক্লেমেশনের বিষয়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বোঝাপড়া সৃষ্টি করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর থেকেই ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। আগের দিন সোমবার দিবাগত রাত ৯টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাকে সুসংহত রাখার জন্য এ ঘোষণাপত্রটি গৃহীত হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা আসার পরই রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। রাত দশটার দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আজকের বৈঠকে আমরা আলোচনা করেছি। তাদের ঘোষণার বিষয়ে তাদের অবস্থান প্রকাশ্যে এলে দলীয় অবস্থান আসবে।’
সোমবার গভীর রাতে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানায়, রবিবার প্রধান উপদেষ্টাকে বিএনপির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, প্রোক্লেমেশন অব জুলাই প্রোগ্রাম নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতাদের বক্তব্য, তাদের অবস্থান পর্যালোচনা করে তাদের সঙ্গে বোঝাপড়া সৃষ্টি করার জন্য। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য এ বিষয়ে দলীয় মতামত পেশ করেন।
সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে দুইটি মতামত দেওয়া হয়েছে। একটি হচ্ছে, বিগত জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান হয়েছে সকল দলমত নির্বিশেষে। সবার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে মানুষের মধ্যে প্রত্যাশা জন্মেছে, পরিবর্তনের। এই পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষাকে ‘প্রোক্লেমেশন অব জুলাই’ প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে বিতর্কিত করে না তুলতে সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ করে বিএনপি।
সূত্রের ভাষ্য, দলের পক্ষ থেকে অনেকটা এরকম বলা হয়েছে, ‘তোমরা যা বদল চাচ্ছো অযৌক্তিক না, কিন্তু তা যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। তোমরা বলে দিলে মানুষ চলে আসবে, সেভাবে হবে না। এখন তো ৫ বা ৬ আগস্ট না।’
সূত্রের ভাষ্য, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতাদের মধ্যে অহঙ্কারবোধ জন্মেছে, যেভাবে আওয়ামী লীগের মধ্যেও ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর ঘটেছে।’
বিএনপির প্রভাবশালী সূত্রটি জানায়, ছাত্রদের স্পিরিট ঠিক আছে। তার মানে যা তা করা সম্ভব নয়। ধৈর্যের সাথে তাদেরকে বুঝতে দেওয়া- মানুষ একটা পরিবর্তন চায়। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার বিভিন্ন বক্তব্যে বিষয়টি উল্লেখ করছেন, ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
সোমবার নীলফামারী জেলা বিএনপির একটি অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের রাষ্ট্র মেরামতের ভিত্তি হবে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন; বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের সব মূলনীতির প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োগ। ইনশাল্লাহ, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, যেখানে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়পরায়ণতা।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন