মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা

0

প্রিয় পাঠক: আমরা আজ গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভয়াবহভাবে পিছিয়ে পড়েছি, যদিও আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ দেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণায় তারা অঙ্গীকার করেছিলেন যে রক্তের দামে কেনা এ রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা, যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।

স্বাধীনতার এ ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেই জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংবিধানে ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে। আর এজন্যই সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে প্রশাসনের সকল স্তরে আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের শাসন প্রতিষ্ঠার, অর্থাৎ সত্যিকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে স্থানীয় সরকার গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল তৃণমূলে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণতা দেয়া এবং এর ভিতকে শক্তিশালী করা।

অথচ আজ শক্তিশালী করার বদলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সকল মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয়া সহ গণমাধ্যমকে অব্যাহতভাবে হয়রানি এবং নাগরিক সমাজের কণ্ঠরোধ করার মাধ্যমে ক্ষমতাকে এখন পাকাপোক্ত করেছে। যার জন্য দেশে আজ দুর্নীতি দমন কার্যক্রম রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অনেকটা অকার্যকর। ন্যায়বিচারের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দুর্বলতা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিনা দ্বিধায় মানবাধিকার লঙ্ঘন করে আসছে।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ:
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি জন্মায়নি, কিন্তু আজকের এ মহেন্দ্রক্ষণে দাঁড়িয়ে আমার মনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বার বার উঁকি দিচ্ছে, মহান বীর মুক্তিযোদ্ধারা কি জানতেন বাংলাদেশে আজ একটি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণীত হবে মানুষের মৌলিক মানবাধিকার হরণ করে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য?

বীর মুক্তিযোদ্ধারা কি জানতেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশে গুম-খুনের সংস্কৃতির প্রচলন ঘটাবে শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য?

বীর মুক্তিযোদ্ধারা কি জানতেন যে স্বাধীন বাংলাদেশে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হবে, যে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তারা অকাতরে জীবন দিয়েছিলেন, তাহলে কি তারা পকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতেন?

বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন ও লুটপাটের একটি স্বর্গরাজ্যে এবং উগ্রবাদের সূতিকাগারে পরিণত হবে এমন জানলে আমাদের মা-বোনরা কি তাদের ইজ্জতকে বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে জড়িত হতেন?

বীর মুক্তিযোদ্ধারা আজকের এই বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্যই কি নিজের জীবন বাজি রাখতেন?
আমাদেরকে একটি লাল-সবুজের পতাকা উপহার দিতেন?

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আমার এসকল প্রশ্নের উত্তরগুলো না-হয় আপনাদের উপরই ছেড়ে দিলাম। পরিশেষে শুধু সংক্ষিপ্ত আকারে এটাই বলবো যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ও প্রধান প্রত্যয় হলো গণতন্ত্র। আর সে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উপায় হলো সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে সরকার গঠনের অবাধ সুযোগ দেওয়া। প্রজাতন্ত্রের মালিক কোনো দল বা নেতা নন, প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। তাই আমি মনে করি, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই হলো মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা, যে নির্বাচনে দলমত-ধর্মবর্ণ-জাতিনির্বিশেষে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাঁর ভোটটি দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারবেন। কোনো পর্যায়েই তাঁকে হয়রানি বা নিগ্রহের শিকার হতে হবে না। ভোটের আগে, ভোটের সময় এবং ভোটের পরও তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। এবং মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকার চেতনা হলো, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা।

-ডালিয়া লাকুরিয়া

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com