জিয়াউর রহমানকে নিয়ে অনির্বাচিত আ.লীগ সরকারের মন্ত্রীরা মিথ্যাচার করছেন: প্রিন্স

0

জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মন্ত্রীরা মিথ্যাচার করছেন অভিযোগ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, বর্তমান ভোটারবিহীন নিশিরাতের সরকার বুঝতে পেরেছে তাদের ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশের মানুষ এতটাই জর্জরিত ও অতিষ্ঠ যে, আওয়ামী নিষ্ঠুরতা থেকে জনগণ পরিত্রাণ লাভের আশায় প্রহর গুণছে।

মঙ্গলবার (৩১ আগষ্ট) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রিন্স বলেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখন দ্বিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিষোদগারের পাশাপাশি এখন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ কেড়ে নেয়ার ধৃষ্টতাসহ এখন নতুন করে তার লাশ, মাজার এমনকি মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান নিয়ে আপত্তিকর, নির্মম, নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য মিথ্যাচার শুরু করেছে। আসলে শহীদ জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে শহীদ জিয়ার লাশ, মাজার ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান নিয়ে অশালীন ও ঘৃণিত বক্তব্য প্রদানের পর থেকে আওয়ামী মন্ত্রী-নেতারা অতি উৎসাহে এ বিষয়ে মিথ্যাচার শুরু করেছে।

তিনি বলেন, মনে হচ্ছে শহীদ জিয়ার লাশ নিয়ে আওয়ামী মন্ত্রী-নেতাদের মধ্যে রুচিহীন বক্তব্য প্রদানের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, এ জন্য যে, যার বক্তব্য যত ঘৃণ্য ও অসত্য হবে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে। শহীদ জিয়াকে নিয়ে আওয়ামী মিথ্যাচার তাদের ভ্রষ্টাচার ছাড়া কিছু নয়। এসব আওয়ামী লীগ প্রযোজিত ও পরিচালিত নষ্ট রাজনীতির উপাদান মাত্র। এসব বক্তব্য থেকে জনগণের নিকট পরিস্কার হয়ে গেছে যে, সরকারের পায়ের নীচের সর্বশেষ মাটিটুকুও আর অবশিষ্ট নেই।

বিএনপির এ নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা অনেক মন্ত্রী দেখেছি, যাদের বক্তব্য-মন্তব্য গোটা জাতিকে বিস্ময়ে হতবাকই করেনি বরং জনগণের হাসির খোরাক হয়েছে। উদ্ভট, খামখেয়ালী, মানহানিকর ও মিথ্যা বক্তব্য প্রদানে আওয়ামী নেতা-মন্ত্রীদের জুড়ি মেলা ভার। আওয়ামী লীগের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম খা আলমগীর সাভারে এক ভবন ধ্বসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলেছিলেন, ‘বিএনপি নেতাকর্মীরা ভবনের পিলার ধরে টানাটানি না করলে হয়তো ভবন ধ্বসের ঘটনা ঘটতো না।’

মন্ত্রী-নেতাদের মুখ নিঃসৃত এ ধরনের আরো অনেক অবান্তর ও হাস্যকর বক্তব্য-মন্তব্য আমরা উল্লেখ করতে পারি। কিন্তু করলাম না, কারণ তাদের লজ্জা না থাকতে পারে কিন্তু এসব বিষয়ের উল্লেখ করতে আমাদেরকেই লজ্জা লাগে, রুচিতে বাধে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, ‘করোনার সংক্রমণ রোধ, প্রতিষেধক টিকা সংগ্রহ ও প্রদান, হাসপাতালে রোগী সংকুলান ইত্যাদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়।’ ধিক, আওয়ামী লীগের কতিপয় মন্ত্রী-নেতাদেরকে যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষক, জেড ফোর্সের অধিনায়ক, সেক্টর কমান্ডার ও বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ছোট করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এসব অবান্তর, রুচিহীন মিথ্যাচার করে প্রকারন্তরে তারা মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানিত করছেন। এ ধরনের নির্লজ্জ আচরণ তাদেরকেই মানায় যাদের দুই কান কাটা। এ ধরনের বক্তব্য জাতির সঙ্গে রসিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা জনগণের নিকট হাস্যরসের পাত্রে পরিণত হচ্ছেন। এ ধরনের কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েও তাদের মন্ত্রীত্ব চলে যায় না। বরং তারা পুরস্কৃত হন।

প্রধানমন্ত্রীর উৎসাহেই এবং তার ‘গুডবুকে’ থাকার জন্যই পারিষদবর্গ এ ধরনের পাগলের প্রলাপ বকছেন। দেশের মানুষ যেন এক হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীদের রাজত্বে বসবাস করছে। চলিতেছে সার্কাস। হায় সেলুকাস!

প্রিন্স বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের এই লাগামহীন মিথ্যাচার ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের অন্তর্নিহিত কারণ জনগণ ভাল করেই জানে। দেশ পরিচালনায় তাদের সীমাহীন ব্যর্থতা, গণতন্ত্র-ভোটাধিকারসহ মৌলিক মানবাধিকার হরণ, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা, মামলা-হামলাসহ ভয়াবহ দুঃশাসন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি ও লুটপাটকে আড়াল করতে এবং করোনা মোকাবিলা, টিকা সংগ্রহে ব্যর্থতা, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, চিকিৎসা সংকট ইত্যাদি থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এ ধরনের মিথ্যাচারের নেশা পেয়ে বসেছে বর্তমান গণধিকৃত সরকারকে।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, জিয়া উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের লাশ পেলে নাকে খত দেবেন, লাশের ডিএনএ টেস্টসহ শহীদ জিয়ার লাশ কবর থেকে সরানো হবে বলে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্যকে আমরা কী বলে আখ্যায়িত করবো কিংবা সেটির বিরুদ্ধে কী ভাষায় কথা বলবো তা জানতে হলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-নেতাদের নিকট প্রশিক্ষণ নেয়া ছাড়া আমাদের উপায় নেই। একজন মন্ত্রী কতটা আদবের বরখেলাপ করলে এমন বক্তব্য রাখতে পারে তা জাতির নিকট সহজেই অনুমেয়। এখন যদি কেউ প্রখ্যাত উপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদের ‘দেয়াল’ উপন্যাসের ৮৫ পাতায় বর্ণিত স্বাধীনতা পরবর্তীকালে টঙ্গি ব্রীজের নীচে ধর্ষিতা নারীর ডিএনএ টেস্টের কথা বলেন, তাহলে সেই দাবিকেও কি উপেক্ষা করা যাবে?

মিথ্যা প্রলাপকারী এসব অর্বাচীন মন্ত্রী-নেতাদের জিজ্ঞেস করতে চাই-মুক্তিযুদ্ধকালীন তারা কোন রনাঙ্গণের কোন সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদের মতো লোকদের একমাত্র কাজ হচ্ছে মিথ্যাচার, বিষোদগার, চরিত্র হনন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি। তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় সমূহের দায়িত্ব দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকেই অপমাণিত করা হচ্ছে।

শহীদ জিয়া, তার নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্স, সেক্টরের সাহসী ও গৌরবজনক অবদান নিয়ে নিকৃষ্ট মিথ্যাচার যারা চালাচ্ছে তারাই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে, জাতি তাদেরকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করছে।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com