আওয়ামী লীগের কাছে ‘সংখ্যাগুরু’ কিংবা ‘সংখ্যালঘু’ কেউ নিরাপদ নয়: তারেক রহমান

0

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, যে সমাজে নারী-শিশু-এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অবহেলিত -অপমানিত, সেই সমাজ কখনো সভ্য ও উন্নত সমাজ হতে পারেনা। দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, ‘নিজেদেরকে সংখ্যালঘু নয় ‘বাংলাদেশী’ ভাবুন। মুক্তিযুদ্ধ করার সময় কে সংখ্যাগুরু আর কে সংখ্যালঘু সেটি কারো প্রশ্ন ছিলোনা। এই দেশটা সবার।

হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গতকাল সোমবার (৩০ আগস্ট) বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি অ্যাডভোকেট গৌতম চক্রবর্তী।

সভায় তারেক রহমান বলেন, বিএনপি কখনোই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে চায়না, ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়না, ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানাতে চায়না। বিএনপি বিশ্বাস করে, দল-মত-ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি-অবাঙালি বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই রাষ্ট্রে সকল ক্ষেত্রে সমানাধিকার ভোগ করবে এটাই বিএনপি’র নীতি এটাই বিএনপির রাজনীতি।

হিন্দু শাস্ত্রমতে শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাবের সময়কালীন দুষ্ট ও স্বৈরাচারী রাজা কংস প্রসঙ্গ উল্লেখ তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচার-দুরাচার-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, প্রতিবাদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য ধর্মীয় শিক্ষাও বটে।

তারেক রহমান বলেন, প্রতিটি ধর্মই অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা বলে। সাম্য, সম্প্রীতি ও মানবতার কথা বলে। মানুষের স্বাধীনতার কথা বলে। ফলে,ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী কিংবা সংশয়বাদী, বিশ্বের প্রতিটি নাগরিকই এমন একটি নিরাপদ রাষ্ট্র ও সমাজ প্রত্যাশা করে, যেখানে প্রতিটি নাগরিক বিনাবাধায়ধর্মীয়-রাজনৈতিক-সামাজিক অধিকারগুলো ভোগ করতে পারবে।

তিনি বলেন, এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণ প্রত্যেকের দায়িত্ব। এমন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও সমাজ গঠনের লক্ষ্যেই মুসলমান-হিন্দু, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী সবাই মিলে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ছিলসাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক ন্যায়বিচার।

তারেক রহমান বলেন, ৭১ সালে হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন বাংলাদেশ পেলেও সেই স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্য-মানবিক মর্যাদা-সামাজিক ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনো লড়াই করতে হচ্ছে। স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকরা এখন যেন এক প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসাপরায়ণ কংস-রানীর কবলে।

রাষ্ট্র ও সমাজে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু প্রসঙ্গটি উল্লেখ করে তারেক রহমান তার একটি উপলব্ধির কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী ফলে মুসলমানরা সংখ্যাগুরু আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু। আর ভারতে অধিকাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ফলে হিন্দুরা সংখ্যাগুরু আর মুসলমানরা সংখ্যালঘু। অপরদিকে ব্রিটেনে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যাগুরু। আর মুসলমান এবং হিন্দু উভয় জনগোষ্ঠী-ই সংখ্যালঘু।

সুতরাং, বর্তমান বিশ্বে তথা একটি আধুনিক রাষ্ট্র ও সমাজে কোন দেশের জনগোষ্ঠীকে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করে মানুষের মধ্যে বৈষম্য অমার্জনীয় অপরাধ। কারণ, দিনের শেষে প্রত্যেকেই ভৌগোলিক সীমানা ভেদে কখনো সংখ্যাগুরু কখনো সংখ্যালঘু, বলেন তারেক রহমান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সকল ধর্ম বর্ণ কিংবা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর গর্বিত পরিচয় নির্ধারণ করেছিলেন ‘বাংলাদেশী’ অর্থাৎ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। একমাত্র ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ দর্শনই দেশের সকল বর্ণ, ধর্মীয় সম্প্রদায় ও নৃগোষ্ঠীর নিবিড় সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারে।মানুষে মানুষে সৌহার্দ-সম্প্রীতি বাড়াতে পারে।

তারেক রহমান বলেন, যারা ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ বিরোধী তাদের শাসনামলেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। অপমানিত-লাঞ্চিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে দেশের জনগণের সার্বজনীন পরিচয় ‘আমরা বাংলাদেশী’ মুছে দিয়ে সমাজে বিভেদ-বিরোধ হিংসা হানাহানি জিইয়ে রাখতে চায়।

তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের গত একযুগে দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়ে বাড়িঘরে অসংখ্য হামলা হয়েছে, রামু কিংবা নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে। নির্যাতন হয়েছে। একটি ঘটনারও কি বিচার হয়েছে ? ২০১২ সালে রামু বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার বিচার এতো বছরেও কেন হলোনা? ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বিচার দূরে থাক তদন্ত শেষ হয়েছে? কেন হচ্ছেনা ?

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু যাদের উপরই হোক, প্রতিটি সংঘর্ষে -প্রতিটি ঘটনায় প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবেক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ জড়িত। এ কারণেই কোনো একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। বরং প্রতিটি ঘটনার পরই দেখা যায় ক্ষমতাসীনরা ঘটনার বিচার না করে ব্লেইম গেইমে লিপ্ত হয়। সরকার যদি নিজেরাই ব্লেইম গেইমে লিপ্ত হয় তাহলে বিচারটা করবে কে? ক্ষমতাসীনদেরকে বিচারে কে বাধা দিয়েছে, প্রশ্ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের।

তারেক রহমান বলেন, এস কে সিনহাকে প্রধান বিচারপতি বানিয়ে নিশিরাতের সরকার নিজেদেরকে সংখ্যালঘুপ্রেমী হিসেবে বেশ বাহবা নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তারপর ব্যবহার করা শেষ হয়ে গেলে অপমানজনকভাবে দেশছাড়া করেছে। সুতরাং, এখনো যারা নিশিরাতের সরকারের কাছ থেকে সামান্য কিছু সুযোগ সুবিধা কিংবা একটা পোস্টিং – প্রমোশনের লোভে ‘বোকার মতো ধোকার’ মধ্যে রয়েছে, প্রয়োজন শেষে তাদেরকেও এসকে সিনহার মতো ছুড়ে ফেলে দেবে নিশিরাতের সরকার।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস নেই। ক্ষমতার লোভে তারা সব কিছু করতে পারে। স্রেফ ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এরা ১৫ আগস্ট ঘটিয়েছিল। আবার ক্ষমতার লোভেই ১৫ আগষ্টের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগীদের নিয়ে মহাজোটের নামে একজোট হয়েছে। এখন আবার মহাজোটের শরিকরাই একে অপরকে সাক্ষপ্রমানসহ শেখ মুজিবের খুনি বলছে।

তারেক রহমান বলেন, সবক্ষেত্রেই এরা এতটাই ব্যর্থ যে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে কখনো স্বাধীনতার ঘোষকের বিরুদ্ধে, কখনো দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কখনো বা বিএনপির বিরুদ্ধে পাগলের প্রলাপ বকছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা স্বাধীনতার ঘোষকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গন এইসব অর্বাচীনদের কাছে স্রেফ অন্ধের হাতি দর্শনের মতো ঘটনা।

ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে আহবান জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, নিশিরাতের সরকার যেন কারো ধর্মীয় পরিচয়কে তাদের নিজেদের হীন দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আওয়ামী লিগ শুরু থেকেই পবিত্র ধর্মকে নিজেদের হীন দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে সমাজে হিংসা-বিদ্বেষ-অস্থিরতা জিইয়ে রাখছে। নানা কৌশলে সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে অবিশ্বাস সৃষ্টি এবং বিভাজনের বীজ জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চাইছে। আওয়ামী লীগ সরকারে থাকুক কিংবা বিরোধী দলে তারা বারবার ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানিয়েছে।

তারেক রহমান বলেন, দেশে শরিয়া আইন কায়েম করা হবে, দেশ চলবে মদিনা সনদে, শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যেই এসব কথা বলে দেশের আলেম ওলামা এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সঙ্গে ধোঁকাবাজি করেছে। শেখ হাসিনার ধোকাবাজিতে প্রতারিত হয়ে এক শ্রেণীর আলেম ওলামা তাকে কথিত ‘কওমি জননী’ খেতাব দিয়েছিলো। তবে শেষ পর্যন্ত আলেম ওলামাদেরকে দলীয়স্বার্থে ব্যবহার করতে না পেরে তাদেরকে এখন কারাগারে নিক্ষেপ করেছে।

তিনি বলেন, ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগের কাছে সংখ্যাগুরু কিংবা সংখ্যালঘু কেউ নিরাপদ নয়। ২০১২ সালে পুরোনো ঢাকায় বিশ্বজিৎ দাশকে কিভাবে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রাজপথে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে এ বীভৎস দৃশ্যমানুষ এখনো ভুলে যায়নি। কি দোষ ছিল বিশ্বজিৎ দাশের, প্রশ্ন তারেক রহমানের। তিনি বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যা মামলায় নিম্ন আদালতে আট জনের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়েছিল এরমধ্যে উচ্চ আদালতে ছয় জনের মৃত্যুদণ্ড বাতিল।

দেশ বাঁচাতে-মানুষ বাঁচাতে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একটি মাফিয়ামুক্ত রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠায় তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নেয়ার আহবান জানান।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com