‘বন্ধুরা বাবার হাত ধরে স্কুলে আসে, দেখে আমার খুব কষ্ট হয়, দয়া করে আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন’
‘দয়া করে আমার বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেন। আমি আমার বাবার সাথে স্কুলে যেতে চাই। স্কুলের বন্ধুরা সবাই তাদের বাবার সাথে স্কুলে আসে, আমি তাকিয়ে থাকি। আমার খুব কষ্ট হয়। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দেন।’ এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিল এক শিশু। এমন কথা উঠে এসেছে সেখানে আসা অন্য শিশুদের কাছ থেকেও। আবার কেউ মিনতি করেছেন বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে ফিরিতে দিতে।
আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে খুন, গুম ও অপহৃত হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা উঠে আসে।
গুম হওয়া আবদুল কাদির মাসুমের মা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আমার ছেলে স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি স্কলারশিপ পেয়ে পড়াশোনা করেছে। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র বলে তার পড়াশোনার চিন্তা আমার ছিল না। প্রশাসনে কাজ করে দেশ এবং দেশের মানুষের সেবা করা ছিল তার উদ্দেশ্য। কিন্তু কেন তাকে অপহরণ করা হয়েছে? কি অপরাধে তাকে গুম করা হয়েছে তা আজও আমার অজানা। সে কোনো রাজনীতিক দলের সাথেও সম্পৃক্ত ছিল না। তাহলে কেন আমার বুক থেকে আমার মানিককে নিয়ে যাওয়া হয়েছে?’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিনতি করেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনিও একজন মা। আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ে যেমন অনেক স্বপ্ন দেখেন, আমিও আমার সন্তানকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। দয়া করে আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন।’
কুষ্টিয়া থেকে আসা জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া বলেন, ‘ছয় বছর ধরে গুম হওয়া স্বামীর কথা বলে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরখাস্ত দিয়ে আসতেছি। র্যাব ব্যাটেলিয়ান ১, ২, ৩সহ প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরেছি কিন্তু আমার স্বামীর কোনো সন্ধান দিতে পারেনি কেউ। আমার সন্তানদের ১২টি ঈদ কেটেছে তাদের বাবাকে ছাড়াই। এখন তারা বলে, মা আমাদের কথা কেউ শুনে না, কেউ আমাদের কথা শুনবে না। এরপরও তারা অপেক্ষায় আছে একদিন তাদের বাবা ফিরে আসবে, তাদের আদর করবে, একসাথে ঈদ করবে।’ তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান যেন তার স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়া হয়।
খুন হওয়া ইসমাইল হোসেনের মা শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের লাশ নদীতে পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু প্রথমে তাকে অপহরণ করা হয়। অপহরণ হওয়ার পর থেকে প্রশাসনের ধারে ধারে ঘুরেছি কিন্তু কেউ আমার ছেলের খোঁজ করেনি।’
এভাবেই একের পর এক গুম-খুন হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনের আহাজারি আর কান্নায় ভারি হতে থাকে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ।
গুম থেকে ফিরে এসেও যেন আতঙ্ক থেকে বের হতে পারছে না মেহেদী হাসান। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে গুম হওয়ার ছয় মাস পর নিজের বাসায় ফিরে এলেও আতঙ্ক এবং ভয় কাটেনি এখনো। নিজের কথা এভাবেই জানালেন তিনি।