মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠার বহুমুখী প্রচারণা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার: বিএনপি

0

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সরকার মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠার বহুমুখী প্রচারণা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটি মনে করে, আওয়ামী লীগ প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে ভয় পায়। আর এ কারণেই সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে তারা।

গতকাল বুধবার (১৮ আগস্ট) বিকাল থেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির সিনিয়র নেতারা এসব অভিযোগ করেন। দলটির উদ্যোগে ‘ইতিহাস কথা কয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সম্পর্কে মিথ্যা কথা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ, জিয়াউর রহমান সাহেব শুধু স্বাধীনতার ঘোষণাই দেননি, তিনি পরবর্তীকালে যখন দায়িত্ব পেয়েছেন, তার কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এই দেশের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তিনি চির ভাস্বর হয়ে আছেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, সরকার প্রতিহিংসায় মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস প্রতিষ্ঠার বহুমুখী প্রচারণা চালাচ্ছে। আজকে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, মিথ্যা মামলার শিকারে পরিণত করা হচ্ছে। আর এই যে আক্রমণ এই আক্রমণের পাল্টা জবাব হিসেবে সত্য জানার অধিকার ও প্রকৃত ইতিহাস চর্চার সংস্কৃতিকে গোটা জাতি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমাদেরকে জীবন্ত রাখতে হবে।’

তিনি জানান, সেই লক্ষ্যেই বিএনপি সরকারের ইতিহাস বিকৃতির লাগাতার সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ‘ইতিহাস কথা কয়’ এই শিরোনামে বিএনপি সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে সম্পৃক্ত করতে চায়। যতদিন বিকৃতির অপতৎপরতা চলবে ততদিনই এই লড়াইয়ে চলবে।

পঁচাত্তরের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেওয়া বক্তব্যকে ‘মিথ্যা ও ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিমূলক অপপ্রচার’ বলে নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রায়কেও অবশ্যই প্রশ্নিবিদ্ধ করছে। ওই বিচার প্রক্রিয়ার পর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ‘পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজ চাপ্টার’কে পুনরায় বিতর্কের বিষয় হিসেবে তুলে এনে আইনমন্ত্রী জ্ঞানপাপীর পরিচয় দিচ্ছেন। তার এই ধরনের বক্তব্য থেকে প্রশ্ন জাগে ওই বিচার প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণভাবে জড়িত থেকে আওয়ামী লীগের ভাষায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার পর এই ধরনের বক্তব্য কেন দিচ্ছে? এই ধরনের বক্তব্য কি ক্রিমিনাল এক্সিকিউশনের পর্যায়ে পড়ে না।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে আওয়ামী লীগ ভয় পায়। বাংলাদশের মৌলিক প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের উন্নয়ন, দেশকে স্বনির্ভর করা, দেশকে সন্মানজনক অবস্থানে নেওয়া, মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য দেশকে প্রস্তুত করা, এসব কারা করেছে? সবগুলোতেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সফলতা। সেজন্যই তারা সত্য ইতিহাসকে ধামাচাপা দেবার জন্য, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য, এই প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইতিহাসকে বিকৃতি করছে।’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই শাসকগোষ্ঠী ১৯৭১ সালের মহান শোর্য-বীর্জের ইতিহাসকে ভুলিয়ে দেবার জন্য চেষ্টা করছে। সর্বশেষে তারা শুরু করেছে যে, জিয়াউর রহমান মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তারা ভেবেছে যে, ৫০ বছরের কাছাকাছি গত হয়েছে। সুতরাং, এখন এই ধরনের মিথ্যাকে সত্য করার সময় এসে গেছে। মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে গোয়েবেলসীয় কায়দায় জিয়াকে একটা হত্যাকারী ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে জনগণের সামনে প্রতিপাদ্য করার জন্যে তারা এই উদ্যোগ তারা নিয়েছে।’

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘জিয়া সম্পর্কে ক্ষমতাসীন দলটি প্রথম থেকেই হীনমন্যতায় ভোগে এবং তার অবদানকে কোনোভাবে তারা সহ্য করতে পারে না। প্রায় ৪৯ বছর পর স্মৃতিচারণ করে বুঝতে পারি, সেই আমল থেকে রাজনৈতিক সরকার শহীদ জিয়াকে উপযুক্ত মূল্যায়ন না করে অপদস্ত করতে চেয়েছিল। কিন্তু শহীদ জিয়া দেশপ্রেমের উদাহরণ সৃষ্টি করে এবং বাংলাদেশে পুনর্গঠনে অবদান রাখার স্বার্থে চাকরি অব্যাহত রাখেন।’

প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com