অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে নামাতে ‘ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান বিএনপি’র

0

নিজেদের ভেতরে দলাদলি ও কোন্দল বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নামার শক্তি সঞ্চয় করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বর্তমান ভোট ডাকাত, অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতার মসনদ থেকে নামাতে ‘রাজপথ ছাড়া কোনও বিকল্প নেই’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সোমবার (৯ আগস্ট) এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা তরুণ আছেন, যুবক আছেন তাদেরকে সামনে এগিয়ে আসতে হবে। সাহস নিয়ে রাজপথে আসতে হবে। রাজপথ ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। সেই রাজপথে আসার জন্য শক্তি সঞ্চয় করে আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে।’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘নিজের মধ্যে দলাদলিটা একেবারে বন্ধ করুন, নিজেদের মধ্যে কোন্দলটা বন্ধ করতে হবে। ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে। ঐক্য ছাড়া কোনও উপায় নেই। আমাদের সকলকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে যেতে হবে। আমাদের বাম-ডান, দক্ষিণ-পশ্চিম সকলকে একসাথে করতে হবে এবং সকলকে একসাথে করেই এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুধুমাত্র আমলা নির্ভরতার কারণেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। বর্তমান সরকার জনগণের জীবন-জীবিকাকে সত্যিকার অর্থেই বিপন্ন করে ফেলেছে। আমরা প্রথম থেকে সরকারকে সর্তক করেছিলাম যে, একটা জাতীয় কনভেনশন করে অথবা সমস্ত রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ, সকল সামাজিক সংগঠন-এনজিওর সমন্বয়ে একটা কমিটি গঠন করা হোক। প্রত্যেকটি লেভেলে যাতে করে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এই সংক্রমণকে মোকাবিলা করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, এই সরকার এটাকে কর্ণপাতই করেনি। তারা শুধুমাত্র আমলাদের ওপর নির্ভর করে করোনা পরিস্থিতিকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখানে সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনা, একেবারে দলীয় সংকীর্ণতা, দলীয়করণ এবং দুর্নীতি আজকে সমস্ত ব্যবস্থাটাকে গ্রাস করে ফেলেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারের নীতি হচ্ছে যে- ‘তোমরা যে যা বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই’। অর্থাৎ তাদের টাকা চাই। সরকার একদিকে যেমন করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে, আরেকদিকে তারা মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা দিতেও ব্যর্থ হয়েছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের প্রয়াত সদস্য ফজলুর রহমান পটলের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে তার পরিবার। এই আলোচনা সভার পর প্রয়াত নেতার সহধর্মিনী কামরুন্নাহার শিরিনসহ তার সন্তানদের তত্ত্বাবধায়নে নাটোরের লালপুর- বাগাতিপাড়ায় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।

‘লকডাউনের নামে তামাশা চলছে’ দাবি করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার লকডাউন দেয়। কীসের লকডাউন কেউ বুঝতে পারি না আমরা? কখনো বলে লকডাউন, কখনো বলে সরকারি ছুটি, কখনো বলে কঠোর লকডাউন, কখনো বলে আরও কঠোর লকডাউন। এই যে একটা অবস্থা তৈরি করেছে- এটা পুরোপুরি ‘তামাশা’। তাদের কাছে মানুষের জীবন-জীবিকা একটা তামাশা।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ এগুলো কখনো মেনে নিতে পারে না। যদিও একটা ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্য দিয়ে, ফ্যাসিবাদী শাসনের মধ্য দিয়ে জনগণকে দমন করে রাখা হচ্ছে। তারপরেও জনগণ একদিন জেগে উঠবেই। আমরা বিশ্বাস করি, ফজলুর রহমান পটল সাহেবের যে আদর্শ, যে সাহস ছিলো সেই নিয়ে আমরা সবাই যদি কাজ করি তাহলে অবশ্যই এই দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করতে পারবো।এখন এটা দায়িত্ব হয়ে পড়েছে আমাদের যে, বর্তমান আওয়ামী লীগ পরাজিত করতে হবে মানুষকে বাঁচনোর জন্য, দেশকে বাঁচানোর জন্য, দেশের স্বাধীনতার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য।’

‘জাতীয় প্রবৃদ্ধি কমছে’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। শুধুমাত্র লুটপাট করা ছাড়া আর কোনও কিছুই তারা করেনি। আজকে আমরা পরিষ্কারভাবে দেখতে পারছি যে, জাতীয় প্রবৃদ্ধি-জিডিপি ক্রমশই নেমে গেছে। সরকার মিথ্যা কথা বলছে। তারা জোর করে জিডিপি বেশি দেখাতে চায়। অথচ প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে, যেখানে জিডিপি কমছে, ব্যবসা-বাণিজ্য কমছে, আমদানি কমছে, উৎপাদন কমছে- সেদিকে তাদের কোনও লক্ষ্যই নেই।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে প্রায় ২ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। আজকে যারা দিন আনে দিন খায় মানুষ, রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, ক্ষেতমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক যেসব প্রতিষ্ঠান আছে, হকার, ছোট ছোট দোকান যারা করেন তারা সম্পূর্ণভাবে বেকার হয়ে পড়েছে। যার ফলে এই মানুষগুলো না খেয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com