জিয়া-খালেদা-তারেকের নামে ‘অপপ্রচারে লিপ্ত’ আ.লীগ সরকার: মির্জা ফখরুল
জিয়াউর রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে সরকার ‘নতুন গীত’ গাইছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জিয়াউর রহমান সম্পৃক্ত’- ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাদের এরকম বক্তব্যের জবাবে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া দেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এদের (আওয়ামী লীগ সরকার) কাজ কী? এদের কাজ হচ্ছে সারাক্ষণ বিএনপিকে দোষারোপ করা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেবকে কীভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা যায় তার চেষ্টা করা, কীভাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে খাটো করা যায় তার চেষ্টা করা, কীভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করাযায় সেই চেষ্টা করা। তারা তা–ই করছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অত্যন্ত সম্মানিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে আমরা কিন্তু প্রত্যেকবার আমাদের নেতা, আমাদের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পার্লামেন্টে নিন্দা জানিয়েছেন। আমরা কেউই কোনও হত্যাকাণ্ড সমর্থন করি না। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়েছে, বিচার করেছেন আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার)…। সেই বিচারকরার পরে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। অথচ আপনারা এখন শুরু করেছেন নতুন এক গীত। গীত গাইছেন, গান গাইছেন যে, জিয়াউর রহমান এটার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কোথাও প্রমাণ করতে পারেনি, কেউ না। আজ পর্যন্ত কেউ এই কথা বলে নাই যে, জিয়াউর রহমান সাহেব সম্পৃক্ত ছিলেন। জিয়াউর রহমান সাহেব তো তখন ডেপুটি চিফ মার্শাল এডমিনিস্টারও ছিলেন না। তিনি সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ছিলেন মাত্র।’
তিনি বলেন, ‘তখন সেনা প্রধান ছিলেন শফিউল্লাহ সাহেব (কেএম শফিউল্লাহ)। সেই শফিউল্লাহ সাহেব তো গিয়ে খন্দকার মোশতাকে স্যালুট করেছেন, একে খন্দকার সাহেব (বিমান বাহিনী প্রধান) স্যালুট করেছেন, নেভাল চিফ স্যালুট করেছেন।আপনাদের অনেকেই তো সেদিন শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে খন্দকার মুশতাক সাহেবের ৩১জনের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীত্বের শপথ নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড তো আপনারা ঘটিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ঘটিয়েছে। অন্য কেউ তার সাথে জড়িত ছিলো না।যারা করেছে তারা সামরিক বাহিনীর লোক ছিল। তাদের সঙ্গে আপনারা যুক্ত ছিলেন বলেই আপনারা করেছেন।’
ফখরুল বলেন, ‘সুতরাং শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করবেন না। নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য অন্যকে দোষারোপ করে লাভনেই। নিজেরা পরিষ্কার হউন, নিজেরা পরিচ্ছন্ন হউন, পরিশুদ্ধ হউন। হত্যার রাজনীতি বাদ দেন এবং সন্ত্রাসের রাজনীতি বাদদেন, জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করার রাজনীতি বাদ দেন। আপনারা সঠিকভাবে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা সেগুলোকে পূরণকরুন। ১৯৭২ সালের সংবিধান মতো কাজ করুন।’
ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আজকে কী করেছেন আপনারা? সমস্ত অধিকার খর্ব করে দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষের। যেন লিখতে না পারে সংবাদকর্মীরা, সেজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট করেছেন। এখন কথায় কথায়এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের লেলিয়ে দেন। তারা ধরে নিয়ে এসে বিভিন্ন রকমের অত্যাচার–নিপীড়ন–নির্যাতন করে, মামলা দেয়।’
নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে আমাদের উত্তরণ ঘটাতে হবে। একদিকে আমরা জনগণের পাশে গিয়ে দাঁড়াবো, অন্যদিকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই দানব সরকারকে সরানোর জন্য আমাদের লড়াই করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা করোনার দানবকে পরাজিত করার চেষ্টা করব, একইসঙ্গে রাজনৈতিক যে দানব আমাদের সমস্ত আশা–আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, এই দানবকে সরিয়ে সত্যিকার অর্থেই জনগণের প্রতিনিধির সরকার প্রতিষ্ঠা করার আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করব। আমরা বিশ্বাস করি, যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা চেষ্টা করি অবশ্যই জয়ী হবে, জয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাল্লাহ।’
লালমনিরহাট বিএনপির উদ্যোগে জেলার কোভিড–১৯ হেল্প সেন্টারের উদ্বোধন এবং করোনা ভাইরাস সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদানে এ ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান হয়। জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বাবলার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম ও সহ–সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল খালেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।