মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়ে জঙ্গলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছেন নারীরা
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়ে জঙ্গলে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন নারীরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়ে জঙ্গলে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন নারীরা।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়ে গর্ভবতী নারীরা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হচ্ছেন।মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান সঙ্ঘাতের মধ্যে তাদেরকে এমন পরিস্থিতির মধ্যেপড়তে হচ্ছে। এদিকে তীব্র সঙ্ঘাতের কারণে মিয়ানমারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। বৃহস্পতিবার আল–জাজিরার একপ্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, সামরিক অভ্যুত্থানের পরমিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও গণতন্ত্রপন্থী বিদ্রোহীদের মধ্যেকার ক্রমবর্ধমান সঙ্ঘাতের কারণে দেশটির অনেক রাজ্যের গর্ভবতীনারীরা জঙ্গলে আশ্রয় নিয়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। মিয়ানমারের যুদ্ধকবলিত এসব রাজ্যের নারী ও পুরুষরাদেশটির সেনাবাহিনীর ভয়ে এখন পাহাড় ও বনাঞ্চলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এসব পলায়নপর মিয়ানমারের নাগরিকদের সাথে গর্ভবতী নারীরাও আছেন। কারণ, মিয়ানমারের যুদ্ধকবলিত এসব রাজ্যেরশহর ও গ্রামে ভারী যুদ্ধাস্ত্র যেমন, গ্রেনেড, আরপিজি, আর্টিলারি ও মেশিনগান দিয়ে হামলা করা হচ্ছে। অনেক সময় এসব দুর্গম এলাকা গুলোতেও আর্টিলারি হামলা হচ্ছে, বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্রের গুলি চলে আসছে। যেকোনো সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হওয়া ও গ্রেফতারের আতঙ্কও আছে। গর্ভবতী নারী ও শিশুরাও এমন যুদ্ধ–পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে আসা এসব গর্ভবতী নারীরা বনাঞ্চল ও পাহাড়ি এলাকায় বাঁশ আর ত্রিপলেরতৈরি জীর্ণ কুটিরের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন। তারা কোনো ভালো ডাক্তার ও নার্সের সাহায্য পাচ্ছেন না।অধিকাংশ ক্ষেত্রে ওই গর্ভবতী নারীরা অনভিজ্ঞ গ্রাম্য ধাত্রী ও নার্সের শরণাপন্ন হচ্ছেন। মিয়ানমারের গর্ভবতী নারীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী ও ওষুধের তীব্র অভাবে আছেন। এসব কারণে, গর্ভবতী নারী, সদ্য জন্মানো শিশু, প্রসূতি নারীরা মারেও যাচ্ছেন।
ওই রাজ্যগুলোতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সামগ্রী ও ওষুধ তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। কারণ, মিয়ানমারের সরকারি সেনারা গণতন্ত্র পন্থীবিদ্রোহী বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত রাজ্যগুলোতে খাদ্য, নিরাপদ পানি ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। তারা স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকও অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করছে। মিয়ানমারের শান, কারেন, কায়াহ, চিন ও অন্যান্য বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এলাকা গুলোতে এখন ভয়াবহ স্বাস্থ্য সঙ্কট রয়েছে।
মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘের শিশু বিষয়ক তহবিল ইউনিসেফের প্রতিনিধি আলেসান্দ্রা ডেনটিসে বলেন, সামরিক অভ্যুত্থানের পরঅধিকাংশ বাস্তুচ্যুত গর্ভবতী নারীরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না। এছাড়া শিশুরা টিকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে ছয় লাখ সদ্য জন্মানো শিশু অতি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা পাবেন না। এর মাধ্যমে এসব শিশুরজীবন শঙ্কার মধ্যে পড়বে। এটা মিয়ানমারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
মিয়ানমারের সরকারি সেনাবাহিনী কর্তৃক খাদ্য, নিরাপদ পানি ও ওষুধের সরবরাহ বন্ধ করার বিষয়ে মিয়ানমারে জাতিসঙ্ঘেরবিশেষ প্রতিনিধি বলেছেন, মিয়ানমারের বিপুল সংখ্যক ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে ক্ষুধা, রোগ ও নিরাপদ আশ্রয়ের অভাবে।
সূত্র : আল–জাজিরা