চীনের ‘অস্বাভাবিক ও উদ্ভট পদক্ষেপ’ পর্যবেক্ষণে রাখছে ভারত
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ‘অস্বাভাবিক ও উদ্ভট পদক্ষেপ’-এর প্রতি নিবিড় নজর রাখছে ভারত। শি জিনপিং ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের (ডব্লিউটিসি) কমান্ডারকে দায়িত্ব নেয়ার মাত্র সাত মাসের মধ্যে পরিবর্তন করেছেন। এই ডব্লিউটিসি ভারতের সঙ্গে পুরো সীমান্ত দেখাশোনা করে। ডব্লিউটিসির পদাতিক বাহিনীর কমান্ডার শু কিলিং’কে(৫৮) এখন পূর্ণাঙ্গ জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ডব্লিউটিসির প্রধান জেনারেল ঝাং সুডং’কে (৫৯) সরিয়ে তার পদে বসানো হয়েছে তাকে। গত বছর এপ্রিল–মে মাসের পর পূর্বাঞ্চলীয় লাদাখে অব্যাহত সামরিক মুখোমুখি অবস্থানের মধ্যে এই পরিবর্তন করা হয়েছে। এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে ডব্লিউটিসির প্রধান হিসেবে ৬৫ বছর বয়সে অবসরেযান জেনারেল ঝাও জোংকি। তারপর ডব্লিউটিসির প্রধান পদে দায়িত্ব দেয়া হয় ঝাং সুডং’কে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ভারতের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, চীনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) এই পদমর্যাদার কোনো ব্যক্তিকে মাত্র সাত মাসের মধ্যে কখনো সরিয়ে দেয়া হয়নি। এখন যা ঘটছে তা সুনির্দিষ্টভাবে অস্বাভাবিক। ভারতের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মুখোমুখি অবস্থানে যাওয়ার পর ডব্লিউটিসি’তে এটা হলো কার্যত তৃতীয় পরিবর্তন।
শু কিলিং বাদে পিএলএর সবাই তাকে একজন উদীয়মান তারকা এবং সবচেয়ে কম বয়সী একজন জেনারেল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সোমবার আরো তিনজনকে পদোন্নতি দেয়ার কথা রয়েছে। তারা হলেন সাউদার্ন থিয়েটার কমান্ডার প্রধান ওয়াংশিউবিন, পিএলএ আর্মি কমান্ডার লিউ ঝেনলি এবং পিএলএ স্ট্র্যাটেজিক সাপোর্ট (মিসাইল) ফোর্সের কমান্ডার জু কিয়ানশেং।
ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন, ডব্লিউটিসি’তে এই পরিবর্তন অপরিপক্বতা। ডব্লিউটিসি হলো ৫টি চীনা থিয়েটার কমান্ডের বৃহৎকমান্ড। তারা পূর্বাঞ্চলীয় লাদাখ থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পুরো ৩৪৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেয়। পক্ষান্তরে চীনের সঙ্গে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে কোনো একীভূত থিয়েটার কমান্ড নেই। আছে উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তে চারটি সেনা ও তিনটি বিমান বাহিনীর কমান্ড।
একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পর্যায়ক্রমিক দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে ঝাং সুডংকে সরিয়ে দিয়ে থাকতে পারে অথবা ভারতের সঙ্গে চীনের সীমান্ত নিয়ে যে সঙ্কট তার সঙ্গে যুক্ত কোন কারণে ঝাং সুডংকে সরিয়ে দেয়া হয়ে থাকতে পারে। তিনি আরো বলেছেন, আমাদেরকে এখন অপেক্ষা করতে হবে এবং পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৯ই এপ্রিল ভারত ও চীনের কোর কমান্ডার পর্যায়ে আলোচনা হয়। এর তিন মাস পরে আবার ১২তম বৈঠক হওয়ারকথা। সেই বৈঠককে সামনে রেখে ডব্লিউটিসি’তে পরিবর্তন এনেছে চীন। এর আগে শু কিলিংকে হাত ধরে দায়িত্বে আনেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তিনি দেশটির সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের (সিএমসি) শক্তিধর সভাপতিও। পিএলএ’কে নিয়ন্ত্রণ করেএই সিএমসি। শু কিলিং এখন ডব্লিউটিসির সার্বিক নেতৃত্বে থাকবেন। তার অধীনে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা নিরসনের আলোচনা অথবা উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে।