মোদী-যোগী দুরত্বে চিন্তায় বিজেপি
২০২২ সালের ১৪ মে উত্তরপ্রদেশে মেয়াদ শেষ হচ্ছে যোগী আদিত্য নাথের। অর্থাৎ আর ১১ মাস পরে উত্তরপ্রদেশে হতে চলেছে বিধানসভা ভোট।
কিন্তু রাজ্যটির নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে দুরত্ব বাড়তে শুরু করেছে।
সম্প্রতি গ্রাম্য (পঞ্চায়েত ভোটে) নির্বাচনে বিজেপি খারাপ ফল করার পরে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথকে দলের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে।
পাশাপাশি রাজ্যভার টালমাটাল নিয়ে একদিকে যোগীর আচরণে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির একাংশ ক্ষুব্ধ। অন্যদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগে নড়ে–চড়ে বসছেন মোদী–শাহ।
বার বার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের পাঠানো হচ্ছে লখনউয়ে। তবে, তাতে কিছুটা মচকালেও ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের।
এর সঙ্গে আবার উত্তর প্রদেশের আগামী মুখ্যমন্ত্রীর কে? এই প্রশ্ন নিয়ে মানসিক যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী। এইটা নাপড়েনের মধ্যে উত্তর প্রদেশের বিরোধী দলগুলি, এমন কি মমতা বন্দোপাধ্যায়ও হাত সেঁকতে শুরু করেছেন। বিরোধীদেরআশা, ২০২২ সালের বিধানসভা ভোটে আগেই দুর্বল হচ্ছে বিজেপি।
তবে, মমতার নাক গলানোর কারণ অন্য। তিনি ভালো করে জানেন, বাংলা আর হিন্দিবলয় এক নয়। তার নজর ২৪–এরলোকসভা নির্বাচন। বাংলায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর মোদী বিরোধী দলগুলো যথেষ্ট সমীহ করে চলছেন মমতাকে।পাশপাশি ভারতের নিরিখে উত্তর প্রদেশে সবচেয়ে বড় রাজ্য। ৭৫টি জেলা ১৮ বিভাগে বিভক্ত। আগ্রা থেকে শুরু করে বারাণসীসবই উত্তরপ্রদেশের অন্তর্গত। গ্রাম আছে লাখের বেশি। এর মধ্যে শুধুমাত্র মুসলিম সম্প্রদায় আছে ২০ শতাংশের বেশি। ফলেদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অনেকটাই নির্ণায়ক ভূমিকা রাখে রাজ্যটি। আর তাই মমতা যদি হিন্দি বলয়ের এই রাজ্যটির মন কিছুটাজয় করতে পারে। তাহলে অনেকটাই সিঁড়ি পেরোতে পারবেন। কারণ এবার তিনিও প্রধানমন্ত্রী অন্যতম দাবিদার।
একই খেলা শুরু হয়েছে কংগ্রেস। নির্বাচনে স্ট্র্যাটিজি কী হবে? তা নিয়ে জোর কদমে আলোচনা শুরু হয়েছে কংগ্রেসের অন্দরেই।রাজ্যটিতে কংগ্রেসের দায়িত্বে রয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তাই তাকে সামনে রেখে উত্তরপ্রদেশ কংগ্রেস একাই নির্বাচনে লড়বে নাকিমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিজেপি বিরোধী জোটের সঙ্গে হাত মিলাবে তাই নিয়ে দলে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেস ঠিক করেছে‘সেবা স্বরাজ’ নামে একটি বিশেষ কর্মসূচি চালাবে। সেবা দ্বারা মানুষের পাশে থেকে মন জয়ের চেষ্টা হবে। পরবর্তীতে জোর দেওয়াহবে সেই মন জয়, ভোট বাক্স রূপান্তরে। তারই লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের ৫৬ হাজার গ্রামকে টার্গেট করে ঝাপাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
কিন্তু, আদৌ কী এসব পরিকল্পনা কাজে দেবে মোদী বিরোধীদের? বা যোগীর ভবিষ্যতে কী হবে? অবশ্য তা বলার সময় এখনইআসেনি। তবে প্রকাশ্যে মোদী বনাম যোগীর যুদ্ধ বিভিন্নভাবে সামনে চলে আসছে।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রীমণ্ডল বাড়ানোর কথা বলে আসছিলেন মোদী, কিন্তু তা স্পষ্টতই না করে দিয়েছেন যোগী। আবারমোদী তার পছন্দের এক সাবেক আমলা অরবিন্দ কুমার শর্মাকে চাইলেও যোগীর আপত্তিতে রাজ্যের ডেপুটি সিএম (উপ–মুখ্যমন্ত্রী) করতে পারেননি। অবশ্য পরে তাকে উত্তরপ্রদেশে বিজেপির সহ সভাপতি করে পাঠানো হয়েছে।
রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, যোগীর কাজের ওপর মোদীর এখন আর ভরসা নেই। তাই তাকে লক্ষ্য রাখার জন্যই শর্মাকেপাঠানো হয়েছে।
তার মধ্যেই উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রী স্বামীপ্রসাদ মৌর্য সম্প্রতি বিস্ফোরক মন্তব্যে বলেছেন, ‘রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন? তাস্থির হবে বিধানসভা ভোটের পর। স্থির করবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বরা। ’ অর্থাৎ দল জিতলেও আগামী মুখ্যমন্ত্রী না হওয়ারসম্ভবনা যোগীর যে অনেকটাই বেশি, এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। ফলে তার এই মন্তব্য যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়েছেযোগী। অবশ্য পরে শর্মা সবাইকে বোঝাতে চাইছেন যে তিনি যোগীর অনুগত হয়ে এবং তার নেতৃত্বেই আগামী বিধান সভায়দলের হয়ে লড়বেন।
কিন্তু তাতেও যোগীর ওপর থেকে স্নায়ুর চাপ খুব একটা কমছে না। কারণ উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে স্ট্র্যাটিজি কি হবে তা নিয়ে ২৪ মেমোদী–শাহ–নাড্ডা–সহ উচ্চস্থানীয় নেতাদের বৈঠক হলেও ডাক পাননি স্বয়ং যোগী–ই। এমন কি ২০১৭ সালের পর থেকে প্রতিবছরমোদী টুইট করে যোগীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা বার্তা জানালেও এবছর কোনো টুইটও করেননি মোদী। আরও অনেকগুলো বিষয়নিয়ে মোদী–যোগীর যে দুরত্ব বাড়ছে তা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। আর তারই ফায়দা তুলতে চাইছেন বিরোধীরা।