ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হবে কাশ্মীরিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা: ইমরান খান
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক কারণের সম্ভাব্যতাকে উড়িয়ে দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেছেন, এমন উদ্যোগ নেয়া হলে তা হবে কাশ্মীরিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। রোববার সরাসরি সম্প্রচারে প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব মন্তব্য করেছেন ইমরান খান। তিনি সরাসরি বলেছেন, তার পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করা হলে তা হবে তাদের(কাশ্মীরি) সংগ্রামকে উপেক্ষা করা। কমপক্ষে এক লাখ কাশ্মীরি শহীদ হয়েছেন (তাদের এই লড়াইয়ে)। ইমরান খান বলেন, আমিক্ষমতায় আসার প্রথম দিন থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এবং কাশ্মীর সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু পাকিস্তান যদি এখন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে, তাহলে তা হবে কাশ্মীরি জনগণের সঙ্গেবিরাট এক বিশ্বাসঘাতকতা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
ইমরান খান আরো বলেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করলে বাণিজ্যে উন্নতি ঘটবে। কিন্তু তাতে তাদের(কাশ্মীরিদের) রক্ত বৃথা যাবে। তাতো হতে পারে না। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের বাণিজ্যের উন্নতি করবো এটাতো হতে পারে না। অন্য সব সময়ের মতো ইমরান খান আবারো জোর দিয়ে বলেন, ভারতশাসিত কাশ্মীরের দীর্ঘদিনের স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দিলেই কেবল নয়া দিল্লির সঙ্গে অচল অবস্থায় থাকা আলোচনা শুরু হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ই আগস্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে। এরফলে স্বায়ত্তশাসন হারায় কাশ্মীর। ফলে জম্মু–কাশ্মীরের যে অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তা সরাসরি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে চলে যায়। এরপর সরকার ওই অঞ্চলকে কেন্দ্রশাসিত দুটি অঞ্চলে ভাগ করে। সঙ্গে সঙ্গে ওই অঞ্চলে কার্যত ভারত লকডাউন করে ফেলে। হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে। আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করে।ইলেকট্রনিকসহ সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর ফলে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য স্থগিত করে ইসলামাবাদ। এমনকি নয়াদিল্লির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনমন করে।
এ অবস্থায় শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, পারমাণবিক শক্তিধর এই দুটি দেশের এমন পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, যে পদক্ষেপ নিলে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত ওই অঞ্চলের মর্যাদার অন্যথা হয়। উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে বৃটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত ও পাকিস্তান। তারপর থেকে তারা তিনটি যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এছাড়া এই দুটি দেশের মধ্যে সম্পর্ক মাঝে মাঝেই উত্তেজনা কর অবস্থায় পৌঁছে। যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও বার বার তারা বিরত হয়।উভয় দেশই কাশ্মীরের পুরোটাকে তাদের নিজেদের ভূখ– বলে দাবি করে। কিন্তু উভয় দেশই কাশ্মীরের অংশবিশেষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
এ বছর শুরুতে রিপোর্ট প্রকাশ হয় যে, এই দুটি দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতে বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। জানুয়ারিতে এই বৈঠকে আমিরাত মধ্যস্থতা করছিল বলে বলা হয়। গত মাসে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ইউসেফ আল ওতাইবা নিশ্চিত করেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি সুস্থ ও কার্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যমধ্যস্থতা হিসেবে তার দেশ কাজ করছে। ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আকস্মিকভাবে এবং বিরল এক ঘোষণাদেয়। তাতে বলা হয়, নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতির চুক্তি মেনে চলবে তারা। আমিরাতের ঘোষণা এবংমিডিয়ার রিপোর্টের পর এমন ঘোষণায় সবাই আশা করেছিলেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কে যে বরফ জমে আছে তা হয়তো গলতে শুরু করেছে। তার সঙ্গে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কমর জাভেদ বাজওয়া দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশকে অতীতের সবকিছুকে কবর দিয়ে সহযোগিতার ভিত্তিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এতে আরো আশা জেগে ওঠে। অন্যদিকে গতমাসে ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদি চিঠি বিনিময় করেছেন। এতে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ এবং আন্তরিক সম্পর্কের আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু ইমরান খানের ওই বক্তব্য শেষ পর্যন্ত কি বার্তা দিচ্ছে! তিনি দৃশ্যত কাশ্মীর সমস্যাকে সামনে নিয়ে এসেছেন। বার বার যেমন তিনি বলেছেন, সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে। এবারও সেটাই বোঝালেন।