শাওয়াল মাসের ৬ রোজার জরুরি ৯ প্রশ্নোত্তর

0

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাওয়াল মাসে ৬টি নফল রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। শাওয়াল মাসের রোজা প্রসঙ্গে অনেকেরই বিশেষ ৯টি প্রশ্ন আছে। যেগুলোর উত্তর অনেকেই জানেন না। তাদের জন্য প্রশ্ন গুলোর উত্তর তুলে ধরা হলো

. শাওয়াল মাসে ৬টি নফল রোজা রাখালে কী উপকার হবে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে (পুরোশাওয়াল মাসের মধ্যে যে কোনো সময়) ৬টি রোজা রাখল; ওই ব্যক্তি সারা বছর রোজা রাখার সমান সাওয়াব পাবে।’ (মুসলিম)

কেন সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাবে?

ইমাম নববি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি শাওয়ালের রোজার ফজিলত সম্পর্কে বলেছেন, রমজান মাস ২৯/৩০ হয়ে থাকে। যদি ৩০ধরা হয় আর শাওয়ালের রোজা ধরা হয় তবে রোজা হয় ৩৬টি। আর আল্লাহ তাআলার ঘোষণা

যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে ১০গুণ বাড়িয়ে দেন।

সে হিসেবে ৩৬টি রোজায় ১০ গুণ সাওয়াব পেলে ফলাফল হয় ৩৬০ দিন তথা পুরো বছর রোজা রাখার সাওয়াব। আর এভাবেই সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পায় রমজানের রোজা রাখার পর শাওয়ালের রোজা পালনকারী রোজাদার।

. শাওয়ালের রোজা কি রমজানের রোজা কবুল হওয়ার প্রমাণ?

রমজানের রোজা কবুল হওয়ার একটি আলামত হলোরমজানের রোজা পালনকারী ব্যক্তির শাওয়ালের রোজা রাখা। যদি কারোরমজানের রোজা কবুল হয় তবে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দাকে শাওয়ালের রোজা রাখার তাওফিক দান করেন।

কারণ কোনো আমল কবুল হয়েছে কিনা তার আলামত হচ্ছেআগের নেক আমলের ধারা পরবর্তীতে ধরে রাখা। যেমনি ভাবে রমজানের রোজা পালনকারী রমজান পরবর্তী শাওয়াল মাসে আবারও রোজা পালনে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। আর তা হয়ে থাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে।

. শাওয়ালের রোজা কি একটানা রাখতে হবে?

শাওয়ালের রোজা কি এক টানা রাখতে হবে নাকি ভেঙে ভেঙে রাখা যাবে। এর সঙ্গে রোজা হওয়ানা হওয়ার বিষয় জড়িত আছে কিনা। এর উত্তর হলো

শাওয়ালের ৬টি রোজা একটানা না রেখে ভেঙে ভেঙে রাখলেও আদায় হয়ে যাবে। কেউ যদি একটানা রোজা রাখে তাতেও আদায় হয়ে যাবে।

কারণ হাদিসের কোনো বর্ণনায় শাওয়ালের রোজা একসঙ্গে রাখার ব্যাপারে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি।

. শাওয়ালের রোজা রাখার সহজ উপায় কী?

সাপ্তাহিক মাসিক (আইয়্যামে বিজ) রোজার সঙ্গে মিল রেখে সহজেই শাওয়ালের রোজা গুলো রাখা যায়। আর এতে বেশি কষ্টওহয় না।

কারণ সপ্তাহের সোমবার বৃহস্পতিবার রোজা রাখলেই পুরো মাসে সহজে ৬টি রোজা রাখা সহজ হয়ে যায়।

আবার আইয়্যামে বিজের ৩টি রোজা এক সঙ্গে রেখে অন্য সময়ে ৩টি রোজা রাখার মাধ্যমেও রোজা রাখা যায়। তবে কেউ যদিএকটানা ৬টি রোজা রাখে তাতেও কোনো সমস্যা নেই।

. শাওয়ালের রোজার নিয়ত কখন করতে হবে?

শাওয়ালের রোজার নিয়ত সন্ধ্যায় কিংবা রাতেই করতে হবে। পরের দিন সূর্য ওঠার পর করলে হবে না।

পবিত্র রমজান মাসে ভোর রাতে ওঠার একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। সে সময় সাহরি খেয়ে রমজানের রোজা পালনকারীরা রোজার নিয়ত করে থাকেন।

শাওয়ালের রোজার ক্ষেত্রে কারো যদি ঘুম থেকে ওঠার পর স্মরণ হয় বা মনে করে যে, রাতে তো খাবার খাওয়া হয় নাই; সুতরাং শাওয়ালের রোজার নিয়ত করে ফেলি। তবে কি রোজা হবে?

না’, এমনটি করলে রোজা হবে না। কারণ শাওয়ালের রোজাসহ নফল রোজা রাখার ক্ষেত্রে নিয়ত করতে হবে রাত থেকে।কেউ যদি সন্ধ্যা রাতে নিয়ত করে ফেলে যে, আমি আগামীকাল রোজা রাখবো আর দিনের বেলা রোজা পালন করে তবে ওই ব্যক্তির রোজা হয়ে যাবে।

কিন্তু সন্ধ্যা বা রাতে নিয়ত না করে সূর্য ওঠার পর ঘুম থেকে ওঠে রোজার নিয়ত করলে রোজা হবে না।

. রমজানের কাজা বা ভাঙতি রোজা থাকলে আগে কোন রোজা রাখতে হবে?

হ্যাঁ, অবশ্যই আগে রমজানের ভাঙতি/কাজা রোজা রাখতে হবে। তারপর শাওয়ালের রোজা রাখবে। কারণ শাওয়ালের রোজার সাওয়াব ঘোষিত হয়েছে তাদের জন্য যারা রমজানের রোজা পূর্ণ করেছে। কেননা হাদিসে এমনই নির্দেশনা শর্ত দেওয়া হয়েছে।

আর রমজানের রোজা পালনকারী ব্যক্তি শাওয়ালের রাখলেই কেবল ৩৬ দিন পূর্ণ হবে। আর তা ৩৬০ দিনের সাওয়াব হিসেবে পরিগণিত হবে।

সুতরাং যদি কারো অসুস্থতা বা সফরের কারণে ভাঙতি রোজা থাকে। আর মাবোনদের নিয়মিত অসুস্থতার কারণে ভাঙতি রোজা থাকে তবে তা আগে আদায় করতে হবে। তারপর শাওয়ালের রোজা রাখতে হবে।

. সাপ্তাহিক আইয়্যামে বিজের রোজার পালনের সময় শাওয়ালের রোজার নিয়ত করলে হবে কি?

সাপ্তাহিক সোম বৃহস্পতিবার এবং আইয়্যামে বিজ তথা চন্দ্র মাসের ১৩১৪১৫ তারিখ রোজা রাখা সুন্নাত। এখন কেউ যদি রোজা গুলো রাখার সময় শাওয়ালের রোজার নিয়ত করে তবে শাওয়ালের রোজা আদায় হবে কি?

হ্যাঁ, সাপ্তাহিক মাসিক (চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) রোজা রাখার সময় কেউ যদি শাওয়ালের রাখার নিয়ত করে তবেতার শাওয়ালের রোজা আদায় হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ। তবে যে কোনো একটির নিয়ত করতে হবে। হয় সাপ্তাহিক/মাসিক রোজার নিয়ত নতুবা শাওয়ালের রোজার।

. শাওয়াল মাসে রোজা না রেখে পরের কোনো সময় রোজা রাখলে হাদিসে ঘোষিত সাওয়াব পাওয়া যাবে কি?

না’, শাওয়াল মাস চলে যাওয়ার পর (অন্য মাসে) রোজা (কাজা) রাখলে হাদিসে ঘোষিত রোজায় সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়া যাবে না। কারণ ৬টি রোজা রমজানের রোজা পালনকারীর জন্য শাওয়াল মাসের মধ্যে রাখার শর্ত দেওয়া হয়েছে। যারা শর্ত পূরণ করতে পারবে, তারাই বছর জুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব পাবে। সাওয়াব শাওয়াল মাসে রোজা রাখারসঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

. শাওয়াল মাসের রোজা রাখার জন্য তারাবিহ নামাজ পড়তে হবে কি?

না’, শাওয়াল মাসের রোজার জন্য তারাবিহ নামাজ পড়তে হবে না। রমজান মাসের রোজা রাখার সময় রাতে যেভাবে তারাবিহ আদায় করা হয়, সেভাবে শাওয়াল মাসের রোজার জন্য তারাবিহ পড়া লাগবে না।

সুতরাং রমজানের সব রোজা পালনকারী মুমিন মুসলমানের উচিত বছর জুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব পেতে শাওয়াল মাসে ৬টি রোজা একটানা কিংবা থেমে থেমে আদায় করা। আর তাতেই মিলবে বছর জুড়ে রোজা রাখার সাওয়াব।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শাওয়ালের রোজা যথাযথ ভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। সারা বছর রোজা রাখার সাওয়াব পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com