রমজানের শেষ দশ দিনের আমল, তাৎপর্য ও বিধান। হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। 

0

হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী: হযরত মোহাম্মদ সঃ রমজান মাসের শেষ দশ দিন যে ভাবে কাঠাতেন। পবিত্র মাহে রমজান।

মাস হলো মুসলিমদের সৌভাগ্যের মাস। এতে রয়েছে তাদের মুক্তি, রয়েছে রহমত প্রাপ্তি, সর্বোপরি জাহান্নাম থেকে বাচারগ্যারান্টি। রমজান মাস পুরোটাই ফজিলতে ভরপুর, তবে ইহার শেষ দশকের ফজিলতটা অনেক বেশি। কারণ তাতে রয়েছে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ফজিলতপূর্ণ একটি রজনী এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য বিশেষ আমল। নিম্নে বিষয়ে কিছু আলোকপাত করা হলো:

. রমজানের শেষ দশকে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে রাতে ঈমান ই হতিসাবের সাথে ইবাদতবন্দেগী করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :

নিশ্চয় আমি এটি (কুরআন) নাযিল করেছিলাইলাতুল কদরে।তোমাকে কিসে জানাবেলাইলাতুল কদরকী? ‘লাইলাতুলকদরহাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। [সূরা কদর : ]

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলা রাতকে সকল রাত্রের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি তার কালামে রাতকে প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর কালাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন : ‘নিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। সে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, [সূরা আদদুখান : ]

বরকতময় রজনী হল, ‘লাইলাতুল কদরআল্লাহ তাআলা একে বরকতময় বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, রাতে রয়েছে যেমন বরকত তেমনি কল্যাণ তাৎপর্য। বরকতের প্রধান কারণ হল :

() রাতে আলকুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।

() রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সিদ্ধান্ত লওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয় বাস্তবায়নের জন্য।

() রাতের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহ তাআলা রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণ সূরা (সূরা কদর) অবতীর্ণ করেছেন। যাকিয়ামত পর্যন্ত পঠিত হতে থাকবে।

() রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিরাশি (৮৩) বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।

() রজনীতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে।

() গুনাহ পাপ থেকে ক্ষমা লাভ।

এই রাতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: নবী করীম সা. বলেছেন, যে লাইলাতুল কদরে ঈমান ইহতিসাবের সাথে সালাত আদায় ইবাদতবন্দেগি করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [বুখারী মুসলিম]

লাইলাতুল কদরে করণীয়

লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হল বেশি করে দোয়া করা, জিকির আযকার করা, নামাজ পড়া, ইবাদতবন্দেগী করা। হযরত আয়েশা রা. নবী করীম সা. কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি ? তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, তুমি বলবে :

হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন। [তিরমিযী]

. হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশক আসলে রাসূলুল্লাহ সা. পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন।রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। [বুখারী মুসলিম]

রাসূলুল্লাহ সা. পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেনএর অর্থ হলো, তিনি দিন গুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন।

. নবী করীম সা. রাত গুলোতে বেশি সময় শ্রম দিতেন, যা অন্য কোন রাতে দেখা যেত না। যেমন হযরত আয়েশা রা. হতেবর্ণিত, তিনি রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহেরি গ্রহণ করতেন।[মুসলিম]

. দশ দিনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, রাসূল সা. দশ দিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ছাড়া তিনি মসজিদ থেকেবের হতেন না।

এতেকাফ পালন

এতেকাফের সংজ্ঞা

বিশেষ নিয়তে বিশেষ অবস্থায় আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের উদ্দেশ্যে মসজিদে অথবা নির্জন স্থানে (মেয়েদের জন্য) অবস্থান করাকে এতেকাফ বলে।

এতেকাফ কেন করা হয়?

রমজানের শেষ দশ দিন মসজিদে এতেকাফ করা অনেক বড় ইবাদত। হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবী করীম সা. রমজানের শেষদশ দিন এতেকাফ করতেন। [বুখারী মুসলিম]

তাই আল্লাহ তাআলা যেন আমাদেরকে তাওফিক দান করেন রাসূল সা. –এর এই মূল্যবান সুন্নাত থেকে উপকার লাভ করার।মসজিদ হল আল্লাহর ঘর, আর মালিকের ঘরে তাঁরই কাছে সওয়ালকারী হিসেবে বসে যাওয়া এটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের ব্যাপার।

এতেকাফের ফজিলত

এতেকাফ একটি মহান ইবাদত, মদিনায় অবস্থানকালীন সময়ে রাসূলুল্লাহ সা. প্রতি বছরই এতেকাফ পালন করেছেন। দাওয়াত, তাযকিয়া, জিহাদ শিক্ষার কাজে ব্যস্ত থাকা সত্ত্বে প্রতি রমজানে তিনি এতেকাফ করতেন। এতেকাফ আত্মশুদ্ধি ঈমানিতরবিয়তের একটি শিক্ষালয় যা রাসূলুল্লাহ সা.-এর হিদায়াতী আলোর মূর্ত প্রতীক। এতেকাফরত অবস্থায় বান্দা নিজেকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য দুনিয়ার অন্যান্য সকল বিষয় থেকে আলাদা করে নেয়। ঐকান্তিক ভাবে মশগুল হয়ে পড়ে আল্লাহর নেকট্য অর্জনের নিরন্তর সাধানায়। এতেকাফ ঈমান বৃদ্ধির একটি মুখ্য সুযোগ। সকলের উচিত সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের ঈমানি চেতনাকে শাণিত করে তোলা উন্নততর পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করা।

পবিত্র কুরআনে করীমে বিভিন্নভাবে এতেকাফ সম্পর্কে বলা হয়েছে, হযরত ইবরাহীম ইসমাঈল . –এর কথা উল্লেখ করে ইরশাদ হয়েছে

এবং আমি ইবরাহীম ইসমাঈলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, এতেকাফকারী রুকুসেজদা কারীদের জন্য পবিত্র করো। [সূরা বাকারা : ১২৫]

এতেকাফ অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে কি আচরণ করতে হবে তা বলতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন

আর তোমরা মসজিদে এতেকাফ কালে স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করো না।’ [সূরা বাকারা : ১৮৭]

রাসূল সা. –এর অসংখ্য হাদিসে এতেকাফ সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে

ফজিলত সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিচে উল্লেখ করা হল:

আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. রমজানের শেষের দশকে এতেকাফ করেছেন, ইন্তেকাল পর্যন্ত। এরপরতাঁর স্ত্রীগণ এতেকাফ করেছেন। [বুখারী মুসলিম]

য়শা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. প্রত্যেক রমজানে এতেকাফ করতেন। [বুখারী, হা. ২০৪১]

অন্য এক হাদিসে আছে :

নবী করীম সা. ইরশাদ করেন: ‘আমি (প্রথমে) রাতের (লাইলাতুল কদর) সন্ধানে প্রথম দশকে এতেকাফ পালন করি।অতঃপর এতেকাফ পালন করি মাঝের দশকে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, রাত শেষ দশকে রয়েছে।সুতরাং তোমাদের মাঝে যে ( দশকে) এতেকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে এতেকাফ পালনকরল। রাসূল সা. বলেন, আমাকে তা (লাইলাতুল কদর) এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সেভোরে কাদা মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অতঃপর রাসূল সা. একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ চেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল নাকের পাশেছিল পানি কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত।’ [মুসনাদে আহমদ, আবু দাউদ : হা. ১১৭৪, মুসলিম]

হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত হাদিসে উভয়টির (দশ দিন, বিশ দিন) উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বলেন,

রাসূলুল্লাহ সা. প্রতি রমজানে দশ দিন এতেকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি পরলোকগত হন সে বছর তিনি বিশ দিন এতেকাফে কাটান। [সহীহ বুখারী]

হযরত আয়েশা রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. –এর সাথে তাঁর জনৈকা স্ত্রী এতেকাফ করলেন। তখন তিনি ছিলেন এস্তেহাজাঅবস্থায়। রক্ত দেখছেন। রক্তের কারণে কখনো তাঁর নীচে গামলা রাখা হতো। [বুখারী]

রাসূল সা. বলেন, আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশ দিন এতেকাফ করলাম। এরপর এতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশদিন। অতঃপর ওহি প্রেরণ করে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশদিন। সুতরাং যে এতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেনএতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তাঁর সাথে এতেকাফ যাপন করল। [মুসলিম]

এতেকাফের উপকারিতা

. এতেকাফকারী এক নামাজের পর আর এক নামাজের জন্য অপেক্ষা করে থাকে, আর অপেক্ষার অনেক ফজিলত রয়েছে।আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সা. বলেছেন,

নিশ্চয় ফেরেশতারা তোমাদের একজনের জন্য দোয়া করতে থাকেন যতক্ষণ সে কথা না বলে, নামাজের স্থানে অবস্থান করে।তারা বলতে থাকে– ‘ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন। আল্লাহ তার প্রতি দয়া করুন, যতক্ষণ তোমাদের কেউ নামাজের স্থানে থাকবে, নামাজ তাকে আটকিয়ে রাখবে, তার পরিবারের নিকট যেতে নামাজ ছাড়া আর কিছু বিরত রাখবে না, ফেরেশতারাতার জন্য এভাবে দোয়া করতে থাকবে। [বুখারী মুসলিম]

. এতেকাফকারী কদরের রাতের তালাশে থাকে, যে রাত অনির্দিষ্টভাবে রমজানের যে কোন রাত হতে পারে। এই রহস্যের কারণে আল্লাহ তাআলা সেটিকে বান্দাদের থেকে গোপন রেখেছেন, যেন তারা মাস জুড়ে তাকে তালাশ করতে থাকে।

. এতেকাফের ফলে আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়, এবং আল্লাহ তাআলার জন্য মস্তক অবনত করার প্রকৃত চিত্রফুটে উঠে। কেননা আল্লাহ তা বলেন

আমি মানুষ এবং জিন জাতিকে একমাত্র আমারই এবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। [সূরা আজজারিয়াত : ৫৬]

আর এবাদতের বিবিধ প্রতিফলন ঘটে এতেকাফ অবস্থায়। কেননা এতেকাফ অবস্থায একজন মানুষ নিজেকে পুরোপুরি আল্লাহর ইবাদতের সীমানায় বেঁেধ নেয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনায় ব্যাকুল হয়ে পড়ে। আল্লাহ তাআলাও তাঁর বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না, বরং তিনি বান্দাদেরকে নিরাশ হতে নিষেধ করে দিয়ে বলেছেন

‘(হে নবী আপনি) বলুন, আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। [সুরা ঝুমার : ৫৩]

অন্যত্র ইরশাদ করেন

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা কবুল করি যখন সে প্রার্থনা করে। কাজেই তারা যেন আমার হুকুম মান্য করে এবং আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে। সম্ভবত তারাপথ প্রাপ্ত হবে। [আলবাকারা : ১৮৬]

. যখন কেউ মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ করতে লাগে, যা সম্ভব প্রবৃত্তিকে অভ্যস্ত করানোর মাধ্যমে। কেননা প্রবৃত্তিকে যে বিষয়ে অভ্যস্ত করানো হবে সে বিষয়েই সে অভ্যস্ত হয়ে পড়বে। মসজিদে অবস্থান করা পছন্দ হতে শুরু করলে মসজিদকে সে ভালোবাসবে, সেখানে নামাজ আদায়কে ভালোবাসবে। আর প্রক্রিয়ায় আল্লাহর সাথে তার সম্পর্ক মজবুত হবে। হৃদয়ে সৃষ্টিহবে নামাজের ভালোবাসা, এবং নামাজ আদায়ের মাধ্যমেই অনুভব করতে শুরু করবে হৃদয়ের প্রশান্তি। যে প্রশান্তির কথারাসূলুল্লাহ সা. এভাবে বলেছিলেন :

হে বেলাল! নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং এর মাধ্যমে আমাদেরকে শান্ত করো। [সহীহ আবু দাউ : ৪৯৮৫]

. মসজিদে এতেকাফের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহ তাআলার উদ্দেশ্যে নিজেকে আবদ্ধ করে নেওয়ার কারণে মুসলমানদের অন্তরের কঠোরতা দূরীভূত হয়, কেননা কঠোরতা সৃষ্টি হয় দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা পার্থিবতায় নিজেকে আরোপিত করেরাখার কারণে। মসজিদে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কারনে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসায় ছেদ পড়ে এবং আত্মিক উন্নতির অভিজ্ঞতা অনুভূত হয়। মসজিদে এতেকাফ করার কারণে ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকে, ফলে এতেকাফকারী ব্যক্তির আত্মানিম্নাবস্থার নাগপাশ কাটিয়ে ফেরেশতাদের স্তরের দিকে ধাবিত হয়। ফেরেশতাদের পর্যায় থেকেও বরং উর্ধ্বে ওঠার প্রয়াস পায়।কেননা ফেরেশতাদের প্রবৃত্তি নেই বিধায় প্রবৃত্তির ফাঁদে তারা পড়ে না। আর মানুষের প্রবৃত্তি থাকা সত্বেও সব কিছু থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য একাগ্রচিত্ত হয়ে যায়।

. এতেকাফের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে।

. বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

. ঐকান্তিক ভাবে তওবা করার সুযোগ লাভ হয়।

. তাহাজ্জুদে অভ্যস্ত হওয়া যায়।

১০. সময়কে সুন্দর ভাবে কাজে লাগানো যায়।

১১. দিল নরম হয়।

১২. গুনাহ থেকে বাঁচার উপায় হয়।

এতেকাফের আহকাম

শরীয়তের দৃষ্টিতে এতেকাফ

এতেকাফ করা সুন্নাত। এতেকাফের সবচেয়ে উপযোগী সময় রমজানের শেষ দশক, এতেকাফ কুরআন, হাদিস এজমা দ্বারা প্রমাণিত।

ইমাম আহমদ রহ. বলেন, কোন মুসলমান এতেকাফকে সুন্নাত বলে স্বীকার করেনি এমনটি আমার জানা নেই।

এতেকাফের উদ্দেশ্য

. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করা

আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট হওয়া আল্লাহ কেন্দ্রিক ব্যতিব্যস্ততা যখন অন্তর সংশোধিত ঈমানি দৃঢ়তা অর্জনের পথ, কেয়ামতের দিন তার মুক্তিও বরং পথেই, তাহলে এতেকাফ হল এমন একটি ইবাদত যার মাধ্যমে বান্দা সমস্ত সৃষ্টজীব থেকে আলাদা হয়েযথা সম্ভব প্রভুর সান্নিধ্যে চলে আসে। বান্দার কাজ হল তাঁকে স্মরণ করা, তাঁকে ভালোবাসা তাঁর ইবাদত করা। সর্বদা তারসন্তুষ্টি নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা, এরই মাধ্যমে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় মজবুত হয়।

. পাশবিক প্রবণতা এবং অহেতুক কাজ থেকে দূরে থাকা

রোজার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অতিরিক্ত পানাহার যৌনাচারসহ পশু প্রবৃত্তির বিবিধ প্রয়োগ থেকে, অনুরূপ ভাবে তিনি এতেকাফের বিধানের মাধ্যমে তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখেন অহেতুক কথাবার্তা, মন্দ সংস্পর্শ অধিক ঘুম হতে।

. আল্লাহর নৈকট্য লাভের অপূর্ব সুযোগ

এতেকাফের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অর্থে আল্লাহর জন্য নিবেদিত হয়ে যায়। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির দোয়া ইত্যাদির নির্ঘাত চর্চার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের অফুরন্ত সুযোগের আবহে সে নিজেকে পেয়ে যায়।

. শবে কদর তালাশ করা

এতেকাফের মাধ্যমে শবে কদর খোঁজ করা রাসূলুল্লাহ সা. –এর মূল উদ্দেশ্য ছিল, হযরত আবু সায়ীদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিতহাদিসে একথারই প্রমাণ বহন করে। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন :

আমি কদরের রাত্রির সন্ধানে প্রথম দশকে এতেকাফ করলাম। এরপর এতেকাফ করলাম মধ্যবর্তী দশকে। অতঃপর ওহি প্রেরণকরে আমাকে জানানো হল যে তা শেষ দশকে। সুতরাং যে এতেকাফ পছন্দ করবে, সে যেন এতেকাফ করে। ফলে, মানুষ তাঁরসাথে এতেকাফ যাপন করল।’ [মুসলিম, হা. ১১৬৭]

. মসজিদে অবস্থানের অভ্যাস গড়ে তোলা

এতেকাফের মাধ্যমে বান্দার অন্তর মসজিদের সাথে জুড়ে যায়, মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠে। হাদিসঅনুযায়ী যে সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা আরশের ছায়ার নীচে স্থান দান করবেন তাদের মধ্যে একজন হলেন ওই ব্যক্তি মসজিদের সাথে যার হৃদয় ছিল বাঁধা। হাদিসে এসেছে :

এবং যার অন্তর মসজিদে বাঁধা [বুখারী : /২৯২]

. ইচ্ছাশক্তি প্রবল করা এবং প্রবৃত্তিকে খারাপ অভ্যাস কামনাবাসনা থেকে বিরত রাখার অভ্যাস গড়ে তোলা

কেননা, এতেকাফ দ্বারা খারাপ অভ্যাস থেকে বিরত থাকার প্রবণতা গড়ে উঠে। এতেকাফ তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়নিজেকে ধৈর্যের গুণে গুণান্বিত করতে নিজের ইচ্ছাশক্তিকে শানিত করতে। এতেকাফ থেকে একজন মানুষ সম্পূর্ণ নতুন মানুষহয়ে বের হয়ে আসার সুযোগ পায় যা পরকালে উপকারে আসবেনা এমন গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকার ফুরসত মেলে।

এতেকাফের বিধানাবলি

. এতেকাফের সময়সীমা

সবচেয়ে কম সময়ের এতেকাফ হল, শুদ্ধমত অনুযায়ী একদিন একরাত। কেননা সাহাবায়ে কেরাম রা. নামাজ অথবা উপদেশ শ্রবন করার অপেক্ষায় বা জ্ঞান অর্জন ইত্যাদির জন্য মসজিদে বসতেন, তবে তারা এসবের জন্য এতেকাফের নিয়ত করেছেন বলে শোনা যায়নি। সর্বোচ্চ কতদিনের জন্য এতেকাফ করা যায় ব্যাপারে ওলামাদের মতামত হল ব্যাপারে নির্ধারিত কোন সীমারেখা নেই।

. এতেকাফে প্রবেশ বাহির হওয়ার সময়

এতেকাফকারী যদি রমজানের শেষ দশকে এতেকাফের নিয়ত করে তা হলে একুশতম রাত্রির সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবে, কেননা তার উদ্দেশ্য কদরের রাত তালাশ করা, যা আশা করা হয়ে থাকে বেজোড় রাত্র গুলোতে, যার মধ্যে একুশেররাত রয়েছে। [মুসলিম, ফাতওয়া শামি: /৪৫২]

তবে এতেকাফ থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে উত্তম হল চাঁদ রাত্রি মসজিদে অবস্থান করে পরদিন সকালে সরাসরি ঈদগাহে চলেযাওয়া। তবে চাঁদ রাতে সূর্যাস্তের পর মসজিদ থেকে বের হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নেই, বৈধ রয়েছে।

. এতেকাফের শর্ত

এতেকাফের অনেক গুলো শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো নিন্মরূপ :

এতেকাফের জন্য কেউ কেউ রোজার শর্ত করেছেন, কিন্তু বিশুদ্ধ মত হল রোজা শর্ত নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি কোন এক বছর শাওয়ালের প্রথম দশকে এতেকাফ করেছিলেন, আর দশকে ঈদের দিনও আছে। আর ঈদেরদিনে তো রোজা রাখা নিষিদ্ধ। তবে মান্নত রমজান মাসে এতেকাফ করার জন্য রোজা শর্ত। [প্রমাণ : আপকে মাসায়েল আওরউনকা হল : /৬২৫, ফাতাওয়া আলমগীরী : /২১১]

এতেকাফের জন্য মুসলমান হওয়া শর্ত। কেননা কাফেরের ইবাদত গ্রহণ যোগ্য হয় না।

এতেকাফকারীকে বোধশক্তি সম্পন্ন হতে হবে। কেননা নির্বোধ ব্যক্তির কাজের কোনো উদ্দেশ্য থাকে না, আর উদ্দেশ্য ব্যতীত কাজ শুদ্ধ হতে পারে না।

ভালোমন্দ পার্থক্য করার জ্ঞান থাকতে হবে। কেননা কম বয়সী, যে ভালমন্দের পার্থক্য করতে পারে না, তার নিয়তও শুদ্ধ হয়না।

এতেকাফের নিয়ত করতে হবে। কেননা মসজিদে অবস্থান হয়তো এতেকাফের নিয়তে হবে অথবা অন্য কোন নিয়তে। আরএদুটোর মধ্যে পার্থক্য করার জন্য নিয়তের প্রয়োজন। ইহার সমর্থনে হাদিসটি হলো

প্রত্যেক কাজের নির্ভরতা নিয়তের উপর, যে যা নিয়ত করবে সে কেবল তাই পাবে। [ বুখারী : ]

এতেকাফ অবস্থায় মহিলাদের হায়েজনিফাস থেকে পবিত্র হওয়া জরুরি। কেননা অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা হারাম, অবশ্য এস্তেহাজা অবস্থায় এতেকাফ করা বৈধ।

দলিল : আয়েশা রা. বলেন,

রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে তাঁর স্ত্রীগণের মধ্য হতে কেউ একজন এতেকাফ করেছিলেন এস্তেহাজা অবস্থায়। তিনি লাল হলুদ রঙ্গের স্রাব দেখতে পাচ্ছিলেন, আমরা কখনো তার নীচে পাত্র রেখে দিয়েছি নামাজের সময়। [বুখারী, হা. ২০৩৭]

গোসল ফরজ হয় এমন ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হতে হবে। অপবিত্র লোক মসজিদে অবস্থান করা হারাম। যদিও কোন কোন আলেম ওজুর শর্তে মসজিদে অবস্থান বৈধ বলেছেন। আর যদি অপবিত্রতা যৌন স্পর্শ অথবা স্বামীস্ত্রীর মিলনের ফলে হয়, তবে সকলের মতে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। আর যদি স্বপ্নদোষের কারণে হয়, তাহলে কারোর মতে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না।আর যদি হস্তমৈথুনের কারণে হয় তা হলে সঠিক মতানুসারে এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে।

এতেকাফ মসজিদে হতে হবে।

ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে এতেকাফ মসজিদে হতে হবে, তবে জামে মসজিদ হলে উত্তম কেননা, এমতাবস্থায় জুমার নামাজের জন্য এতেকাফকারীকে মসজিদ থেকে বের হতে হবে না। [ফতহুল কাদির : /১১০, ফাতওয়া আলীমগীরী : /২১২]

মেয়েরা ঘরের এক কোনে জায়গা নির্ধারিত করে তথায় এতেকাফ করবে। তাহলে সে মসজিদে এতেকাফের সওয়াব পাবে। [বুখারী মুসিলম, আলমগিরী : /২১১, হাসিয়াতুত তাহতাবী আলাদ্দুররুল মুখতার : /৪৭৩, আপকে মাসাঈল আওর উনকা হল : /৬২৪]

মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান

এতেকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে। [আদ্দুররুল মুখতার : /৪৪৭ফাতহুল কাদির : /১১২]

আর এতেকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে এতেকাফ ভঙ্গ হবে না। [আপকে মাসায়েলআওর উনকা হল : /৬২৪, আদ্দুররুল মুখতার : /৪৪৫, হাসিয়াতুত তাহতাবী : /৪৭৪]

মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে। [ফাতহুল কাদির : /১১০]

বাহন না থাকার কারণে এতেকাফকারীকে যদি পানাহারের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জাবোধ হয় তবে এরূপ প্রয়োজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে। [ফাতহুল কাদির : /১১০]

যে মসজিদে এতেকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদ থেকে বের হওয়াবৈধ, এক্ষেত্রে এতটুকু সময় নিয়ে আগে ভাগেই রওয়ানা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব যাতে সেখানে গিয়ে সে তাহিয়্যাতুল মসজিদ, জুমার পূর্বের চার রাকাত সুন্নাত পড়তে পারে। আর নামাজ শেষে সাথে সাথে পূর্বের মসজিদে ফিরে আসবে। [ফাতহুল কাদীর : /১১০, হাসিয়া তাহতাবী : /৪৭৫, আলমগিরী : /২১২, আপকা সওয়াল আওর উনকা জওয়াব : /৬২৪]

ওজরের কারনে এতেকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে। ছাফিয়্যা রা. থেকে বর্ণিত হাদিস এর প্রমাণ :‘ছাফিয়া রা. রমজানের শেষ দশকে এতেকাফস্থলে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে এলেন। রাসূলুল্লাহ সা. –এর সাথে কতক্ষণ কথা বললেন অতঃপর যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালেন রাসূলুল্লাহ সা.- তাকে বিদায় দিতে উঠে দাড়ালেন। [বুখারী : ২০৩৫]

কোন নেকির কাজ করার জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। মর্মে আয়শা রা. বলেন, ‘এতেকাফকারীর জন্য সুন্নত হল সে রোগী দেখতে যাবে না, জানাজায় উপস্থিত হবে না, স্ত্রীকে স্পর্শ করবে না তার সাথে কামাচার থেকে বিরত থাকবে এবং অতি প্রয়োজন ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হবে না। [আবু দাউদ : হা. ২৪৭৩]

এতেকাফবিরুদ্ধ কোন কাজের জন্য এতেকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়, যেমন ক্রয়বিক্রয়, স্বামীস্ত্রীর মিলন ইত্যাদি। হ্যাঁ যদি এতেকাফকারী গরীব মানুষ হয়, ঘরে খাবারের কিছুই না থাকে, তাহলে এতেকাফ অবস্থায় ক্রয়বিক্রয় করতেপারবে। তবে শর্ত হলো মসজিদে কেনাবেচার জিনিসপত্র আনতে পারবে না। [আর্দ্দুরুল মুখতার : /৪৪৮৪৪৯, আপকেমাসায়েল আওর উনকা হল : /৬২৫]

এতেকাফকারীর জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ

ইবাদত আদায়, যেমন নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির দোয়া ইত্যাদি। কেননা এতেকাফের উদ্দেশ্য হল আল্লাহতাআলার সমীপে অন্তরের একাগ্রতা নিবেদন করা এবং তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হওয়া যা উপরোক্ত ইবাদত আদায় ছাড়া সম্ভব নয়।

অনুরূপ ভাবে যেসব ইবাদতের প্রভাব অন্যদের পর্যন্ত পৌঁছায়, যেমন সালামের উত্তর দেওয়া, সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজথেকে বারণ, প্রশ্নের উত্তর দেয়া, পথ দেখানো, ইলম শিক্ষা দেয়া, কুরআন পড়ানো ইত্যাদিও করতে পারবে। কিন্তু শর্ত হল এগুলো যেন এত বেশি না হয় যে এতেকাফের মূল উদ্দেশ্যই ছুটে যায়। [ফতহুল কাদীর : /১১২, আলমগীরী : /২১২, আপকে মাসায়েলআওর উনকা হল : /৬২৪]

এতেকাফকারীর জন্য মুস্তাহাব হল তার এতেকাফের স্থানে কোন কিছু দ্বারা পর্দা করে নেয়া। প্রমাণ: ‘রাসূল সা. তুর্কি গম্বুজেরভিতরে এতেকাফ করেছেন যার দরজায় ছিল চাটাই। [মুসলিম : হা. ১১৬৭]

এতেকাফকারী তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নেবে যাতে নিজের প্রয়োজনে তাকে বার বার মসজিদের বাইরে যেতে না হয়, আবু সাঈদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন : ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সা. –এর সাথে রমজানের মাঝের দশকেএতেকাফ করলাম, যখন বিশ তারিখ সকাল হল আমরা আমাদের বিছানাপত্র নিয়ে নিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ সা. এসেবললেন, যে এতেকাফ করেছে সে তার এতেকাফের স্থানে ফিরে যাবে। [বুখারী : হা. ২০৪০]

এতেকাফের জন্য যা অনুমোদিত

এতেকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ঘুমানোর অনুমতি আছে। ব্যাপারে সকল ইমামদের ঐক্যমত রয়েছে। তবে ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত, কেননা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।

গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল সুগন্ধি ব্যবহার, ভাল পোশাক পরা, সবের অনুমতি আছে। প্রমাণ আয়েশা রা. –এরহাদিস :

তিনি মাসিক অবস্থায় নবী সা.-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রসূল সা. মসজিদে এতেকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা রা. তার কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা. –এর মাথার নাগাল পেতেন। [বুখারী : ২০৪৬]

এতেকাফকারীর পরিবার তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে, কেননা নবী করীম সা.-এর স্ত্রীগণ এতেকাফকালীন তার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। তবে সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।

এতেকাফকারী যা থেকে বিরত থাকবে

ওজর ছাড়া এতেকাফকারী এমন কোন কাজ করবে না যা এতেকাফকে ভঙ্গ করে দেয়, আল্লাহ তাআলা বলেন,”তোমরা তোমাদের কাজ সমূহকে নষ্ট করো না।

সকল কাজ যা এতেকাফের উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে, যেমন বেশি কথা বলা, বেশি মেলামেশা করা, অধিক ঘুমানো, ইবাদতের সময়কে কাজে না লাগানো ইত্যাদি।

এতেকাফকারী মসজিদে বসে ক্রয়বিক্রয় করবে না। প্রমাণ:

হযরত আমর বিন শুআইব রা. তাঁর পিতার উদ্বৃতিতে বর্ণনা করেন যে রাসূল সা. মসজিদে ক্রয়বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন।[তিরমিযী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ: হা.৬৯৯১]

তেমনিভাবে যা ক্রয়বিক্রয়ের কাজ বলে বিবেচিত, যেমন বিভিন্ন ধরনের চুক্তিপত্র, ভাড়া, মুদারাবা, মুশারাকা, বন্ধক রাখাইত্যাদি। কিন্তু যদি মসজিদের বাহিরে এমন ক্রয়বিক্রয় হয় যা ছাড়া এতেকাফকারীর সংসার চলে না তবে তা বৈধ বলে বিবেচিতহবে।

মসজিদে বায়ু ত্যাগ থেকে বিরত থাকবে। কেননা হযরত আনাস রা. হতে বর্ণিত, যখন বেদুইন লোকটি মসজিদে প্রস্রাব করেছিল তখন রাসূল সা. বলেছিলেন :

মসজিদ প্রস্রাব, ময়লাআবর্জনার উপযোগী নয়, বরং মসজিদ পবিত্র স্তান আল্লাহর ঘর অবশ্যই আল্লাহর জিকির এবং নামাজ কুরআন তিলাওয়াতের জন্য। [মুসলিম : ২৮৫]

প্রিয় পাঠক! আসুন আমরা রমজান মাসকে যথাযথ কাজে লাগাই এবং এর শেষ দশককে এতেকাফের মাধ্যমে অতিবাহিত করি।এতেই আমাদের দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমিন।

লেখকঃদুধরচকী ছাহেব।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com