আবার পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা
আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। কয়েকদিন সর্বোচ্চ ২৪০ টকায় বিক্রি হওয়ার পর মঙ্গলবার রাজধানীর খুচরা ও পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়েছে।
এদিন খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫০ টাকা। যা একদিন আগে (সোমবার) বিক্রি হয় ২৩০-২৪০ টাকা। পাইকারি বাজারেও দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ২৩৫-২৪০ টাকা। আর দেশি নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে ৩০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া এদিন রাজধানীতে পাইকারি বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০-১৯০ টাকা এবং খুচরায় ছিল ১২০-২১০ টাকা।
পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকারের কোনো উদ্যোগই তেমন কোনো কাজে আসছে না বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এই মুহূর্তে ভোক্তাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যদিনের এই পণ্যটি। বাজার তদারকি সংস্থাগুলোও দাম কমাতে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
এছাড়া প্রথম অবস্থায় বাজার তদারকিতে হাঁকডাক থাকলেও বর্তমানে তেমন একটা কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পদত্যাগ করলে যদি পেঁয়াজের দাম কমে যায়, তবে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে এক সেকেন্ডও লাগবে না। পদত্যাগ করতে আমার কোনো সমস্যা নেই।
এদিকে মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও রামপুরা কাঁচাবাজারের বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। যা একদিন আগে বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকা।
মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা। এছাড়া চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা কেজি দরে। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা। আর পেঁয়াজপাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে।
নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা জোহুরা বেগম বলেন, পেঁয়াজের দাম কমছে না, বরং নতুন করে আবার বাড়ছে। বিক্রেতারা দুই মাস ধরে সংকটের কথা বললেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে গিয়ে চাহিদামতোই পাচ্ছি। কিন্তু বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, একদিনের ব্যবধানে নতুন করে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। দেখার যেন কেউ নেই। একই বাজারের খুচরা পেঁয়াজ বিক্রেতা মো. ইকবাল বলেন, আজ (মঙ্গলবার) পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছে আড়তদাররা। তাই বেশি দামে এনে বেশি দরেই বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে যাদের কাছে আগের আনা পেঁয়াজ আছে, তারাও বাড়তি দরেই বিক্রি করছে। যেটা একবারে ঠিক নয়।
এদিন রাজধানীর পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১৭০-১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১১০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ আড়তদার মো. আশরাফ বলেন, বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। দেশের নতুন পেঁয়াজও আসছে। এরপরও আমদানিকারকরা দাম কমাচ্ছে না। তারা বলছেন, বেশি টাকা দিয়ে আমদানি করতে হচ্ছে। এর জন্য দাম বেশি। তাই তাদের কাছে বাড়তি দরে এনে বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম কমাতে হলে তাদের ওপর সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় চুরির ভয়ে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে রাত জেগে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন কৃষকরা। অনেক কৃষক পেঁয়াজ চুরির ভয়ে অপরিপক্ব পেঁয়াজ বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় বিক্রি করে দিচ্ছেন। কৃষকরা জানান, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই পুরোপুরি নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেই দাম অনেকটা কমে যাবে।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, প্রায় এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশন-টিসিবি’র ৪৫ টাকা কেজিদরের পেঁয়াজ জুটল না দিনাজপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্যে।
বাজারে দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা কেজিদরে পেঁয়াজ কিনে খেতে খেতে হাঁপিয়ে ওঠার পর গতকাল দিনাজপুরে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র পেঁয়াজ বিক্রির খবরে দিনাজপুর ইন্সটিটিউট প্রাঙ্গণে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ক্রেতারা। কারও ভাগ্যে জুটেছে ৪৫ টাকা কেজিদরের এক কেজি পেঁয়াজ। আবার কেউ দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও হতাশ হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে।
ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক না হওয়ায় কৃষকের জমিতে রোপণকৃত মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও বপনকৃত হালি পেঁয়াজ রাতের আঁধারে চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত উপজেলার রোয়াইল ইউনিয়নের কাংশা এলাকার পাঁচজন কৃষকের জমি থেকে পেঁয়াজই চুরি হয়ে গেছে।
এ চুরির ঘটনায় বুধবার রাতে জনতার হাতে তিন চোর আটক হয়েছে। চুরির ঘটনায় ধামরাই এখন আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। তাই ইউনিয়নের খড়ারচর ও আটিমাইটান এলাকার কৃষক রাত জেগে পেঁয়াজ ক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মঙ্গলবার সকাল থেকে টিসিবি’র উদ্যোগে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু হয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সামনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুর রহিম। এ সময় তিনি পেঁয়াজ নিয়ে কোনো ধরনের রাজনীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।