ইরানের ব্যাপারে ট্রাম্পের পথেই হাঁটছেন বাইডেন; বাড়তি দাবি মানবে না তেহরান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টারা ইরান ও পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি অনুসরণ করছে এবং ট্রাম্পের ভাষায় তারা কথা বলছেন।
নয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন দাবি করেছেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে তেহরান যদি নিজের সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে তাহলে আমেরিকাও এতে ফিরে আসবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আরো বলেন ইরান পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি মেনে চললে আমেরিকা তার মিত্রদের নিয়ে তেহরানের সঙ্গে আরও দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে যেখানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিসহ আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
ধারণা করা হচ্ছে বিনা শর্তে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষে পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসা সম্ভব হবে না। তেহরান বহুবার বলেছে ওয়াশিংটন যদি পরমাণু সমঝোতায় ফিরে আসে এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয় তাহলেই কেবল ইরান পরমাণু সমঝোতায় দেয়া তাদের প্রতিশ্রুতি মেনে চলবে। বাইডেন প্রশাসন দেখাতে চাইছে বল এখন ইরানের কোটে সুতরাং পরমাণু সমঝোতা পুরোপুরি বাস্তবায়নে তেহরানকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। অবস্থা দেখে মনে হয় মার্কিন কর্মকর্তারা হয়তো এটা ভুলে গেছেন তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে গিয়ে ইরানের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। এরপর প্রতিশোধ হিসেবে ইরানও পর্যায়ক্রমে পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন স্থগিত রাখে এবং সর্বশেষ, সংসদে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ২০মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দিয়েছে এবং ইউরেনিয়ামের মজুদ গড়ে তুলছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে ইরানের সঙ্গে পাওনাদারে মতো আচরণ করছে। অথচ পরমাণু সমঝোতায় অচলাবস্থার জন্য মার্কিন প্রশাসনই দায়ী। জাতিসংঘে ইরানের প্রতিনিধির মুখপাত্র আলী রেজা মির ইউসুফি পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের জবাবে বলেছেন, ইরান নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রই পরমাণু সমঝোতা এবং নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেছে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরমাণু ইস্যুর বাইরে আরো অন্যান্য বিষয়েও চুক্তিতে উপনীত হওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অর্থাৎ ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তার এসব বক্তব্য থেকে বোঝা যায় সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং ইসরাইল ও সৌদি আরবের মধ্যে নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই।
প্রকৃতপক্ষে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন শুধু যে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধতা বজায় রাখতে চান তাই নয় একইসঙ্গে তিনি এ অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির পথেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চান। ইরান বহুবার জানিয়েছে, পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়নে তাদের স্বদিচ্ছা রয়েছে কিন্তু আমেরিকার বাড়তি কোনো দাবি মেনে নেয়া হবে না।