দেশের জনগণকে সরকার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে: রিজভী

0

নিজেরা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে থেকে দেশের জনগণকে সরকার মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কীসের স্বাধীনতা, কীসের সার্বভৌমত্ব। মানুষ মরুক, মানুষ ধ্বংস হয়ে যাক- আমার কিছু যায় আসে না- সরকারের হচ্ছে এটাই ভাবনা, প্রধানমন্ত্রীর এটাই ভাবনা। অথচ তিনি নিজে একেবারে পাহারার মধ্যে …..।’

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যে সরকার নিজের দেশের জনগণকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে পারে, যে সরকার দেশের জনগণকে মহামারির মধ্যে ঠেলে দিতে পারে, সেই সরকার দেশের জন্য কীইবা করবে? মানুষের জন্য কীইবা করবে? প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদের সাহেব একেবারে এমন এক বৃত্তের মধ্যে আছেন যেখানে করোনা ভাইরাস দূরে থাক, মশা-মাছিও ঢুকতে পারবে না। এই ধরনের স্বার্থপরতা নিয়ে যারা দেশ শাসন করে তারা কখনোই জনগণের বন্ধু হতে পারে না।’

বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীল সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সেন্টার ফর ন্যাশনালিজম স্ট্যাডিজ (সিএনএস) এর উদ্যোগে ‘ফেলানী ও সীমান্ত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এমন অভিযোগ করেন।

করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার ‘তেলেসমতি’ খেলা শুরু করেছে, অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আজকে সরকার করোনার টিকা নিয়ে তেলেসমতি শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব বলছেন, এটা  ভারতের সাথে জিটুজি (গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট) চুক্তি হয়েছে, সরকারের সাথে সরকারের চুক্তি হয়েছে। বেক্সিমকো বললো- না, এটা একটি বাণিজ্যিক চুক্তি। কোনটা বিশ্বাস করবেন?’

‘এর মধ্য দিয়েই বোঝা যাচ্ছে যে, একটা শুভঙ্করের ফাঁকি এবং যেটাকে একেবারে রূঢ় ভাষায় বলা যায় যে, টাকা কামানোর জন্য অর্থ কামানোর জন্য একটা ফাঁদ পাতা হয়েছে। এটা কাভার দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। স্বাস্থ্য সচিবকে দিয়ে বলানো হচ্ছে যে, এটা জিটুজি চুক্তি’- বলেন রিজভী।

বিএনপির এই শীর্ষনেতা বলেন, ‘আসলেই বেক্সিমকো ভ্যাকসিনের এই চুক্তিটা করেছে। এই টাকাটা অনেক জায়গা যাবে, এই টাকাটা কর্তা ব্যক্তিরাসহ সব জায়গায় যাবে। এই কারণে উপরে একটা প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে স্বাস্থ্য সচিবকে দিয়ে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কেন বেক্সিমকো? এই লোকটা (সালমান এফ রহমান), এই দরবেশ- সে তো অভিযুক্ত ব্যক্তি। ২০১০ সালে শেয়ার মার্কেটকে ধবংস করার জন্য দায়ী এই ব্যক্তি। আওয়ামীমনস্ক একজন সম্মানিত ব্যক্তি ইব্রাহিম খালেদের নাম শুনেছেন, যিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গর্ভনর ছিলেন। তার নেতৃত্বে যে তদন্ত কমিটি হয়েছিলো সেই তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি হচ্ছেন এই দরবেশ।’

সালমান এফ রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী আরও বলেন, ‘সেই দরবেশের ওষুধ কোম্পানি বেক্সিমকো ভারতের সাথে বাণিজ্য চুক্তি করছে। এখানে জনগণের কোনও স্বার্থ নেই, এখানে করোনা মোকাবিলার জন্য অথবা করোনা আক্রান্ত মানুষের সেবা দেয়ার জন্য যে টিকা দেয়া দরকার- এটার কোনও কিছুই থাকবে না। এখানে থাকবে উৎকট টাকা চুরির একটা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র।’

তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিনের সংগ্রহের জন্য একনেকে ৬ হাজার কোটি টাকা পাস হয়েছে। আমরা বলে দিচ্ছি- এই টাকার পুরোটাই লোপাট হবে। এটা বেক্সিমকোর মতো যারা শেখ হাসিনার উপদেষ্টা রয়েছেন সেই উপদেষ্টাদের কাছে এই টাকাগুলো মূলত টাকাগুলো ভাগ বাটোয়ারা হয়ে যা্বে, এই টাকার একটা বড় অংক চলে যাবে সরকারের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে বেআইনিভাবে।’

সীমান্তে মানুষ হত্যার ঘটনার জন্য ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতি’কেই দায়ী করে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘আজকে ভোটারবিহীন, জনসমর্থনহীন, ম্যান্ডেটহীন, নিশিরাতের সরকার সে তার আত্মসমর্পণ করে দিয়েছে ভারতের কাছে। দিয়েছে বলেই যারা তাদেরকে টিকিয়ে রেখেছে তাদেরই মোসায়েবী করছে, তাদের এই গোলামি করছে।’

দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, ‘আজকে বিএনপি দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ও বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সারা দেশে থানা পর্যায়ে মানববন্ধন কর্মসূচি হচ্ছে। এই মুহূর্তে জনগণের দাবি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন দেশে বেকারত্ব বেড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠানে বেতন কমিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের বেঁচে থাকার জিনিসপত্রের দাম কমেনি, শুধু বেড়েই চলেছে। ঢাকায় বাড়ি ভাড়াও বাড়ছে। আমরা আছি কোথায়? আজকে সকলকে মানুষের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। নইলে জনগণ মাটির সাথে মিশে যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, যাদের খাবারের অভাব নেই, স্বল্প মানুষ, মেদ বেশি হয়ে গেছে, তারা মেদ কমানোর জন্য ডায়টিং করেন। আর আজকে বাংলাদেশের নিম্নআয়ের মানুষ, স্বল্প আয়ের মানুষ, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ, এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষ অটো ডায়েটিং করছেন জিনিসপত্র কিনতে না পেরে, না থেয়ে তাদের অটো ডায়টিং করছেন।’

বর্তমান অবস্থা থেকে উত্তরণে জাতীয়তাবাদী শক্তির নতুন প্রজন্মকে আরও সংগঠিত হওয়ার আহবানও জানান রিজভী।

সংগঠনের ট্রাস্টি ব্যারিস্টার মীর হেলালের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবি আব্দুল হাই শিকদার, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার সারোয়ার হোসেন ও ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com