বনজ সম্পদ রক্ষায় টিআইবির ১৫ সুপারিশ
বন অধিদপ্তরের আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা, বন অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকাণ্ড-অনিয়ম ও দুর্নীতির ধরণ, মাত্রা ও কারণ চিহ্নিত করা এবং অধিদপ্তরের সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ১৫ দফা সুপারিশ করেছে ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন টিআইবির প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. রেযাউল করিম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ও তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বন অধিদপ্তরের কার্যক্রমে সুশাসনের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা থেকে উত্তরণে টিআইবি ১৫ দফা সুপারিশমালা প্রস্তাব করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-
১. রাষ্ট্রীয় অতীব জরুরি প্রয়োজনে বনভূমি ব্যবহার ও ডি-রিজার্ভের আগে বন অধিদপ্তরের অনুমতি নেওয়া, ত্রুটিমুক্ত ইআইএ সম্পন্নকরণ ও সমপরিমাণ ভূমিতে প্রতিবেশবান্ধব বনায়নে ‘কমপেনসেটরি এফরেস্টেশনের বিধি’ প্রণয়ন করা।
২. বন আইনের আমূল সংস্কার করে যুগোপযোগী করতে হবে। আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার নিশ্চিতকরণসহ জনঅংশগ্রহণমূলক বন সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বন অধিদপ্তরের দায়িত্ব বিধিবদ্ধভাবে নির্ধারণ করা।
৩. বনখাত থেকে রাজস্ব সংগ্রহ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে, প্রাকৃতিক বনের বাণিজ্যিকায়ন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা।
৪. ইতোমধ্যে অবক্ষয়িত প্রাকৃতিক বনের জমিতে সৃজিত সামাজিক বনের গাছ না কেটে মেয়াদোত্তীর্ণ বনসমূহের উপকারভোগীদের মুনাফা প্রদানসহ ওই বন প্রাকৃতিক বনে রূপান্তরের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
৫. অবক্ষয়িত প্রাকৃতিক বন ও বৃক্ষশূন্য জমিতে, যেমন- নতুন চর ও সড়ক-মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ-বান্ধব বনসৃজন করা।
৬. বন ব্যবস্থাপনায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও কার্যকর ব্যবহার করতে হবে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর বন সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনাকে প্রাধান্য দিয়ে অধিদপ্তরের সার্বিক প্রশাসনিক ও জনবল কাঠামো পুরোপুরি ঢেলে সাজানো।
৭. বনকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে সার্কেল ও বিভাগভিত্তিক বাধ্যতামূলক ও পালাক্রমিক বদলির বিধান প্রবর্তন এবং এর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে কার্যকর জবাবদিহির ব্যবস্থা রাখা।
৮. যথাযথ চাহিদা নিরূপণ সাপেক্ষে সব পর্যায়ের বন কার্যালয়সমূহের জন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক বরাদ্দ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো, কারিগরি ও লজিস্টিকস সুবিধা নিশ্চিত করা।
৯. মাঠ পর্যায়ের সবস্তরের কার্যালয়সমূহে অর্থ বণ্টন ও লেনদেন অনলাইন/মোবাইল ব্যাংকিং-ভিত্তিক করতে হবে। বিট ও অধস্তন কর্মীদের বেতন-ভাতা সংশ্লিষ্ট কর্মীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠানোর ব্যবস্থা করা।
১০. সিএস রেকর্ডকে ভিত্তি ধরে সরকারি বনের সীমানা চিহ্নিত করতে হবে, এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ বনভূমি জবরদখল হয়েছে তার ওপর বস্তুনিষ্ঠ তথ্যভাণ্ডার তৈরি ও তা উদ্ধারে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১১. বন সংরক্ষণ কার্যক্রম তদারকি ও পরিবীক্ষণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও এর কার্যকর ব্যবহার করতে হবে। ডিএফও ও বন সংরক্ষককে অধিনস্ত কার্যালয়সমূহের কর্মকাণ্ড নিয়মিতভাবে অবহিতকরণের ব্যবস্থা করা।
১২. বন অধিদপ্তরের বনায়ন ও বন সংরক্ষণ কার্যক্রম নিরীক্ষায় পারফরমেন্স অডিট ব্যবস্থা প্রবর্তন ও এর কার্যকর চর্চা নিশ্চিত করা।
১৩. ওয়েবসাইটকে আরো তথ্যবহুল (যেমন- পূর্ণাঙ্গ বাজেট, প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ তথ্য, বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দকৃত ও জবরদখল হওয়া ভূমির পরিমাণের ওপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য, ও নিরীক্ষা প্রতিবেদন, ইত্যাদি) ও নিয়মিত হালনাগাদ করা।
১৪. প্রকল্প বাস্তবায়ন, বন ও বনজ সম্পদ সংরক্ষণের সঙ্গে জড়িত সব কর্মীর নিজস্ব ও পরিবারের অন্য সদস্যদের বাৎসরিক আয় ও সম্পদের বিবরণী বছর শেষে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়াসহ তা প্রকাশ করা।
১৫. বন অধিদপ্তর ও বনকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি এবং বিভাগীয় শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে শাস্তি প্রদানের নজির স্থাপন করা ইত্যাদি।