বিএনপিতে ফিরতে চান তারা
শীর্ষ নেতার সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ২৬শে জুন পদত্যাগ করেছেন এলডিপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা। গত কয়েকদিন আগে বের হয়ে আসা সেই নেতারা এলডিপি’র নামে নতুন একটি সমন্বয়ক কমিটিও করেছেন। সাবেক হুইপ আবদুল করিম আব্বাসীকে সভাপতি ও এলডিপি’র সাবেক সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যের এই আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। প্রস্তাব পেলে বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন এলডিপি’র একাংশের এই নেতারা। সমন্বয় কমিটি করার পর বিএনপির পক্ষ থেকে অভিনন্দনও পেয়েছেন তারা। যদি বিএনপি তাদের দলে নেয়ার আহবান জানায় তাহলে নতুন কমিটি বিলুপ্ত করেই বিএনপিতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল করিম আব্বাসী মানবজমিনকে বলেন, আমরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে থাকতে চাই বলেইতো এই প্রসেস। সেটা হবে আমরা আশা করি।
বিএনপির পক্ষ থেকে আপনাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করা হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে ফরমালি আমাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ করা হয়নি। আশা করছি যোগাযোগ করা হবে। কারণ আমরাতো বিএনপিতে ছিলাম। যারা বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল তাদের সকলকেই দলে নেয়া হচ্ছে। ওই দৃষ্টিকোন থেকে এটা হবে বলে আশা করছি।
যদি বিএনপিতে যোগ দেন তাহলে আপনারা নতুন যে কমিটি করেছেন সেটা বিলুপ্ত করবেন কি-না, এমন প্রশ্নে আব্বাসী বলেন, এটা আমরা আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেব। বিএনপি যদি আনুষ্ঠানিকতায় যায় তাহলে সেই প্রসেস অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নেব।
শাহাদাত হোসেন সেলিম মানবজমিনকে বলেন, বিএনপি আমার আপন ঠিকানা। বিএনপির পক্ষেই আমাদের চিন্তা চেতনা। জাতীয় মুক্তি মঞ্চকে আমরা বিএনপির বিপক্ষে মনে করছি। যে কারণে সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। সারাদেশের নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়েই বিএনপিতে ফিরে যাওয়ার একটা কথাবার্তা চলছে। সবাই বিএনপির রাজনীতির প্রতি আগ্রহ। যদি বিএনপি আমাদের আমন্ত্রণ জানায় তাহলে আমরা বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নেব। আর বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আমাদের এই অবস্থানের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছে।
দলের নিয়মিত কার্যক্রম না থাকা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়া এবং রাজনৈতিকভাবে মূল্যায়ন না করার কারণে কর্নেল (অবঃ) অলি আহমদের জাতীয় মুক্তিমঞ্চ গঠনের আগের দিন দলের হেভিওয়েট তিন সাবেক এমপি পদত্যাগ করেন। পরে এসব নেতারা বিএনপিতে যোগ দেয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির হাইকমাণ্ড তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানা গেছে। তবে বিএনপির সিনিয়র নেতারা এই বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মানবজমনিকে বলেন, এলডিপির একাংশের কমিটি হয়েছে শুনেছি। কিন্তু তারা বিএনপিতে যোগ দেবে কি-না এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমি চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলাম। এই বিষয়ে আমি তেমন কিছু জানি না।
চারদলীয় জোট সরকারের শেষ সময়ে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সদস্য কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমসহ তৎকালীন জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি দল থেকে পদত্যাগ করেন। একইদিন জোট সরকারের সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও কর্নেল অলি আহমদের যৌথ নেতৃত্বে এলডিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই বি. চৌধুরী ও কর্নেল অলির মধ্যে সাংগঠনিক কারণে মতবিরোধ দেখা দিলে দু’জনই আলাদা পথে হাঁটেন। এখন এলডিপি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। আর বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে মহাজোট থেকে এলডিপি বের হয়ে আসে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়। নির্বাচনে এলডিপি ৩৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটিতে জয়লাভ করে। ২০১৪ সালের বিএনপির সঙ্গে জোটের শরিক এলডিপিও দশম সংসদ নির্বাচন বয়কট করে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের মনোনয়নে ৫টি আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করে এলডিপি।