দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ভারতের স্বার্থ রক্ষা করছে আ.লীগ সরকার: বিএনপি

0

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ভারতের দিক থেকে বলা হয়, যারা চোরাকারবারী, ভারতবর্ষে তাদের প্রবেশে বারণ করার পরেও যখন প্রবেশ করছে, তখন গুলি করতে হয়। আমাদের বিজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যিনি ইতিমধ্যে প্রচুর প্রাজ্ঞতা ও বিজ্ঞের পরিচয় দিয়েছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বললেন, তখনকার বৈঠকের পর তিনি (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) বললেন, তিনি হতাশ হয়েছেন।’

‘আজকে ডেইলি স্টারে তার একটা বড় ইন্টারভিউ প্রকাশ হয়েছে। এটা পড়ে আমার সন্দেহ হয়েছে- তিনি আসলে কার পররাষ্ট্র মন্ত্রী? তিনি কি বাংলাদেশের নাকি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী। পুরো ইন্টারভিউর মধ্যে তিনি ভারতকে ডিফেন্ড করার চেষ্টা করেছেন।’

গতকাল সোমবার (২১ ডিসেম্বর) সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দলের ঘোষিত কালো পতাকা কর্মসূচি চলাকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। 

তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলছেন তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, এবার কী সামিটে এটা উত্থাপন করা হয়েছিলো? তিনি উত্তর দিয়েছেন, আমরা ভারত সরকারকে এই কথা বার বার বলে বিব্রত করতে চাই না। আমাদের মধ্যে এতো চমৎকার সম্পর্ক, এতো ভালো সম্পর্ক, সেই সম্পর্ক আমরা নষ্ট করতে চাই না। এই বিষয়টা (সীমান্ত হত্যাকাণ্ড) নিয়ে তারা কথা বলারও এখন প্রয়োজনবোধ করছেন না, সেটা তিনি (পররাষ্ট্র মন্ত্রী) ইন্টারভিউতে বুঝাতে চেয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকরা যে নির্বিচারে হত্যার শিকার হচ্ছে তার প্রতিবাদে আজকে আমরা কালো ব্যাজ ধারণ করেছি। এটা আমাদের একটা প্রতিবাদ। সেই অনুযায়ী আমিও আজকে এই সংবাদ সম্মেলন আপনাদের সামনে কালো পোশাক পরিধান ও কালো ব্যাজ ধারণ করেছি। এটার (সীমান্ত হত্যাকাণ্ড) আমরা অবসান চাই। আমরা অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার জন্য সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।’

বাংলাদেশের সীমান্তে ১৯৭২ সাল থেকে এই পর্যন্ত নাগরিক নিহত হওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকেই সীমান্তে ভারতীয় রক্ষীবাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিকেরা বিনা বিচারে নিহত হচ্ছেন। আমরা যে সংখ্যা পেয়েছি- ১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৫১০ জন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তার মধ্যে ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৪৩৯ জন রয়েছে।

জনসংখ্যার অনুপাতে এই ধরণের লোক নিহত হওয়া বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে যখন বাংলাদেশের নাগরিকরা নির্বিচারে হত্যার শিকার হয়, এটা অবশ্যই মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং মানুষের যে ন্যুনতম অধিকার রয়েছে বিচার পাওয়ার সেটারও লঙ্ঘন।’

‘আমাদের বক্তব্য ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে না’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের বক্তব্যটা ভারতের কোনও সরকার বা ভারতের জনগণের বিরুদ্ধে না। আমার দেশের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়ে বক্তব্য, তাদের জীবনের প্রশ্নে আমাদের বক্তব্য। এটা সবাই করছেন, দীর্ঘকাল ধরে করছেন। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সেগুলো তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কথা হচ্ছে, যদি কেউ অপরাধ করে আইন আছে। ভারতেও আইন আছে। যদি কেউ ই-লিগ্যাল ডেসপাস করে, তাহলে তার ফরটেন ফরেন অ্যাক্টে বিচার হবে। যেটার মাধ্যমে এখনও তারা আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ সাহেবকে ওইভাবে আটকিয়ে রেখেছে। এখন উনি মুক্ত নন কারণ, পুরোপুরি আটকানো আছেন। এখন পর্যন্ত তারা ওই মামলারও নিষ্পত্তি করেননি।

সেই আইনে সীমান্তে যে বেআইনিভাবে প্রবেশ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নিতে পারেন, আমাদের সরকার তাদের বিচার করতে পারেন। এই বিষয়গুলো সমাধান হওয়া দরকার। একটা পারস্পরিক মর্যাদা ভিত্তিতে একটা মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠা খুব জরুরি। কারণ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম জাতি। দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এই ধরণের মানসিকতা থেকে আমরা যেটা আশঙ্কা করছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে সোমবার বিএনপি সারা দেশে মহানগর ও জেলা কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ ও কালো পোষাক পরিধান করেছে। নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

‘রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার রোহিঙ্গা সমস্যার কোনও সমাধান করতে পারেনি। সেখানে বলা হচ্ছে যে, এই সমস্যার ব্যাপারে আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলো তারা আমাদেরকেই সমর্থন করছে। ভারতের কথা বলা হয়েছে। গতকাল দেখলাম তাদের (ভারত) হাইকমিশনার তিনি বলছেন, এটা (রোহিঙ্গা প্রশ্নে) আমরা বাংলাদেশকে সমর্থন করছি, নিরবে থেকে করছি এজন্য যে, তাতে আমাদের বিভিন্ন রকম ম্যান্যুপুলেশন করতে সুবিধা হয় বাংলাদেশের স্বার্থেই ।

জানি না আমরা। আজকে বাংলাদেশ তার সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে কোনও কথা বলবে না। ভারত নিবর থাকবে, চীন উল্টো ভেটো দেবে। আর বলা হবে যে, আমরা চমৎকার পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করছি, অত্যন্ত সুন্দর পররাষ্ট্র নীতি। সব কিছুর মূল্যে একটাই, সেটা হচ্ছে- তাদের ক্ষমতা টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রের সমস্ত স্বার্থগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়ে আজকে এই ধরণের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি গ্রহণ করেছে।’

ফখরুল বলেন, ‘ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব এখন সর্বোচ্চ পর্যায় এতে আশ্বস্ত হই। এটা ভালো কথা। এটা আমাদের জনগণকে একটা নিরাপদবোধ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কিন্তু ভারতের সাথে বন্ধুত্ব প্রমাণ করবো কি করে? প্রমাণ কী ভারতের সমস্ত চাহিদা সেগুলো মেটাব আর আমার যে সমস্যাগুলো সেই সমস্যার একটাও মিটবে না।

পানির সমস্যা আমাদের জীবন মরণের, জীবন-জীবিকার সমস্যা। বার বার শুনছি, এই সমস্যার সমাধান হবে কিন্তু হচ্ছে না। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, তাদের তিস্তা নদীর পানির হিতসা না পেয়েও আমরা কিন্তু ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছি। আপনারা জানেন ১৫৪টা অভিন্ন নদী রয়েছে। ভারত প্রত্যেকটা নদীর উচানে বাঁধ দিয়ে দিয়েছে আমাদের সাথে কোনও আলোচনা না করেই।’

তিনি বলেন,  ‘প্রশ্নটা হচ্ছে, বাংলাদেশ ছোট দেশ হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন সর্বভৌম দেশ। এদেশের মানুষ একটা যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। আমরা উন্নয়নের জন্য আমরা গলা ফাটিয়ে কথা বলছি। আমার যে ন্যুনতম স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, আমার জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষা করার যে দায়িত্ব সেই সম্পর্কে উদাসীন থাকছি। অথবা সেই জায়গায় প্রতিবেশীর কাছে মাথা নুয়াচ্ছি। আমাদের প্রশ্নটা ওই জায়গায়।

আমরা ভারতকে দোষ দিতে চাই না, ভারতকে ব্লেইম করতে চাই না বা ভারত সরকারকেও ব্লেইম করতে চাই না। আমাদের সরকার বলে যারা দাবি করেন, সব সময় তারা বলে তারা কোনও মতেই কখনোই বাংলাদেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেন না, বাংলাদেশের স্বার্থের মধ্যে তারা কাজ করেন, তাদের কাছে আমাদের প্রশ্ন। আজকে কোন বাংলাদেশের স্বার্থে আপনারা সীমান্ত হত্যা সম্পর্কে কোনও রকম কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না, এখন পর্যন্ত অভিন্ন নদীগুলোর হিতসার ব্যাপারে কোনও চুক্তি করতে পারছেন না।’

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com