ভারতে নারী ধর্ষণে সাজা আজীবন কারাদণ্ড, রূপান্তরকামী হলে ২ বছর!
ভারতে গত কয়েক বছরে ধর্ষণের শাস্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। ২০১২ সালে দিল্লিতে বাসে এক মেডিকেল ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ব্যাপক আলোচনায় আসার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে ধর্ষণের শাস্তি আরও কঠোর করা হয়। কিন্তু এ আইনের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশটির রূপান্তরকামী বা রূপান্তরিত সম্প্রদায়।
সম্প্রতি মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে ভারতে যৌন সহিংসতার বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে রূপান্তরকামীদের প্রতি ব্যাপক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
৩৬ বছর বয়সী তৃতীয় লিঙ্গের নারী ডায়ানা ডায়াস। তিনি কিশোর বয়সে তার এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেন। গোয়ায় একটি বারে নর্তকি হিসেবে কাজ করার সময় সেই বারের ম্যানেজার তাকে এক ব্যক্তির বাসায় পাঠান। সেখানে ডায়ানার শুধু নাচার কথা থাকলেও বাসার সেই পুরুষ তাকে ধর্ষণ করেন।
ডায়ানা বলেন, তিনি এ ঘটনার জন্য পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করতেই যাননি। কারণ তিনি জানতেন, রূপান্তরকামী হওয়ার কারণে কর্মকর্তারা তাকে গুরুত্ব দিতেন না।
ভারতের জাতীয় এইডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ২০১৪-১৫ সালে পাঁচ হাজার রূপান্তরকামীর ওপর এক জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে দেখা যায়, এদের পাঁচ ভাগের এক ভাগ ব্যক্তি জরিপের বিগত এক বছরের মধ্যে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ডায়ানা বলেন, ভারতের বিদ্যমান ধর্ষণ আইনে যৌন সহিংসতার শিকার রূপান্তরকামীদের কারও বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
বর্তমানে ভারতীয় আইনে কোনো নারীকে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে ন্যূনতম ১০ বছর থেকে আজীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। ধর্ষিতা যদি ধর্ষণের পর অচেতন অবস্থায় থাকেন, ধর্ষণকারীর যদি আগেও ধর্ষণের রেকর্ড থাকে অথবা ধর্ষিতার বয়স ১২ বছরের কম হলে শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
অন্যদিকে তৃতীয় লিঙ্গের কাউকে ধর্ষণের শাস্তির ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল বৈষম্য। দেশটির ২০১৯ সালের আইন অনুযায়ী, রূপান্তরকামী কাউকে শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের শাস্তি সর্বনিম্ন ছয় মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড।
রূপান্তরকামীদের অধিকারের জন্য লড়াই করা কর্মীরা বলছেন, লঘু শাস্তির কারণে তাদের ওপর যৌন সহিংসতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। ফলে সমাজে যেন এ বার্তাই দেয়া হচ্ছে, তাদের জীবনে নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই।
ভারতে অন্যতম রূপান্তরকামী বিচারক স্বাতী বিধান বড়ুয়া বলেন, ‘রূপান্তরকামী ব্যক্তিকে যৌন নিপীড়নের শাস্তির এই ব্যাপক বৈষম্যের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হচ্ছে যে, আমাদের জীবনের কোনো দাম নেই।’
গত অক্টোবরে রূপান্তরকামীদের প্রতি যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের মতো অপরাধের শাস্তিতে বৈষম্য নিরসনের জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়। আদালত তখন ভারতের আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় এবং সামাজিক বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে জবাব দিতে নির্দেশ দেন, যদিও মন্ত্রণালয় দুটির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া আসেনি।