বিশ্বখ্যাত মুসলিম দার্শনিকের ভাস্কর্য সরালো চীন
চীনের উত্তর-পশ্চিমে জিনজিয়ান প্রদেশ কর্তৃপক্ষ প্রখ্যাত তুর্কি দার্শনিক মাহমুদ খাশগারির ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলেছে। গত বছরের ২৮ নভেম্বরের পর থেকে স্যাটেলাইট চিত্রে এ ভাস্কর্যটি আর দেখা যাচ্ছে না বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এদিকে তুরস্কের ইজমিরের এজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তুর্কি ওয়ার্ল্ড স্টাডিজ সেন্টারের অধ্যাপক আলিমঞ্জন এনায়েত ভাস্কর্যটি অপসারণের ঘটনাকে উইঘুর এবং সমস্ত তুর্কি জনগণের ওপর মারাত্মক আঘাত বলে অভিহিত করেন।
রেডিও ফ্রি এশিয়াকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এনায়েত বলেন, ‘মাহমুদ খাশগারি তুরস্কের ইতিহাস ও সংস্কৃতির পিতামহ। তিনি তুরস্কের গৌরব। ওই ভাস্কর্য ধ্বংস করে চীন তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটি তুরস্কের জনগণের বিশ্বাসের ওপর চরম আঘাত।’
১৯৪৯ উইঘুরদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই চীন সরকার প্রতিনিয়ত উইঘুর সংস্কৃতি আক্রমণ করেছে এবং উইঘুর জনগণ ও তাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার চেষ্টা করছে বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘শত শত উইঘুর স্থাপত্য ধ্বংস, বুদ্ধিজীবীদের কারাগারে বন্দী রাখা, ঐতিহাসিক শত শত অবকাঠামো ধ্বংস করা উইঘুরদের প্রতি চীন সরকারের একটি সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র।’
গত বছর চীনা ভাষায় জিনজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয় জার্নালে নৃতাত্ত্বিক হান অধ্যাপক গাও বো একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ওই নিবন্ধে খাশগারি সম্পর্কে ঐতিহাসিক অনেক বিষয়কে সন্দেহমূলক দাবি করে আলোচনা উপস্থাপন করেন। ওই গবেষণা প্রবন্ধিটিতে গাও বো দেখান, খাশগারি যে উইঘুর ছিলেন কিংবা ওপাল তার নিজের জন্মস্থান ছিল, এ ব্যাপারে কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। গাও বোর এই নিবন্ধটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে স্যাটেলাইট থেকে আর এটি দেখা যাচ্ছে না।
ওয়াশিংটনভিত্তিক উইঘুর মানবাধিকার প্রকল্পের (ইউএইচআরপি) গবেষণা পরিচালক হেনরিক সাজাডজিউভস্কি রেডিও ফ্রি এশিয়াকে বলেন, ‘বিংশ শতাব্দীতে ফ্যাসিবাদী শাসনের মাধ্যমে চীন বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে।’
১৯৮০ সালের শুরুর দিকে খাশগারির মৃত্যুর স্থানটিতে চীনের উইঘুর মুসলিমদের অর্থায়নে একটি মাজার তৈরি করা হয়। সেখানে তার সাত মিটার লম্বা ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। পরে চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হয়ে উঠে। স্থানটিতে ভ্রমণ করতে দেশ বিদেশ থেকে অনেক পর্যটকরা আসেন।
মাহমুদ খাশগারি একজন প্রখ্যাত দার্শনিক। কাশগরে (চীনা কাশিতে) ওপাল জনপদের বাইরে একটি মাজারের আঙিনায় তার ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছিল। উইঘুর মুসলিম ও তুর্কিদের কাছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ তিনি। পৃথিবী জুড়ে এখনও তাকে নিয়ে গবেষণা হয়। একাদশ শতাব্দিতে ‘গ্র্যান্ড তুর্কি অভিধান’ সংকলন করেছিলেন তিনি। উইঘুর সম্প্রদায় তাদের জীবনের অংশ হিসেবে খাশগারির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।