সুদ খাওয়ার পরিণতি

0

আল্লাহ তার বান্দাদের সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তার ইবাদতের জন্য। আর কিভাবে ইবাদত করতে হবে, এ সম্পর্কে বিস্তারিত রাসুলুল্লাহ (সা.) এর মাধ্যমে বলে দিয়েছেন আল্লাহ। তবে মানুষ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ইসলাম কর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এসব হারাম কাজের মধ্যে সুদ একটি। এটি দৃশ্যত মানুষের উপকারে আসলেও তা মানব সমাজে বিশৃঙ্খলা বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

আল্লাহ তাআলা সুদকে হারাম করা সত্ত্বেও সমাজে সুদের ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। প্রাথমিক অবস্থায় অভাবের তাড়নায় মানুষ সুদের লেনদেন করলেও এখন স্বভাবে পরিণত হয়েছে। যার ফলে এটি এখন অপরাধ মনে হয় না কারও কাছে। সুদ যারা খায় বা যার কাছ থেকে সুদে মানুষ টাকা নেয় শুধু তারাই অপরাধী নয়, এই কাজের সঙ্গে যারা লিপ্ত অর্থাৎ যে ব্যক্তি সুদি কারবারের লেখক ও স্বাক্ষী থাকবে, তারাও সমপরিমাণ অপরাধী।

সুদ খাওয়া কবিরা গোনাহ। সুদ খাওয়ার সব থেকে ছোট গোনাহ নিজের মায়ের সাথে ৪২ বার যিনা করার গোনাহ। এর ফলে সুদখোরকে ভোগ করতে হবে জাহান্নামের কঠিন আজাব।

হজরত জাবির (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সুদ গ্রহীতা, দাতা ও সুদি কারবারের লেখক এবং সুদি লেনদেনের সাক্ষী সবার ওপর লানত করেছেন। (মুসলিম, হাদিস ৪১৩৮)।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং দান-সাদকাকে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তায়ালা কোনও অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৬)।

অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, মানুষের সম্পদে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য তা মূলত আল্লাহর কাছে বৃদ্ধি পায় না। আর তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাক আল্লাহর সন্তুষ্টির কামনা করে (তা-ই বৃদ্ধি পায়) এবং তারাই বহুগণ সম্পদপ্রাপ্ত।’ (সুরা রুম, আয়াত ৩৯)।

উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, যদি কোনও সমাজে ইসলামী অর্থব্যবস্থা চালু এবং জাকাত-ফিতরা ও অন্যান্য সাদকা সঠিকভাবে আদায় করা হয়, তবে ওই সমাজে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য শতভাগ থাকবে। এতে সমাজ যেমন চারিত্রিকভাবে শুদ্ধি লাভ করতে পারবে তেমন দরিদ্রতাও সমাজকে মুক্তি দিতে বাধ্য হবে। সঙ্গে সঙ্গে জাকাত-সাদকা আদায়কারীর ধনসম্পদকে বহু গুণে উন্নীত করার ঘোষণা খোদ আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন। অতএব এতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই।

সুদের শাস্তি
সুদ কতখানি জঘন্য তা উম্মতকে জানান দিতে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, সুদের গুনার সত্তরটি স্তর রয়েছে, তার মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে আপন মাকে বিয়ে (মায়ের সঙ্গে জিনা) করা। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ২২৭৪)।

এ জঘন্য কাজের শাস্তি কতটা ভয়াবহ হবে তার চিত্র আল্লাহ তায়ালাই কোরআনে উপস্থাপন করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে : যারা সুদ খায়, তারা তার মতো (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এজন্য যে, তারা বলে, বেচাকেনা সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতএব, যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হলো, যা গত হয়েছে তা তার জন্যই ইচ্ছাধীন। আর তার ব্যাপারটি আল্লাহর হাওয়ালা। আর যারা ফিরে গেল, তারা আগুনের অধিবাসী-জাহান্নামি। তারা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৫)।

কোরআনের ইরশাদ করেছেন, আর যদি তোমরা সুদ পরিত্যাগ না কর তবে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শুনে নাও। আর যদি তোমরা তওবা কর, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা জুলুম করবে না এবং তোমাদের জুলুম করা হবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত ২৭৯)।

উপরের আলোচনার আলোকে বুঝা গেল, সুদ সমাজে শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিই করে না, এর ফলে মানুষ দুনিয়াতেই অনেক অশান্তিতে থাকতে হচ্ছে। এছাড়া পরকালেও সুদখোরকে ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি। তাই আল্লাহ যেন এ ধরণের জঘন্য কাজ থেকে আমাদের বিরত রাখে। আমিন।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com