রোহিঙ্গারা ভাসানচরে

0

জেগে ওঠার ২০ বছর পর মানবশূন্য দ্বীপচর ‘ভাসানচর’ পেল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রথম দলকে। নিরাপদ জীবন এবং নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশে এই দ্বীপে এক লাখ রোহিঙ্গার জন্য অস্থায়ীভাবে বসবাসের আধুনিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন জনবসতিকে বরণ করেছে এই চর। অনেক দিন ঘিঞ্জি ঘরে গাদাগাদি করে থাকতে থাকতে যেসব রোহিঙ্গা শিশু বাইরের নির্মল আলো-বাতাসের কথা ভুলেই গেছে তারা মুক্ত আকাশ পেয়ে আনন্দে ভাসছে। গতকাল শুক্রবার দেড় হাজারের বেশি মানুষ পেয়ে ভাসানচরের প্রকৃতিও যেন চঞ্চল হয়ে উঠেছে। সব হারানো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ও মানবশূন্য ভাসানচরে নতুন আলোর সঞ্চারণ ঘটেছে।

গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি ভাসানচরের মাটিতে পা রাখে। তাতে সদস্যসংখ্যা রয়েছে ১ হাজার ৬৪২ জন। ভাসানচরে পা দিয়েই রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়; বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে ছিল আনন্দের ঝর্ণাধারা। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে দুপুরের পর একে একে নৌবাহিনীর জাহাজগুলো ভাসানচরে পৌঁছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলোকে নামিয়ে দেয়। সেখানে তাদের স্বাগত জানানো হয়।

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরকে স্বাগত জানালেও কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে রাখা যাবে না। বাংলাদেশ সরকার মানবিকভাবে বিষয়টি দেখেছে বলেই রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। সেই সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে তারা মিয়ামারের ওপর চাপ প্রয়োগ করবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

গতকাল শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতেও বলা হয়, ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর অস্থায়ী। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক, তাদের সেখানেই দ্রুত ফেরত পাঠাতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে সহযোগিতা করতে হবে।

স্থানীয় প্রশাসন, মানবাধিকার প্রতিনিধি এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে রোহিঙ্গারা সন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়া থেকে রওনা হওয়ার আগ পর্যন্তও এসব রোহিঙ্গা ছিল উদ্বিগ্ন ও বিমর্ষ। কারণ বিদেশি এনজিও ও রোহিঙ্গাদের বড় একটি অংশ কোনোভাবেই চায়নি কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর। তাই তারা ভাসানচরের জীবন এবং সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে ভীতিকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিল। ফলে প্রশাসনও ছিল কিছুটা উদ্বিগ্ন। এর আগে দুইবার উদ্যোগ নিয়েও স্থানান্তর করা যায়নি।

স্থানীয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর বিকেল ৪টার দিকে ওয়্যারহাউজে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ব্রিফিং করেন। পরে মিলাদ ও মোনাজাত শেষে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত রাখা ৭, ৮, ৯ ও ১০ নম্বর ক্লাস্টারে তাদের রাখা হয়। প্রায় এক সপ্তাহ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে তাদের রান্না করে খাওয়ানো হবে। ভাসানচরে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে শিশু রয়েছে ৮১০, পুরুষ ৩৬৮ ও নারী ৪৬৪ জন। এ ছাড়া ২২টি এনজিও রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে ভাসানচরে অবস্থান করছে।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. খোরশেদ আলম জানান, প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন ভাসানচরে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। নোয়াখালীর ভাসানচরে আর কোনো রোহিঙ্গা আসবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিসি বলেন, সামনে আসবে কি না, এ মুহূর্তে কোনো তথ্য আমার জানা নেই।

ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্প পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক কমোডর আবদুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ভাসানচরে উপস্থিতির মধ্য দিয়ে সরকারের দীর্ঘদিনের একটি উদ্যোগ ও প্রত্যাশার বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করতে নৌবাহিনীর দীর্ঘ পরিশ্রম আজ সার্থক হয়েছে বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, কক্সবাজারের কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের তুলনায় এখানে অনেক বেশি উন্নত পরিবেশে রোহিঙ্গারা থাকবে। আশা করছি, একই ধারাবাহিকতায় আরও রোহিঙ্গা নিজেদের উন্নত পরিবেশে জীবন যাপন, সন্তানদের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি বিবেচনায় এখানে আসতে আগ্রহী হবে।

আমাদের উখিয়া প্রতিনিধির দেওয়া তথ্যমতে, কয়েক দিনের মধ্যে আরও কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচর যাবে। গতকাল শুক্রবার প্রথম দলটি ভাসানচরে পৌঁছেই কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী তাদের স্বজনদের ফোন করে সন্তোষ প্রকাশ করে। উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পের ছোট ছোট ঘিঞ্জি ঘর থেকে ভাসানচরের পরিবেশ অনেক ভালো এবং পরিচ্ছন্ন বলে তারা জানায়। তারা স্বজনদের বলেছে, ভাসানচরে যারা গিয়েছে তাদের এক মাস রান্না করা খাবার দেওয়া হবে। শুক্রবার দুপুরে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে তাদের তুলে দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু হয়েছে। এর অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার সমুদ্রপথে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রথম ধাপে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সেখানে নিয়ে গেছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। এর আগেই সেখানে রোহিঙ্গাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসংবলিত অবকাঠামো।

প্রথম ধাপে চট্টগ্রাম জাহাজঘাট থেকে রওনা দিয়ে তারা দুপুর ২টার দিকে সেখানে পৌঁছে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাতটি জাহাজে করে ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা প্রথম ধাপে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল। প্রথম দফায় ৩৯০ পরিবারের ১ হাজার ৬৪২ জন। স্বেচ্ছায় যাওয়া রোহিঙ্গার মাঝে একধরনের খুশির আমেজ বিরাজ করছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি রোহিঙ্গা শিবির রয়েছে। ক্যাম্প অভ্যন্তরে চলছে নানান ধরনের হিসাব-নিকাশ। শিগগিরই আরও কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গার ভাসানচরে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এসব রোহিঙ্গাকে বরণ করে নেন। নোয়াখালীর ডিসি, ইউএন ও শরণার্থী প্রত্যাবাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়।

ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন হাফেজ ইউনুস, ডাক্তার আনিস, আরমান, কুলসুম বিবি, ফয়সাল হক, নুর মোহাম্মদ, মাজেদা বেগম, আবদুর, মো. রফিক, শাহজাহান, এনামুল হক মাঝি, আবু জামিল, ওমর হামজা, নজু মাঝি, জাহেদ, হামিদ, ইয়াসিন ও মো. শহীদ।

ভাসানচরে যাওয়া উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২ ইস্টের বাসিন্দা মো. ইউসুফের ছেলে আবদুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আল্লাহর রহমতে ভাসানচরে আসলাম। পরিবারের ৫ সদস্য সঙ্গে রয়েছে। দুপুরের খাবার দেওয়া হয়েছে। ২২টি এনজিওর সমন্বয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবার দেওয়া হবে। রাতে মুরগি, সবজি ও সাদা ভাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুক্তি কক্সবাজারের প্রতিনিধি ফজলুল বারি বলেন, আগামী দুই মাস রান্না করা খাবার দেওয়া হবে।

সমাজকল্যাণ উন্নয়ন সংস্থার (স্কাস) জেসমিন প্রেমা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে কাজ শুরু করেছে ২২টি এনজি ও সংস্থা। রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার মজুদ করা হয়েছে।

শরণার্থী ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামসুদ্দৌজা বলেন, ইতিমধ্যে রোহিঙ্গারা ভাসানচরে পৌঁছেছে। প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা নিয়ে ছেড়ে আসা এসব বাসকে নিরাপত্তা দিয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত নিয়ে এসেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম থেকে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গাদের জাহাজে করে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পতেঙ্গায় বাংলাদেশ নৌবাহিনী রেডি রেসপন্স বাথ ও বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠ এলাকায় দেখা গেছে, তাঁবু টাঙিয়ে অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, কয়েক দিন আগে মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল রোহিঙ্গাদের ভাসানচর নেওয়ার পথে চট্টগ্রামে প্রয়োজনে রাখা হবে এবং তাদের রাখার বিষয়টি নৌবাহিনী তত্ত্বাবধান করবে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি দেখবে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, বৃহস্পতিবার কিছু রোহিঙ্গাকে নিয়ে আসা হয়েছে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদের নিয়ে আসার পথে নিরাপত্তা বিধান করেছি। তাদের যে বেজগুলোতে রাখা হয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট বাহিনী তত্ত্বাবধান করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে ভাসানচর রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রকল্পে। সেখানে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছে ১ হাজার ৪৪০টি ঘর এবং ১২০টি সাইক্লোন শেল্টার। তৈরি করা হয়েছে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, বাজারসহ প্রয়োজনীয় স্থাপনা। রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে সেখানে।

পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে চাপ কমাতে রোহিঙ্গাদের একাংশ ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু কতিপয় রোহিঙ্গা নেতা ও কিছু এনজিও এ নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা অপ্রপ্রচার চালাতে থাকে। কিন্তু গত মাসে ৪০ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল ভাসানচর প্রকল্প সরেজমিন পরিদর্শন করার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা প্রথম পর্যায়ে ভাসানচরে স্থানান্তরের জন্য তালিকাভুক্ত হয়। এদের মধ্য থেকেই ১ হাজার ৬৪২ জনকে গতকাল নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে। তালিকাভুক্ত অন্যদেরও শিগগিরই ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অব্যাহত হামলা, নিপীড়ন ও হত্যার কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এ ছাড়া এর আগে এসে আশ্রয় নিয়েছিল বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা। বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমপক্ষে ১১ লাখ। এ পরিস্থিতির মধ্যেই রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফের ঘিঞ্জি ক্যাম্পগুলো থেকে সরিয়ে আরও নিরাপদে রাখতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচরে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিজস্ব অর্থায়নে বিপুল ব্যয়ে এই আশ্রয় ক্যাম্প নির্মাণ করেছে সরকার। ভাসানচরের আশ্রয়ক্যাম্পে কমপক্ষে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করতে পারবে।

রোহিঙ্গাদের অবশ্যই মিয়ানমার ফিরতে হবে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করা হলেও তাদের মিয়ানমারেই ফিরতে হবে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের প্রথম দল শুক্রবার ভাসানচরে পৌঁছেছে। সেখানে ১ হাজার ৬০০-এর বেশি রোহিঙ্গা গেছে। যারা স্বেচ্ছায় সেখানে যেতে চেয়েছে, তাদেরই পাঠানো হয়েছে। ভাসানচরে এক লাখ রোহিঙ্গাকে পাঠানো হবে। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নেওয়ার আগে তাদের কমিউনিটি থেকে নেতারা পরিদর্শন করেছেন। এনজিও ও গণমাধ্যমের কর্মীরাও পরিদর্শন করেছেন। ভাসানচর পুরোপুরি সুরক্ষিত। রোহিঙ্গাদের জন্য সরকার থেকে ভাসানচরে বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। ভাসানচরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও ২২টি এনজিও সহায়তা দেবে।

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। তাদের অবশ্যই মিয়ানমারে ফিরতে হবে। অস্থায়ীভাবে আশ্রয়প্রাপ্ত মিয়ানমার নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়াটাই এই সংকটের একমাত্র টেকসই সমাধান। একই সঙ্গে আমরা সবাইকে বাংলাদেশ সরকারের প্রকৃত প্রচেষ্টাকে দুর্বল বা ভুল ব্যাখ্যা না করার জন্য সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, রোহিঙ্গারা যেন মিয়ানমারে দ্রুত, নিরাপদ ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরার লক্ষ্যে রাখাইনে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে তাদের প্রচেষ্টা যেন অব্যাহত রাখে।

যেমন করে ভাসানচর হলো

ভাসানচর মূলত দুটি চরের সমন্বয়ে গঠিত ঠেঙ্গারচর ও জালিয়ারচর। চর দুটির অবস্থান পাশাপাশি হওয়ায় নাম নিয়ে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা চরের নাম নিয়ে দুই অংশে বিভক্ত ছিল। একপর্যায়ে সবাই চর দুটির নাম ‘চরপ্রিয়া’ রাখার কথা বলেছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরটির নাম ‘ভাসানচর’ রাখার পর কেউ আর কোনো দ্বিমত পোষণ করেনি। ভাসানচরের মোট আয়তন ১৬ হাজার একর। এর মধ্যে ঠেঙ্গারচরের আয়তন ১০ হাজার ও জালিয়ারচরের আয়তন ৬ হাজার একর। ভাসানচরের দৈর্ঘ্য ৮ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার। হাতিয়া উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ভাসানচর। এ ছাড়া নোয়াখালী জেলা সদর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ও উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচর উপজেলা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পশ্চিম প্রান্ত থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রায় ২০ বছর আগে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন ও জনমানবশূন্য ভাসানচর।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com