কন্যাশিশুদের ওপর বিয়ের চাপ বেড়েছে

0

২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসের তুলনায় ২০২০ সালের প্রথম ১০ মাসে পল্লীসমাজের মাধ্যমে বাল্যবিয়ে সংখ্যা বেড়েছে ৬৮ শতাংশ।  

অপরদিকে, এ সময়ে পল্লীসমাজের সদস্যরা গতবারের তুলনায় ৭২ শতাংশ বেশি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন।নইলে বাল্যবিয়ের সংখ্যাটা আরও বেড়ে যেতো।

চলতি বছরের তৃতীয় সাময়িকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে) যখন করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সেই সময়ে প্রতিরোধ করা বাল্যবিয়ের সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১৯ শতাংশ বেড়েছে।  

অন্যদিকে চলতি বছরের তৃতীয় সাময়িকে প্রতিরোধ করা বাল্যবিয়ের সংখ্যা প্রথম তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) চেয়ে ৫৭১ শতাংশ বেড়েছে বলে দেখা যায়।

২০১৯ সালে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯৬ প্রতিরোধ করা গেলেও চলতি বছরের একই সময়ে প্রতিরোধ করা গেছে ৭৬টি বাল্যবিয়ে। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রতিরোধ করা গেছে ১০৯টি বাল্যবিয়ে। ২০২০ সালের একই সময়ে প্রতিরোধ করা গেছে ৭৫টি একই ভাবে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬৬টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা গেছে। তবে চলতি বছরের একই সময়ে তা গিয়ে ৪৯২টিতে ঠেকেছে।  

২০২০ সালে বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়ার এ হারের সঙ্গে বাড়ছে নারী নির্যাতনের হারও। তাই এ বালিকাবধূদের অধিকাংশই পরবর্তীকালে নির্যাতনের শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
  
বিশ্বজুড়ে ১৮ বছরের বেশি বিবাহিত মেয়েদের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয় ১৫ বছরের কম বয়সী বিবাহিত কন্যাশিশুরা।
বালিকাবধূদের অধিকাংশই বিশ্বাস করে স্বামী চাইলেই তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতে পারে।

ব্র্যাক বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, “লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই এবং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করাকে ব্র্যাক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। করোনা মহামারি এ লড়াইকে আরও কঠিন করে তু্লেছে। ওপরে উল্লেখিত ব্র্যাকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগের মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংগঠিত ও সচেতন প্রচেষ্টায় সফলভাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। করোনা পরিস্থিতিতে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা প্রতিরোধ এবং নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ও সমাজের সব স্তরের দৃঢ় অঙ্গীকার ও সম্মিলিত প্রচেষ্টা এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ।  

করোনা পরিস্থিতিতে দেশে নারী প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি উপলক্ষে ব্র্যাক এ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করছে।

মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক জানায়, তাদের ১৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয় প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর আন্তর্জাতিক নারীর প্রতি সহিংসতা নিরসন দিবস থেকে। আর তা চলতে থাকে ডিসেম্বরের ১০ তারিখ মানবাধিকার দিবস পর্যন্ত।
 
তথ্যানুসারে, ২০২০ সালের প্রথম ১০ মাসের মধ্যে ব্র্যাকের আইন সহায়তা ক্লিনিকগুলোতে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ক ২৫ হাজার ৬০৭টি অভিযোগ দাখিল করা হয়। দেশব্যাপী লকডাউনে যখন চলাচলের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং যাতায়াতের সুযোগ ছিল না, সেই সঙ্কটকালেও দেশ জুড়ে ব্র্যাকের মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির ৪১০টি ক্লিনিকে এসব সহিংসতার অভিযোগ এসেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে ১৫ হাজার ৪৭টি অভিযোগ বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। আর তিন হাজার ২৩৯ জন ভুক্তভোগীকে আইনি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং এক হাজার ৭২৪ জনের অভিযোগ গুরুতর থাকায় ব্র্যাকের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে সহায়তা করা হয়েছে।    

ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ২৪ শতাংশ। দেশের ৫৪টি জেলায় নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে ব্র্যাকের গ্রামকেন্দ্রিক নারী সংগঠন পল্লীসমাজের সদস্যরা কাজ করছেন। তারা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর সহিংসতা বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com