অর্শ বা পাইলস হলে কী করবেন

0

পাইলস অতি পরিচিত একটি রোগ। এটাকে বলা হয় সভ্যতার রোগ। অর্থাৎ এই রোগটি উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের শহুরে জীবন যাপনে অভ্যস্ত লোকদের মাঝেই বেশি দেখা যায়। তার প্রধান কারণ তাদের জীবন যাপন পদ্ধতি যেমন কম পানি, কম শাকসবজি, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া এবং সময়মতো মলত্যাগ না করা। উল্লিখিত জীবন যাপনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা যায় এবং মলত্যাগের সময় অতিরিক্ত প্রেসার দিতে হয়। ফলে মলদ্বারের চারিদিকে অবস্থিত রক্তনালী ও মাংসপিণ্ড ফুলে গিয়ে পাইলস সৃষ্টি করে।

গর্ভাবস্থায় এই রোগের প্রকোপ বাড়ে। পায়খানার সময় বিশেষ করে কষা পায়খানার সময় পাইলসের রক্তনালী ছিড়ে যায় এবং রক্তক্ষরণ হয়। পায়খানার সময় ব্যথামুক্ত, টাটকা রক্তক্ষরণই পাইলসের প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষণ। তবে ধীরে ধীরে চিকিৎসার অভাবে এই রোগ জটিল আকার ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
যেমন-
ক) পাইলস মলদ্বারের বাইরে বের হয়ে আসা, খ) বের হওয়ার পর ভেতরে না প্রবেশ করা, গ) ব্যথা ও ইনফেকশন দেখা দেয়া ইত্যদি।
পাইলস হলেই চিকিৎসার প্রয়োজন আছে কি?
৪০ বছর বয়সের উপরে ৬০ শতাংশ লোকের মলদ্বার পরীক্ষা করলেই পাইলস দেখা যাবে। সৌভাগ্যের বিষয়- সবারই চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কোনো উপস্বর্গ বা জটিলতা দেখা না দিলে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।

কখন এবং কি চিকিৎসা করাবেন?
উপসর্গ বা জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসা অতীব জরুরি।
প্রাথমিক পর্যায় অর্থাৎ শুধু শক্ত পায়খানার সময় ব্যথামুক্ত রক্তক্ষরণ হলে- পায়খানা নরম ও নিয়মিত রাখুন, প্রয়োজন হলে ইসুবগুলোর ভুষি বা লেকজেটিভ খান। প্রচুর পানি ও শাকসবজি খান, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। নিয়মিত মলত্যাগ করুন। জটিল আকার ধারণ করলে অর্থাৎ পাইলস বেরিয়ে এলে এবং উপরোক্ত চিকিৎসা যদি কাজ না করে তবে-

ইনজেকশন, ব্যান্ড লাইগেশন, অপারেশন করতে হয়।
জটিল পাইলসের ক্ষেত্রে ব্যান্ড লাইগেশন ও ইনজেকশন একটি কার্যকর সফল চিকিৎসাপদ্ধতি। এটা ব্যথামুক্ত এবং রোগী ভর্তির প্রয়োজন হয় না।
পাইলসের কখন ও কী অপারেশন করা হয়
পাইলস যখন মলদ্বারের বাইরে অবস্থান করে, অর্থাৎ মলত্যাগের পর পাইলস আপনা আপনি ভেতরে প্রবেশ করে না অথবা ভেতরে প্রবেশ করানোর পরও বের হয়ে আসে, তখন অপারেশনই হচ্ছে একমাত্র সঠিক চিকিৎসা।
দুই পদ্ধতিতে অপারেশন করা যায়- পুরনো পদ্ধতি ও নতুন পদ্ধতি।
পুরনো পদ্ধতিতে রোগীকে অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয় বলে এখন উন্নত বিশ্বে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করা হয় না।

নতুন পদ্ধতি-২ প্রকার- ক. লংগু ও ডায়াথারমি পদ্ধতি।
লংগু অত্যন্ত ব্যয়বহুল পদ্ধতি। ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ পড়ে এবং ডায়াথারমি স্বল্প খরচ পদ্ধতি। মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা খরচ পড়ে। উভয় পদ্ধতি উন্নত বিশ্বে বর্তমানে প্রচলিত। এই নতুন পদ্ধতিতে রোগীর এক দিনের বেশি হাসপাতালে থাকতে হয় না। উভয় পদ্ধতিই ব্যথামুক্ত ও অত্যন্ত কার্যকর।
পাইলস চিকিৎসার পর আবার দেখা দিতে পারে কি?
সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে এ রোগ আবার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম।

উপদেশ
এই রোগটির রোগীরা সবচেয়ে বেশি অপচিকিৎসা বা ভুল চিকিৎসার শিকার হন। কারণ, বেশির ভাগ রোগী হাতুড়ে চিকিৎসকের এসিড জাতীয় অত্যন্ত ক্ষতিকারক জিনিস দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। যার ফলে পরবর্তীতে বিভিন্ন প্রকার জটিলতা নিয়ে রোগীরা আমাদের দ্বারস্থ হন। যেমন- পায়খানার রাস্তায় ঘাঁ হওয়া, মলদ্বার চিকন হয়ে যাওয়ায় মলত্যাগে প্রচণ্ড ব্যথা হওয়া, মলদ্বারে ক্যান্সার হওয়া, মলদ্বারের ক্যান্সারকে পাইলস মনে করে ভুল চিকিৎসা করা ইত্যাদি।

অতএব পাইলস সন্দেহ হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
লেখক : জেনারেল ও কলোরেক্টাল সার্জন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল

তুমি এটাও পছন্দ করতে পারো

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.

WP2Social Auto Publish Powered By : XYZScripts.com